১ ডিসেম্বর ২০২১

আজকের একটা ঘটনা দেখে মনে কিছুটা দাগ কেটে গেছে। মন থেকে ভুলতে পারছি না ঘটনাটা। সবকিছুর উর্ধে আমি একজন বাবা তো! সন্তানকে তার প্রিয় কোন জিনিস থেকে সরিয়ে আনার কষ্ট আর সেটা সন্তানকে দিতে না পারার কষ্ট কতখানিক মনে লাগে সেটা আজকে অনিভব করলাম। মন থেকে সরাতে গিয়েও পারছি না ঘটনাটা।

 

আমাদের বাসার নীচের গ্যারেজে বাচ্চাদের একটা ইলেকট্রনিক গাড়ী আছে। আমাদের বিল্ডিঙ এর ৮ তলার বাসিন্দা কিনেছে বলেই জানি। গাড়িটা উনাদের বাসাতেই থাকতো। উনার বাচ্চা চালাতো বলে দেখেছি, জানি। সম্প্রতি দেখছি গাড়ীটা আমাদের গ্যারেজে নামিয়ে রাখা হয়েছে। নষ্ট হয়েছে কিনা বা কি সমাচার আমি জানি না। আমার ছেলে অনিন্দ্য মাঝে মাঝেই নীচে নামতে চায়। কখন কোন ফাকে কার সাথে নীচে নেমে গাড়িটা দেখেছে আমি জানি না। একদিন নাঈমার উপস্থিতিতে আমরা বাইরে যাবো। অনিন্দ্যর নানুর বাসায়। লিফট থেকে বের হয়েই অনিন্দ্য গেটের কাছে না গিয়ে এক ছুটে চলে গেল গাড়ীটার কাছে। গিয়েই গাড়ীটার ভেতরে উঠে পড়ে স্টিয়ারিং ঘুরাতে শুরু করে আর বলতে থাকে, গাড়ী চালাই! ওর মা ওকে অনেক অনুনয় বিনয় করেও নামাতে পারে না। শেষে একটু জোর খাটাতে হয়। অনিন্দ্যর শরীর কোলে করে তুলে ধরা হলেও ওর কচি হাত দিয়ে স্টিয়ারিং তখনও ধরা ছিল। ঐটুকু বাচ্চাকে কিভাবে বুঝাই, নষ্ট জিনিস হলেও তো অন্যের অনুমতি ছাড়া তার জিনিস ধরা যায় না।

 

আজকে ঘটনাটার পুনরাবৃত্ত হলো। শুভর সাথে বাইরে গিয়েছিলাম। নাঈমা কিছু কেনাকাটার জন্য আগেই বাজারে নেমে গিয়েছিল। কথা হলো যে আমি অনিন্দ্যকে নিয়ে বাসায় চলে আসবো। গলির মুখে শুভর গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। এরপর ছেলেকে বললাম, বাবা চল আমরা হেঁটে হেঁটে যাই। গলির মুখ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে আমাদের বাসা। অনিন্দ্য আমার হাত ধরে আমার পাশে হাঁটতে লাগলো মৃদু গতিতে। কিন্তু যেই আমাদের মেইন গেটের কাছে আসলাম, তখন অনিন্দ্য আমার হাত ছেড়ে দিলো আর গ্যারেজের ঢাল বেয়ে নিজে নিজেই দৌড়ে উঠলে লাগলো। আমি ভেবেছিলাম ও লিফটের দিকে যাবে। আমি বললাম, বাবা আস্তে আস্তে যাও, লিফটের দিকে যাও। কে শোনে কার কথা। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম অনিন্দ্য লিফটের উলটা দিকে গাড়িটা যেদিকে আছে সেদিকে দৌড়ে গেল এবং আমি পৌঁছানোর আগেই সেই ছোট্ট গাড়িটায় উঠে স্টিয়ারিং নাড়ানো শুরু করলো। দৃশ্যটা দেখে কেন জানি চোখে পানি চলে এসেছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামাল দিয়েছি। ছেলে আমার ভোলে নি যে ওখানে গাড়িটা রাখা আছে। এজন্য আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গাড়িটার দিকে ছুটে গেছিলো।

 

আমিও অনেক অনুনয় বিনয় করে ছেলেকে উঠানোর চেষ্টা করলাম। ছেলে উঠবে না। আমাকে বললো, আব্বু গাড়ী চালাই! আমি ওকে কোলে তুলতে গেলাম। কচি হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরা। আর প্রতিবাদ স্বরূপ হাত পা ছুড়তে লাগলো। আমি ওর দুই গাল চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলাম। বললাম, বাবা আমরা আবার গাড়ীতে চড়বো। তোমাকে নিয়ে যাবো। তুমি বেড়াতে যাবা না? ছেলে তখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, বেড়াতে যাবো? আমি বললাম হ্যাঁ বাবা আমরা বেড়াতে যাবো তো। ছেলে তখন আস্বস্ত হলো। আমার সাথে লিফটে করে বাসায় উঠে চলে আসলো। হয়ত ভুলে গেল গাড়ীটার কথা। কিনতি বাচ্চারা কি সহজে ভোলে? কালই যখন আবার বাসার নীচে নামবে তখনই হয়ত আবার দৌড় দিবে গাড়ীটার দিকে! তাই মনে মনে ভেবে রাখলাম, কাল যখন ওকে নিয়ে নামবো তখন গেট থেকে বের হবার আগ পর্যন্ত ওকে কোল থেকে নামাবো না। আর চেষ্টা করবো যেন গাড়ীতা ওর চোখে না পড়ে। অনিন্দ্য একদিন বড় হবে আল্লাহ চাইলে। এই ঘটনার কিছুই ওর মনে থাকার প্রশ্নই আসে না। অনিন্দ্য আমার এই লেখা কোনদিন পড়বে কি না জানি না, তবে যদি পড়ে তবে জানতে পারবে, ওমন একটা গাড়ি কিনে দেবার মত সামর্থ্য এখনও সেভাবে অর্জন করে উঠতে পারিনি দেখে এই বাবার মন ব্যথিত হয়েছি। সামর্থ্য হলে হয়ত অনিন্দ্যকেও ওমন একটা ইলেকট্রনিক গাড়ী কিনে দিতাম। কিন্তু এখন আপাতত আমাদের সমস্ত চিন্তা চেতনা জুড়ে আছে একটা আশ্রয় বানানোর চিন্তা। নিজেদের মাথা গোজার মত একটু ঠাই যেটা দেখিয়ে অন্তত আমার বাচ্চারা বলতে পারে, এটা আমাদের বাসা।

 

 

দোয়া করি আমার অনিন্দ্য বড় হোক। একদিন ঐ হাত দিয়েই সত্যিকারের নিজের গাড়ীর স্টিয়ারিং ধরুক আর আমি পাশে বসে বসে ছেলের ড্রাইভিং দেখবো। নিজে তো গাড়ী চালানো শিখলাম না কোনও কালে। শেখার ইচ্ছাও জাগে না। ছেলে চালাবে আমি পাশে বসে থাকবো যদি ততদিন বেঁচে থাকি। তখন না হয় অনিন্দ্যকে আমিই এই গল্পটা একদিন শোনাবো। আর বলবো, বাবা মনে পড়ে তোমার সেই দিনের কথা? 

View shawon1982's Full Portfolio
saiom's picture

a humble request

 

I humbly petition you to consider with the shorter poems including

an English translation for us who are not bilingual. 



 

 

shawon1982's picture

I am grateful for your kind

I am grateful for your kind words and willingness to read my writings. basically, they are prose, written works with some of my life experience and feelings along with philosophies. they are written in my native language bangla.  


Dr. Zayed Bin Zakir Shawon