আমার মন কেমন করে
কে জানে কাহার তরে
মন কেমন করে...
সকাল থেকেই রবি ঠাকুরের এই গানটা কেন জানি বারবার মনে পড়ছে। তবে পুরানো কোন প্রেমের কথা মনে করে নয়। আমার জীবনে প্রেম বলে কিছু নেই। আমার সবকিছুই বর্তমান। জীবনে প্রেম করা কাকে বলে জানি না। বরাবরই কাঠখোট্টা আমি। আগেও ছিলাম। এখনও সেটাই আছি। সকাল থেকেই কেন জানি বার বার সেই পুরানো দিনের কথাই মনে পড়ছে। মনে পড়ছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। কারণে যতই হতাশ হই না কেন, পুরানো দিনের কথা মনে করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই যে। যতই চেষ্টা করি না কেন, পুরানো দিনে তো ফেরত যাওয়া যাবে না। আজকে আমার এক বন্ধু এসেছিল দেখা করতে সুদূর প্রবাস থেকে। আমার ভার্সিটির বন্ধু। ওকে দেখে সেই পুরানো দিনের কথা স্মৃতি রোমন্থন করলাম। তখনই আমার মন বারবার খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। কারণ আমি যতটুকু বাস্তব তার চেয়ে বেশী মনে হয় অবাস্তব জিনিস নিয়ে চিন্তা করি। বাস্তবার মুখোশে আমি আমার কল্পনাকে হারায়ে যেতে দেই না। বন্ধু ছিল ঘণ্টা খানেক। এর মধ্যে আমাদের বেশীরভাগ সময় কাটলো পুরানো দিনের কথা, আর বন্ধুদের কথা মনে করে করে। এরপর যখন মনে হচ্ছিলো, আমি তো সেই সময়ে নেই, তখন বেশী করে খারাপ লাগা কাজ করছিলো। আমাদের সেই সময়ের সাথে এখনকার সময়ের অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে। শুধু সময় কেন, ধারণা সহ পালটে গেছে সবকিছু। আমার অনেক আফসোস লাগে। অনেক কিছু নিয়েই আমার আফসোস লাগে।
বর্তমানের ছোট ভাই বোন গুলাকে যখন দেখি, বা আমার ছাত্রগুলোকে যখন দেখি, তখন আমার একরকম হতাশাই কাজ করে। এরা বর্তমানে কেমন, আর আমাদের সেই সময়ে আমরা কেমন ছিলাম! এখন ছোটভাইরা দেখি প্রতি সেমিস্টার ব্রেকে নানা ট্যুরের আয়োজন করে। এরপর দল বেধে বন্ধুরা নানা জায়গায় হৈ চৈ করে দুই চারদিন ঘুরে আসে। আমি ফেসবুকে বসে ওদের ছবি দেখি। এখনকার ছেলে মেয়েদের ধ্যান ধারণা আর আমাদের সময়কার আমাদের ধ্যান ধারণার মধ্যে কর পার্থক্য হয়ে গেছে। আমাদের ভার্সিটি পরার দিনগুলোতে বাসার বারিতে থেকে বের হতে গেলেই কত রকমের জবাবদিহিতা করতে হত। এত স্বাধীনতাই বা ছিল কোথায়? বাসার বাইরে যেতে হলে বাবা মায়ের হাজার খানেক প্রশ্নের জবাব। এরপর তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে বের হতে পারতাম। আর তা না হলে মনে হাজার ইচ্ছা থাকলেও বের হওয়া চলবে না। নিজের স্বাধীনতা যে কি জিনিস, সেটা এখন নিজেকে প্রশ্ন করে হাসি পায়। তখনকার দিনে আমাদের স্বাধীনতা বলতে আসলে কি জিনিস ছিল? সারাক্ষণ একটা অদৃশ্য বেড়ী পরানো থাকতো পায়ে। যেখানে যেতাম ঐ বেড়ী পায়ে দিয়ে যেতাম। ভার্সিটির লাইফে বন্ধুদের নিয়ে ট্যুর দেয়া আমার কাছে সোনার হরিণের চেয়েও দুর্লভ ছিল। এমন কোন স্মৃতি নেই আমাদের। শুধু একটা পিকনিক ছিল। এর বেশী কিছু না।
আর এখন? চাকরী, সংসার সব রকমের ব্যস্ততা। এখন অর্থনৈতিক স্বকীয়তা অর্জন করলেও পায়ের সেই বেড়ী কিন্তু পরানোই আছে। এখন আছে নানা রকম দায়িত্বের বেড়ী। এখনবার এসব বেড়ী পায়ে থেকে ছুটিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় কই? আর আমার সময় হলে কি আমার বন্ধুদের সময় হবে? সবার সময়ের কত দাম। আমার অবসর থাকে তো আমার থাকে না, আর আমার অবসর থাকে তো ওদের থাকে না। সবারই যার যার পরিবার বাচ্চাকাচ্চা আছে। এসব ব্যস্ততা সামলে একটা ট্যুরের প্রোগ্রাম করা মনে হয় সেই সোনার হরিণই রয়ে গেছে। সোনার হরিণ সোনার হরিণের যায়গাতেই আছে। সেই একই বেড়ী পায়ে জড়িয়ে আমিও আমিই রয়ে গেছি। শুধু সময় পালটে গেছে। প্রজন্ম পালটে গেছে। পালটে গেছে প্রজন্মের মানসিকতা। এই প্রজন্মের ছেলে মেয়ে যা খুব সহজে চিন্তা করে ফেলতে পারে, আমাদের সময় আগে এবং পরে, আমরা সেটা চিন্তা করতে পারি না। পারি শুধু খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিজের আফসোস গুলো তাজা করতে? লাভ কি? ফিরে কি পাওয়া যাবে? আর কি পারবো সেই উদ্দাম জীবনে দামাল হাওয়ায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে! ভাসবো কিভাবে? আমি যে সাঁতার জানি না! না পানিতে না সময়ে।