অরিন্দম এর আত্মহনন

মনে পড়ে ছবির ছেলেটার কথা? অরিন্দম বড়ুয়া সৈকত! কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০১৭ তে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল! আমার কেউ হয় না। ফেসবুকে ওর আত্মহত্যার কথা শুনে অনেক ঘাটাঘাটি করি ওর জীবন সম্পর্কে। ছেলেটা যথেষ্ট মেধাবী ছিল। সায়েন্স থেকে পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছিল, আইসিটি এক্সামে ফেল করার কারণে। কেন জানেন? আইসিটি এক্সামে ওর খাতা পরীক্ষার কিছু সময় পরে নিয়ে নেয়, আর ফেরত দেয়নি ইনভিজিলেটর ‘মহোদয়া’। অনেক হাতে পায়ে ধরেও ‘ম্যাডাম’ এর মন গলাতে পারেনি ছেলেটা। নকল করেনি অরিন্দম। হয়ত আশেপাশে তাকিয়েছিল, বা কথা বলেছিল। সেজন্য ওকে ওয়ার্নিং দেয়া যেত। কয়েক মিনিটে জন্য খাতা জব্দ করা যেত। দরকার হলে সিট চেঞ্জ করে দেয়া যেত। কিন্তু ওর খাতা দেয়া হয়নি ফেরত। ছেলেটা মনে করেছিল যা লিখেছে পাস হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্য পাস হয়নি! আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার নিয়মের বলি হলো। এক সাব্জেক্টে ফেল তো পুরো রেজাল্টই ফেইল! অথচ ফিজিক্সে এ+ পেয়েছিল অরিন্দম। কিন্তু এর পরেও হয়ত বাঁচতে পারতো এই প্রতিভাধর ছেলেটি যদি একটু সাপোর্ট পেত পরিবার থেকে।

 

 অরিন্দম সুন্দর গান গাইতো, গিটার বাজাতো, সৌখিন ফটোগ্রাফি করতো। এক নিমেষে শেষ হয়ে গেল সব প্রতিভা। কোন মেধাবী ছেলে যদি পরীক্ষায় ফেল করে, তো কি পরিমাণ মানসিক জ্বালা তার থাকে সেটা কাউকে বলে বোঝাতে হবে না আশাকরি। এমতাবস্থায় যদি তাকে ক্রমাগত কথার পর কথা শোনানো হয় খোদ বাবা মা কিংবা পরিবার থেকেই, তাহলে এই বয়সের ছেলে মেয়েরা অনেকেই মানসিক ভারসাম্য রাখতে পারে না। জীবনের গভীরতা এরা অনেকেই বোঝে না বিধায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আমি কখনই এটা সাপোর্ট করছি না। আমি অরিন্দম সম্পর্কে অনেক ঘেটেছি। ওর প্রতিটা পোস্ট ছবির লেখা দেখেছি। কমেন্ট দেখেছি। ওর এক ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে নেট এ কথা বলেছি। যা জেনেছি সেটা মোটেই সুখকর কিছু হয়।

 

এখানেও সেই ফ্যামিলি বুলিং! বাবা মায়ের প্রচন্ড খোটা আর অসহযোগিতা। এটাও শুনেছি, কষ্টে দুঃখে ছেলেটা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। বাসা থেকে কেউ ওকে সহমর্মিতা দেখায়নি। ভাত খেতে বসেছিল, তখন ওর বাবা নাকি লাথি দিয়ে ভাতের থালা সরিয়ে দেয়। এমন অনেক কিছু। আর আত্মীয় স্বজনরা যারা সারা বছরেও খোজ নেয়নি তারাও কথা শোনাতে কিছু বাদ রাখেনি ছেলেটাকে। বাঁচার ইচ্ছা শেষ হয়ে গেল। ২৫শে জুলাই ২০১৭ গলায় ফাঁস দিয়ে জীবন শেষ করে দিল, দুই সন্তানের মধ্যে ছোট এবং বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে অরিন্দম।

 

 

আপনাদের কি মনে হয় না, এই অবস্থায় যদি ওর বাবা মা ওর কথাগুলো শুনে, ওকে অভয় দিয়ে বলতেন, যা হবার হয়েছে, আবার পরীক্ষা দাও, কারো কথায় কান দিও না, পরের বার তুমি অনেক ভাল করবে! তাহলে কি শুধু বাবা মায়ের এইটুকু সান্ত্বনাই কি ওর জন্য যথেষ্ট ছিল না? ছেলেটা বেঁচে যেত। হয়ত ভাল করতো! আমার সন্তানের ক্ষেত্রে আমি সেটাই করবো বেঁচে থাকলে। এতদিনে হয়ত ভালো কোথাও চান্সও হয়তো পেয়ে যেত সে। আমি অরিন্দমের এক বন্ধুকে পড়িয়েছি ভার্সিটিতে। ওর মুখের দিকে তাকালেই আমার মনে হতো, বাবা মায়ের একটু সান্ত্বনার বাণী ছেলেটার ভাগ্যে জুটলো না। হয়ত বেঁচে যেত! এমন অনেক অরিন্দম ফ্যামিলি, বিশেষ করে বাবা মায়ের বুলিং এর শিকার হয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়। আর কোন অরিন্দম যেন এভাবে ঝরে না যায়।

Author's Notes/Comments: 

১৮ জানুয়ারী ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio