আমার তীর্থস্থান ‘নটরডেম কলেজ’

আমার অদম্য স্বপ্ন ছিল নটরডেম কলেজে পড়বো। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে পড়ার। যখন পড়তাম তখন তো পড়ালেখার চাপে কিভাবে যে দেড়টা বছর পার হয়ে গেছিলো বুঝতেই পারিনি। কিন্তু যে ভালবাসার বীজ সেই দেড় বছরে রোপিত হয়ে গিয়েছিল মনের মধ্যে, সেই ভালবাসা আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জীবনে বেশ কয়েকটি দেশসেরা এবং বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, তবে হৃদাকাশে যে ধ্রুততারা হয়ে নিয়ত পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে, সেটা আমার এই তীর্থস্থান, আমার নটরডেম কলেজ। আমার কাছে ‘আমার তীর্থস্থান’ এই কলেজ। এই কলেজের প্রতিটা অংশ আমার কাছে পবিত্র। তীর্থ ভ্রমনের পিপাসা যেমন সব ধার্মিকের মনে জাগ্রত থাকে, তেমনি বারবার এই কলেজের ভুমিতে আসার বাসনা আমার মনকে তাড়িত করে প্রতিনিয়ত। অতি সামান্য একটা উদাহরণ দেই। টিফিনে খাওয়া সিঙ্গাড়া, প্যাটিস তো কতই খেলাম, খাচ্ছি। তবুও নটরডেমের ক্যান্টিনের সেই সিঙ্গাড়া প্যাটিস খাবার জন্য এখনও মন তৃষ্ণার্ত থাকে ২১ বছর পরে এসেও।

 

আমি বর্তমানে একজন শিক্ষক। শিক্ষকের চেয়ে নিজেকে ছাত্রই ভাবি সবসময়। কারণ আমি ছোট বড় সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি। আমার শেখার কোন বিরাম নেই। আমার সমগ্র জীবনের শিক্ষা, কিভাবে শিখতে হয়, পড়তে হয়, শেখাতে হয়, কিভাবে চিন্তা করতে হয় এর সবকিছুই আমি শিখেছি নটরডেম কলেজ থেকে। এখন পর্যন্ত আমি যখন নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা করি, তখন ভাবি, কলেজে কিভাবে ভাবতাম, কিভাবে প্রতিটা বিষয়ের তিচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস নিয়ে চিন্তা করে মূল ভাবনা দাঁড় করাতে হয়! পরম শ্রদ্ধেও শিক্ষকমন্ডলী কিভাবে আমাদের প্রতিটি বিষয়ের উপরে আলোকপাত করতেন, আমি সেটা ভেবে নিয়ে আমার চিন্তায় অগ্রসর হই। কলেজের সেই শিক্ষা এখনও আমাকে পথ দেখায়।

 

আমার কখনই মনে হয় না আমি একা। কারণ এই মহান তীর্থ থেকে অর্জিত শিক্ষা আমার জীবনে আছে। মানুষ হিসেবে আমি পাপ-পঙ্কিল, ভুল ত্রুটিতে জর্জরিত। কিন্তু কলেজ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছিল, তাতে কোন খাদ নেই, কোন সন্দেহ নেই। আমি বিশ্বাস করি, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের নীচ হতে শেখায় না, পাপী বানায় না। আমরা নিজেরাই আমাদের নিজেদের অধঃপাতে টেনে নামাই। এ দায়ভার একান্তই আমাদের। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নয়।

 

 

আমি এই কলেজে অধ্যয়ন করা সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ করবো, এমন কিছু যেন আমরা করে না বসি, যাতে নিন্দুকেরা আমাদের এই তীর্থের উপরে আঙ্গুল দিয়েও কিছু ইশারা করতে পারে। নিজেদের সম্ভ্রম আর শিক্ষা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের নিজের। আমার কৃত পাপের দায়ভার কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানের উপরে বর্তায় না। আমার পাপের বোঝাও তাই আমাকেই বহন করতে হবে, অন্য কাউকে নয়। আমরা যারা এই কলেজে পড়েছি, আমরা যেন নিরহঙ্কার হই, আমাদের সম্পর্ক যেন মাটির সাথে থাকে। আমাদের কথা শুনে, আমাদের আচরণ দেখেই যেন মানুষ বুঝে যায় আমরা কোন তীর্থ থেকে এসেছি। মনের অন্তঃস্থল থেকে এই কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাঙ্গীন কল্যান কামনা করছি স্রষ্টার কাছে।  

Author's Notes/Comments: 

২৪ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio