শ্রদ্ধাঞ্জলী (Tribute)

শুভক্ষণে জন্ম তোমার

ঘর করেছ আলো,

তোমায় পেয়ে ধন্য জগত

যেন উদ্ভাসিত হল।



জীবন্ত কিংবদন্তী তুমি

নেই কোন সংশয়,

চিরকাল হয়ে রইবে সারা

বিশ্বের বিস্ময়!



গানের সকল দিকেই তোমার

সফল বিচরণ,

তোমার‌ গায়কিই হয়েছে তাই

সঙ্গীতের ব্যকরণ!



বাঙ্গালী না হয়েও তুমি

বাংলায় গাইলে গান,

এতটুকু ভুল হয়নি কভু

একটুও হারায়নি তাল।



গানের মাঝে ঘটাও তুমি

সুর বৈচিত্র্যের সঙ্গম,

মিলন-বিরহ সব গানে তুমি

সমান পারঙ্গম।



এমন কন্ঠ শোনে নাই তো

কেউ কখনো আগে,

তোমার কন্ঠ তাইত আজ

সবচেয়ে মিষ্টি লাগে।



তোমার কন্ঠের জাদুতে তৈরি

সুরের ইন্দ্রজালে,

মোহাবিষ্ট হয়ে বসে থাকে

উপস্থিত সকলে।



গানকে তুমি করেছ মহান

বিশ্বের দরবারে,

তোমার তুল্য হবে নাতো কেউ

কখনো কোন কালে।



গানকেই করেছ তুমি

নিজের জীবনের ব্রত,

তোমার জীবনে দেখি আজ তাই

উত্থান পতন কত!



প্রত্যুষে তুমি করিয়া থাক

ঘন্টা চারেক রেওয়াজ,

মনোমুগ্ধকর পরম বিস্ময়কর

তোমার গলার আওয়াজ।



গানের স্বরলিপি লিখে নাও তুমি

নিজেরই হস্তাক্ষরে,

তোমার কথা লেখা রবে যে,

উজ্জ্বল স্বর্ণাক্ষরে!



সচ্চরিত্রের গুনাবলি তুমি

করেছো সর্বদা পোষণ,

তোমায় স্পর্শ করতে পারেনি

পাপ পঙ্কিলতার দূষণ।



গানের মাধ্যমে করে যাও তুমি

ইশ্বরের বন্দনা,

রেখেছ আজো অম্লান করে

সঙ্গীতের সাধনা।



তোমার চেয়ে বেশী সুন্দর নয়

কারো কন্ঠের সুর,

তোমার কন্ঠেই বাজিয়া ওঠে

স্বর্গীয় ধ্বনি সুমধুর।



সঙ্গীতে তুমি করেছ হায়

প্রাণের সঞ্চারন,

তোমার গান করেছে মোর

জীবনের সঞ্চালন!



জগতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে

তোমার প্রতিভার জ্যোতি,

কন্ঠে তোমার স্তন্ধ হয়

কত মানুষের গতি!



তোমার কন্ঠ মনে তোলে এক

সুতীব্র আলোড়ন,

তোমার গান অন্তরে জাগায়

অদ্ভুত শিহরণ।



ষাটের দশকে গাইতে পারনি

তিনটি বছর গান,

তাই বলে মর্যাদা তোমার

এতটুকু হয়নি ম্লান।



তোমার কন্ঠ বাজিছে আজ

সারা বিশ্ব জুড়ে,

তোমার প্রশংসা তাই আজ

লোকের মুখে ঘরে।



একসাথে তুমিই গাইতে পার

তিন-তিনবার অষ্টক,

হাসিতে তোমার ঝরিয়া পড়ে

শত সহস্র পুষ্পক!



সঙ্গীতকে সমুন্নত রাখতেই

হয়েছে তোমার জন্ম,

একাধারে তাই মাতিয়ে রেখেছ

তিন তিনটে প্রজন্ম!



এত বড় শিল্পী তুমি

মনটা নিরহঙ্কার,

অতিক্রম করবে তোমায়

এমন সাধ্য কার?



একদা তোমায় ছাড়েনি কেউ

কঠোর নিন্দা করতে,

নিজগুনে উঠে এসেছ সব

সমালোচনার উর্ধ্বে।



অতীতে তোমার ছিল না কভু

কারো প্রতি অভিযোগ,

বর্তমানেও নেই যে তোমার

কোন চাহিদার অনু্যোগ।



একক সঙ্গীতে গেয়ে যাও

কত সুর এর ছন্দে-

দ্বৈত সঙ্গীত গেয়েছ কত

গায়ক গায়ীকার সঙ্গে!



নিজেকে তুমি জড়াওনি কভু

মায়ার তুচ্ছ সংসারে,

তোমায় টলাতে পারেনি তবু

কোন ধর্ম সংস্কারে।



গানকে আপন করেছিলে তাই

হওনি কারো ঘরনী,

সত্যিই তুমি ত্যাগী এক নারী

অতুলনীয়া রমনী।



কন্ঠশিল্পীর নামের তালিকায়

নামটি তোমার খুঁজলে,

সন্দেহ নেই নামটি তোমার

এক নাম্বারেই মেলে।



সুরের সাধনায় নিবেদিত প্রাণ

সুর সাধনাই ব্রত,

কল্পনায় বসে ভাবি আমি

যদি হইতাম তোমার মত!



