অনিন্দ্যর জন্মের কয়েক মাস পরের ঘটনা। তখন সবে সে হাত মুঠি করে এটা ওটা ধরা শিখেছে। জুওয়াইরিয়া তাঁর ভাইকে খুব ভালবাসে কিন্তু শর্ত একটাই, বোনের চুল ধরতে পারবে না ভাই! ওদিকে বিধি বাম! বোন ভাইটার জেগে থাকা অবস্থায় আদর দিতে গেলেই, অনিন্দ্য খপ করে বোনের চুল ধরে বসে আর গুটুগুটু করে হাসতে থাকে! জুওয়াইরিয়ার চিৎকারে আমাদের পড়িমড়ি করে গিয়ে ভাইর মুঠি থেকে চুল ছাড়িয়ে দিতে হয়। একদিন জুওয়াইরিয়া এমন পরিস্থিতিতে বলে বসলো, আব্বু ওকে “বিক্রয় ডট কম” এ বিক্রি করে দাও? আমরা হেসে দিলাম। বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, বিক্রি করে দিবো। তা কত টাকায় বিক্রি করবো অনিন্দ্যকে? জুওয়ারিয়া খানিক চিন্তা করে বলতো, দশ টাকায় বিক্রি করে দাও। আমরা বলতাম আচ্ছা ঠিক আছে। ওকে দশ টাকায় বিক্রি করে দিবো। তা তোমার খারাপ লাগবে না? ও তখন বলতো, না লাগবে না। বুঝতাম, ভাইর প্রতি বোনের রাগের মাত্রা এখনও কমে নি! জুওয়াইরিয়া কথাটা মনে রেখেছে কিনা সেটা যাচাই করতে মাঝে মাঝে বলতাম, অনিন্দ্য কে বেঁচে দেই দশ টাকায়? ও বলতো দাও বেঁচে!
কয়দিন আগে করোনার সেকেন্ড ডোজ টিকা নিতে গেলাম ক্যান্টনমেন্ট এ। ওখানের এয়ার বেজ এর হেলথ সেন্টারে যেখানে টিকা নিতে গেলাম, সেদিন দেখি বানরের ছড়াছড়ি। ঢাকার মধ্যে, মুক্ত পরিবেশে এতগুলো বানর একসাথে কোনদিন দেখবো সেটা চিন্তাও করিনি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি খালি বানর আর বানর! ক্যান্টনমেন্টে ওরা মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুগ্ধ চোখে ওদের দেখতে দেখতে বেরিয়ে আসলাম বাম বাহুতে টিকা নিয়ে।
বাসায় এসে দেখি ক্যান্টনমেন্ট এর একটা বানর কিভাবে যেন আমার বাসায় চলে এসেছে! ঘাবড়াবেন না। একটু রসিকতা করে লিখলাম। আসলে কোন বানর আসেনি তবে তবে বানরদের মহান নেতার মর্যাদা যে সহজেই নিয়ে নিতে পারে, সেই অনিন্দ্য কে দেখলাম জানালার গ্রিল বেয়ে বেয়ে একদম উপরে উঠে ছাদের কাছে গিয়ে সে ইলেকট্রিক বালব খুলে ফেলার চেষ্টা করছে। ভয়ে আত্মা শুকায়ে গেল! ভেতরে যদি কোন রকমে হাত চলে যায় তাহলে কি ভয়াবহ মাত্রার ইলেকট্রিক শক খেতে পারে আর সেটার পরে কি হতে পারে সেটা ভাবতেও চাইলাম না। আমাদের চিৎকার শুনে, অনিন্দ্য সেই মগডাল, আরে না না, সেই গ্রিলের উপর থেকেই মাথা ঘুরায়ে, সামনের দুই তিনটা দাঁত বের করে বিশেষ কায়দায় হু হু করে হাসতে লাগলো। অনেক অনুনয় বিনয় করে মহাশয় কে নামিয়ে আনলাম। সুযোগ পেলেই সেই গ্রিল ধরে উপরে উঠে যাচ্ছে।
জুওয়াইরিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট এর বানরের গল্প করলাম। ওকে বললাম, আমাদের বাসাতেও তো একটা বানর আছে। অনিন্দ্যকে নিয়ে যদি ওদের মধ্যে ছেড়ে দেই, ওরা বুঝতেই পারবে না। সাথে সাথে ওকে কোলে নিয়ে গাছের উপরে উঠে যাবে, আর দেখবা অনিন্দ্য ওদের সাথে সুন্দর মিশে গেছে। জুওয়াইরিয়া মন দিয়ে শুনলো আমাদের কথা। এরপর বললাম, তা দিয়ে দেই ওকে বানরদের কাছে কি বল বাবা? আর না হলে ওকে চিড়িয়াখানা গিয়ে বানরের খাঁচায় ছেড়ে দেই? ওদের সাথে থাকুক অনিন্দ্য? জুওয়াইরিয়া সাথে সাথে বললো, না ওকে আমরা দিবো না। ওকে চিড়িয়াখানাতেও দিবো না। আমি বললাম, কেন? ওকে তো তোমার চুল টানে, তোমার আঙ্গুলে সেদিন কি কামড়টাই না দিলো। শুনে ও বললো, দিক আব্বু, ও তো এখনও ছোট। ও এমন করলে কিছু হবে না। তুমি ওকে চিড়িয়াখানায় দিতে পারবে না। আমি বললাম, তাহলে কি ওকে দশ টাকায় বিক্রয় ডট কমে বেঁচে দিবো? জুওয়াইরিয়া বললো, না ওকে বেঁচতেও পারবে না। আমি বললাম, যদি আমাদের অনেক টাকা দেয়? এক লাখ টাকা দেয়, তাহলে বেঁচে দেবো? জুওয়াওইরিয়া সাথে সাথে বললো, ঘর ভর্তি করে টাকা দিলেও ওকে বেঁচবো না। আমি বললাম, তুমি ভালবাসো তোমার ভাইবে আব্বু? ও বললো, হুম, আমি অনিন্দ্যকে অনেক ভালবাসি। ওকে বেঁচতেও দিবো না, চিড়িয়াখানাতেও দিবো না।