এখন খুব একটা লেখা হয় না। তবুও আজ একটু লিখবো। গতকালের একটা ঘটনা স্মরণীয় করতেই এই লেখা।
গতকাল বিকালে অফিস থেকে ফিরলাম জ্বর আর তুমুল মাত্রায় সর্দি নিয়ে। একদম যা তা অবস্থা। কিছুই ভাল লাগছে না। পোষাক বদলেই একটু শুয়ে পড়লাম। আমার আড়াই বছরের ছেলে অনিন্দ্য এখন সারাক্ষণ কথা বলে। আমাকে পেলে আমার সাথেই বেশী কথা বলতে পছন্দ করে। আমার শুয়ে থাকা ওর পছন্দ হলো না।
আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, আব্বু তুমি শুয়ে আছো কেন?
আমি বললাম, বাবা আমার জ্বর হইসে।
ও বললো, তোমার জ্বর হইসে? বলেই ওর কচি হাতটা আমার কপালের উপরে রেখে বললো, জ্বর হইসে তোমার। বাবা তুমি শুয়ে থাকো।
আমার বেশ ভারী একটা কাঁসার গ্লাস আছে। অনিন্দ্য সেটায় খানিকটা পানি নিলো। এরপর আমাকে দিয়ে বললো, বাবা পানি খাও।
আমি বললাম একটু পরে খাই আব্বু?
ও বললো, না এখনই খেতে হবে। খাও! আমার এই ক্ষুদে পিতৃদেব তুল্য মহাশয়ের হুকুম পালন করতেই আমাকে উঠে বসে সেই কাঁসার গ্লাস থেকে পানি খেতে হলো।
আমার জ্বর হলে কেউ প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু দিলে আমার রীতিমত ঘৃণা লাগে। প্যারাসিটামল নামক ওষুধটা আমি পারতপক্ষে খাই না। জ্বর সহ্য করতে হলে করি, তবুও প্যারাসিটামল খাই না। নাঈমা জানে। বাধ্য হয়ে ওর বোনের আমেরিকা থেকে আনা টাইলিনল নামক একটা ট্যাবলেট আমার হাতে দিলো। জানে প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু দিলে আমি নাও খেতে পারি। নাঈমার দেয়া টাইলিনল অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেয়ে নিলাম। আমার জ্বরের কিছুই হলো না। কোন লাভের লাভ কিছুই না। তবুও খেলাম! মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ওষুধ হলে কথা।
২০০৬ সালে আন্ডারগ্র্যাড ৪র্থ বর্ষে পড়তাম। একবার আমার অনেক জ্বর হলো। আমার মা মাঝে মাঝে দেখছিলেন। জলপট্টিও দেখগা লাগছিল। আমার বাবা যখন ঘরে এলেন, তখন আমার মা উঠে গিয়ে আমার বাবাকে বলেছিলেন, শাওনের অনেক জ্বর। উনি আসলে কি করবেন সেটা জানতে চাচ্ছিলেন। এটা শুনে আমার পিতা বলেছিলেন, “ওকে বল প্যারাসিটামল খেয়ে নিতে”। ব্যাস আর কিছু না। না একবার আমাকে দেখতে এলেন, না আমার মাথায় একবার হাত রাখলেন। কিছুই না।
আমার মা আমার হাতে প্যারাসিটামল দিয়েছিলেন। উনি চলে যেতেই আমি সেটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেই। এরপর থেকেই প্যারাসিটামল শব্দটা আমার কাছে অবজ্ঞা আর অবহেলার একটা প্রতীক। প্যারাসিটামল খেতে হবে শুনলেই সেই ঘটনা মনে পড়ে যে, পিতা হয়েও সন্তানের কপালে একটু হাত রাখা গেল না।
স্রষ্টা সব দেখেন, জানেন। গতকাল অনিন্দ্যের ছোট হাতটা আমার কপালে রাখার মাধ্যমে, প্যারাসিটামল এর প্রতি আমার ঘৃণা কিছুটা প্রশমন করতে চাইলেন কি না কে জানে? স্রষ্টা অন্তর্যামী যা জানেন, সেটা বোঝা তো আমাদের সাধ্যেরও অতীত। ভাল থাকুক সব বাবারা।