গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার লিখেছিলেন “আনন্দ আশ্রম” ছবির গানগুলো। আমি বাংলা ভার্সন এর কথা বলছি। উত্তম কুমারের শেষ জীবনের বিখ্যাত এক সিনেমা। প্রতিটি গানই অসাধারণ। এর মধ্যে কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে এর গাওয়া দ্বৈত সঙ্গীত “আমার স্বপ্ন তুমি” এর একটি লাইন আমাকে বারবার নাড়া দিয়ে যায়। গানের সেই অংশে কিশোর কুমার তার গম্ভীর সুরেলা গলায় গেয়ে ওঠেন,
“হাতের আড়াল দিয়ে বাঁচাও
ঝড়ের মুখে বাতি…”
এই লাইনদুটো আমার সবসময় অনেক প্রিয়। অনেক বেশী অর্থবোধক বলে মনে হয়। খুবই সুস্পষ্ট যে এখানে ঝড়ের মুখে বাতি হাতের আড়াল দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করা মানে হল শত প্রতিকুলতার মধ্যেও সম্পর্কের সুতোগুলোকে ধরে রাখা। এটা যে কত কঠিক কাজ সেটা যারা করে তারাই জানেন।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটা কাঁচের মতই ঠুনকো আমাদের পারষ্পারিক সম্পর্কগুলো। অতি অল্প আঘাতে যেভাবে কাঁচের বাসন ভেঙ্গে যায় তেমনি আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা, সম্পর্কগুলোও এভাবেই ভেঙ্গে যায়। কিছু সম্পর্ক দ্রুত ভাঙ্গে আর কিছু আসতে আসতে ভাঙ্গে। কিন্তু ভেঙ্গেই যায়। সম্পর্কের সাথে সাথে ভেঙ্গে যায় মন। এরপর সেটা যতই জোড়া দেয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন আর জোড়া লাগে না আগের মত। আমরা শুধু সেটা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। কিন্তু ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক কখনই আর আগের মত হয় না। মেনে নেয়ার অভিনয় করে যেতে হয়। আর নিজেকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে যেতে হয় যে সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু আগের মত আর কিছুই হয় না। দূরত্বের একটা অদৃশ্য দেয়াল কাজ করতে থাকে। সেই দূরত্ব আর কমে না। আর সবচেয়ে বেশী আঘাতের শিকার হয় সেই মানুষগুলো যারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও সম্পর্কগুলোর ভাঙ্গন রোধ করতে চেয়েছিল। সেই মানুষগুলো নিঃস্বার্থভাবে আত্মত্যাগ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী হয়। হাতের আড়াল দিয়ে প্রদীপের আলোটুকু বাঁচাতে গিয়ে প্রদীপের সেই আগুনে নিজের হাতটাই পুড়িয়ে ফেলে। কেউ দেখে না সেগুলা।