প্রতারক আর বাটপারের সংখ্যা মনে হয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন আর কাউকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বিশ্বাস করে ধোঁকাবাজির শিকার হয়েছি বারংবার। আর ভালও লাগে না। ঘরে বাইরে সবখানেই কেমন যেন প্রতারণার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কাকে বিশ্বাস করবো? ঘরের আপনজন নাকি বাইরের মানুষ? নিজের গন্ডির চেনা জানা আপনজন বলে যাদের মানি, তারাও যদি প্রতারণা করে তখন বিশ্বাসের প্রশস্ততা সংকীর্ণ হয়ে যায়। নিজের সেসব খারাপ লাগা মাঝে মাঝে কাউকে বলেও বুঝানো যায় না। মানুষজন দিন দিন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে টেরও পাচ্ছে না। ছোট থেকে বড়, সবখানেই এক অসম অসুস্থ প্রতিযোগিতা। মেরে ধরে হলেও টাকা বানাতে হবে। মেরে ধরে হলেও সম্পদের মালিক হতে হতে। মুখে আর লেবাসে ধর্মের ধ্বজা উড়িয়ে দিয়ে হলেও ভেতরে ভেতরে প্রতারণা করে হলেও বড় হতে হবে। অনলাইন আর অফলাইন সবখানেই এখন ধোকাবাজ আর বাটপারের ছড়াছড়ি।
সাম্প্রতিক একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি। আমার বাসার একটা দরকার চৌকাঠ বদলানোর দরকার হয়ে পড়ে। পুরানো বাসা। পোকায় খেয়ে ফেলেছিল। একটা দরজার চৌকাঠের দাম একদম কমও না। ভাল মানের কাঠ হলে প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ব্যাপার। আমার বাসার বুকশেলফ যে বানিয়ে দিয়েছিল, তার নাম ছিল মনির। কাঠমিস্ত্রি। আমার সবগুলা বুকশেলফ তার বানিয়ে দেয়া। আমাদের অনেক কাজ সে আগে করে দিয়েছে এবং যথাযত টাকা সে পেয়ে গিয়েছে। সেই বিশ্বাসের সূত্র ধরে আমার দরকার চৌকাঠ বদলানোর জন্য সেই মনিরকেই ডাকা হয়েছিল। দরজার চৌকাঠ এনে দেবে এবং বুকশেলফ গুলো ঠিক করে নতুন বাসায় সেট করে দেবে এই চুক্তিতে তাকে ডাকা হয়েছিল। সে আমার দরজার চৌকাঠের জন্য ৬ হাজার টাকা নিয়ে আর যোগাযোগ করেনি। এরপর তাকে আর ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। একবার আমার কল ধরেছিল। পরে আমার গলার আওয়াজ টের পেয়ে ফোন রেখে দেয়। আগে যে প্রায় লাখ খানেক টাকার কাজ করলো, এবার সে মাত্র ৬ হাজার টাকার লোভ সামলাতে পারলো না? এই ছয় হাজার টাকায় আমিও যেমন পথে বসে যাইনি, তেমনি এই মনির চোরাও কি বিল গেটস হয়ে যাবে? ধোঁকাবাজি আর প্রতারণা করে কি বড় হওয়া যায়? প্রতারণা করে কি বড় হওয়া যায়? সামান্য কয়েক হাজার টাকার জন্য এভাবে মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দিতেও মানুষ পিছপা হয় না। এমন প্রতারক কিন্তু সমাজ স্বীকৃত আপনজনও করে। আমাদের সমাজের অনেক বাবা মাও পাছে, অর্থ থেকে শুরু করে, অনেক বিষয়ে সন্তানের সাথে প্রতারণা করতেও দ্বিধা করে না। ধর্মের একটা অদৃশ্য বর্ম এইসজব মানুষজনকে বাঁচিয়ে দেয়। ধর্মের ভয়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হয়েও মুখ খোলে না।