তোমার গানের সুর যোগায়

শক্তি ও প্রেরণা,

গানের মাঝেই থাকবে বেঁচে

কভু বিস্মৃত হবে না।



ম্নের আবেগে ছিল যত কিছু

চাওয়া আর দাবিদাওয়া-

তোমার গানের কথার মাঝে

যায়যে সবই পাওয়া।



যতকাল দিগন্তে ছড়াবে জ্যোতি

তেজস্বী দিবাকর,

ততকাল তুমি হয়ে রইবে

সবার হৃদয়ে অমর।



ধন্য সকন অভিনেত্রীগণ

তোমারই গান গেয়ে,

ধন্য হল ভারতবর্ষ

তোমায় আপন করে পেয়ে।



সঙ্গীতের সকল শাখায়

পড়েছে তোমার হাত,

সব ক্ষেত্রেই অনন্যা তুমি

করেছ বাজিমাত।



ইশ্বরের কৃপায় হয়েছ আজ

মধ্য আকাশের মণি,

সকল প্রতিভা তোমার কাছে

স্বীকার করেছে নতি।



‘এ মেরে ওয়াতান কে লোগো...’

গাইলে তুমি যখনই,

জহরলাল নেহেরু রুখতে পারেনি

তপ্ত চোখের পানি।



যতন করিয়া গানের উন্নতি

সাধিয়াছ চিরদিন,

সঙ্গীতবোদ্ধারা পারবেনা কভু

শুধিতে তোমার ঋণ।



‘ফিল্ম-ফেয়ার এওয়ার্ড’ তুমি

করেছ প্রত্যাখ্যান,

এখুন তো এমন দৃষ্টান্ত

কোথায় খুঁজিয়া পান?



লন্ডনে তুমি গেয়ে এলে

রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে,

এ জন্যেই লোকে তোমায়

সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী বলে।



ছয়টি ডক্টরেট ডিগ্রি তুমি

করেছ অর্জন,

নিজ রাষ্ট্রেও পেয়েছ উপাধি

‘মহারাষ্ট্র ভূষণ’।



সাতাশটি ভাষায় গাইলে তুমি

অপূর্ব সব গান,

একটির সাথে মিলবেনা

অন্য একটির টান।



সহশিল্পীরা খুশি হয় তোমার

একটু আশির্বাদ পেলে,

তোমার মত মানুষের স্নেহ

কজনার ভাগ্যে মেলে?



গানকে সন্মান করে তুমি

রাখ পদদ্বয় খোলা,

সন্মান তবু ঠিকি খুঁজে নেয়

তোমার নগ্ন-চরণ জোড়া।



ভারত সরকার দিয়েছে তোমায়

উপাধি ‘ভারতরত্ন’,

যেমনভাবে করেছ তুমি

সঙ্গীতশাস্ত্রের যত্ন।



একদিন যারা ফিরায়ে দিয়েছে

গান প্রত্যাখ্যান করে,

তারাই তোমায় ফিরায়ে এনেছে

শত অনুনয় করে।



শৈশব হতে জীবন সংগ্রামে,

করেছ অনেক কষ্ট,

তোমার প্রতিভার বহুমুখীতায়

জগদ্বাসী তুষ্ট।



শুধু শিল্পের বিচারেই নও

মানুষ হিসেবে মহান,

একে একে দিয়েছ পাড়ি

জীবনতটের সোপান।



জীবনের তরে একটিবার তোমায়

দেখিতে পাইতাম যদি!

ধন্য হইতাম আমি, আর

সার্থক হইত আঁখি।



কালের আবর্তে বয়স তোমার

গিয়াছে অনেক বেড়ে,

তোমার কন্ঠের মাধুর্য তবু

যায়নি তোমায় ছেড়ে।



বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে

হয়েছ দেশ বরেণ্য,

কন্ঠে যেন ধরিয়া রাখিছো

সতের বছরের তারুণ্য!



পঞ্চাশ হাজার গানের সংখ্যা

ছাড়িয়ে গিয়াছে কবে,

তোমার সাথে পাল্লা দিয়ে

ক্লান্ত হয়েছে সবে।



পৃথিবীতে সৃষ্ট হয়নি এমন

পাষাণ হৃদয় শক্ত,

তোমার গান শুনবে কিন্তু

হবেনা তোমার ভক্ত!



সমাজকল্যাণে অগ্রণী হয়ে

রেখেছ নিদর্শন,

তোমায় বিশেষিত করতে পারে

আছে এমন বিশেষণ?



সঙ্গীতের তরে নিজের জীবন

দিয়েছ জলাঞ্জলী,

তোমার চরণে ঝরিয়া পড়ুক,

সহস্র পুষ্পাঞ্জলী।



সকল বিষয়ে অনন্যা যে

লতা মঙ্গেশকর তুমি,

তোমার তরে এজন্য আমি

জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী।

Author's Notes/Comments: 

22nd August 2002

View shawon1982's Full Portfolio