কিছু যে বলার ছিল

সরাসরি গুলি না ছুঁড়ে আসপাশ দিয়ে গুলি ছুঁড়ে কি আর শিকার করা যায়? ওতে তো শিকার আর ফসকে যায় রে ভাই! আপনি যেই হন না কেন, কিছু বলতে চাইলে, সমালোচনা করতে চাইলে সামনা সামনিই আসুন না ভাই! তা আপনি ভাই, চাচা, মামা, খালা, ফুফু, আঙ্কেল, আন্টি সম্পর্কে যেই হোন না কেন, আমাকে কিছু বলতে চান, সরাসরি বলুন। আমি শুনতে প্রস্তুত। আপনি যেই হোন না কেন, আপনার কথায় যদি যুক্তি থাকে, সেটা মানার মত যোগ্যতা, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা আমার আছে, এইটুকু বলতে পারি। আপনার কোন কথা আমার গ্রহন করা উচিত আর কোন কথা বর্জন করা উচিত, সেটা বোঝার মত কিছু বুদ্ধি হলেও আল্লাহ মনে হয় আমাকে দিয়েছেন। সে সেটুকু যদি না দিতেন, তাহলে মনে হয় আমাকে শিক্ষক বানাতেন না। শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করেছি এবং এই মহান পেশার উপরে থাকা অবস্থাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।

 

এই পেশার মর্যাদা দিতে আমি জানি। আমার জীবনের শুরু হয়েছিল স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। জ্বী ভাই! সত্যি করেই বলছি। স্কুল থেকেই শুরু করেছি, এরপর কলেজ, অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়। আল্লাহ আমাকে ধাপে ধাপে এনেছেন। আমি শিক্ষক হয়েছি এজন্য মহান স্রষ্টার কাছে আমার অন্তরের আকুতি মেশানো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যদিও আমি শিক্ষক বলে অনেকেই আমার দিকে ন্যাক্কারজনক চোখে তাকিয়েছেন, সমালোচনা করেছেন। ডিগ্রিধারী হয়েও কেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। আমার ওতে কিছ্য যায় আসে নি। কাজেই একজন শিক্ষক হিসেবেই বলতে পারি, কার কথা কিভাবে গ্রহন করা উচিত আর উচিত না সেটা বোঝার মত জ্ঞান আমার আছে।

 

আমার আশপাশ দিয়ে গুলি ছুঁড়লে সেটা আমার গায়ে না লাগলেও সেটা যে আমার উদ্দেশ্যে ছোঁড়া হয়েছিল সেটা বোঝা যায়। আর সেটা বুঝি বলেই যারা এই কাজ করেণ, তাদের এই হাস্যকর প্রচেষ্টা দেখলে হাসিই পায়। দুঃখ লাগে না। কারণ কি জানেন? আমার ক্লাসে যদি ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে ৪০ জনকে আমার ৪০ রকম করেই মাথায় রেখে পড়াতে হয়। কাজেই মানুষের সাইকোলজি বা মনঃস্তাত্ত্বিক ব্যাপার আর ভাবভঙ্গি আপনি যদি মনে করে থাকেন একজন শিক্ষকের চেয়ে ভাল বোঝেন, তাহলে আপনাকে আমার তরফ থেকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।

 

আমি যদি ইতিবাচক কিছু বলে থাকি, তাহলে সেটা বিবেচনা করেই বলেছি। আর যদি নেতিবাচক কিছু বলে থাকি (যা আপনার মাপকাঠিতে ‘অন্যায়’) সেটাও আমি বুঝেই বলেছি। সত্যকে মিথ্যা’র চিনিময় প্রলেপ দিয়ে ঢেকে মানুষের মন যুগিয়ে চলার বিদ্যা, তেল মারার বিদ্যা আর ‘শুধু আপনাদের মন যুগিয়ে’ চলার মত বিদ্যা আমার জানা নাই আর সেভাবে চলার মন মানসিকতাও আমি আর রাখি না। আপনার যেমন নিজস্ব মূল্যবোধ আছে, তেমনি আমারও আছে। এখন একজন শিক্ষককে যদি আপনি ন্যূনতম সন্মান না দেখাতে পারেন, তাঁর সম্পর্কে সম্পূর্ণ কথা না জেনে শুনেই যদি হাওয়া বাতাসে মন্তব্য করে অন্যের বাহবা কুড়াতে চান, তো করতে পারেন। সেটা আপনার নিজস্ব মূল্যবোধ এবং রুচির পরিচায়ক হবে। ঠিক তেমনি, আমিও যে সব কিছু দেখে শুনে অন্যায় বুঝেও চুপ থাকি, কিছু যে বলি না, সেটাও কিন্তু আমার ধৈর্য আর রুচির পরিচয়ই বহন করে। আমি শুধু শিক্ষকই নয়, আমার আশেপাশের যে কোন মানুষকেই সন্মান দিতে জানি যদি সে সেটার প্রাপ্য হয় তবেই। নাহলে, আমি উলুবনে মুক্তা ছড়াই না।

 

আমার কথাগুলো কঠিন শোনা গেল? কি করবো বলেন? আল্লাহ শিক্ষক বানিয়েছেন। পড়াতে গিয়ে কখনও যেমন কোমল হতে হয়, আর তেমনি কখনও কঠোরও হতে হয়। সেটা না হলে নিজেই বা শিখি কি করে আর শিক্ষার্থীদের শেখাবোই বা কিভাবে বলেন? এটুকু তো করাই লাগে তাই না? এই যে কথাগুলো বললাম, আমি কাউকে শোনানো বা শোধরানোর জন্য বলিনি। কারণ শিক্ষক হয়ে আমি বুঝেছি শিক্ষার মূল্য আসলে কতখানিক। অন্যকে শিক্ষা দেয়ার আগে প্রতিনিয়ত আমি নিজেই শিখি আগে। আর শিখি বলেই এইটুকু জানি, শিক্ষকের ‘এথিক্স’ বা মূল্যবোধ যার মধ্যে আছে, সে তার শিক্ষার্থী বা তাদের মত কারও জন্য ক্ষতির কারণ হয় না। শব্দটা খেয়াল করেছেন তো? আমি কিন্তু ‘এথিক্স’ কথাটা জুড়ে দিয়েছি। ওটা থাকতে হবে।

 

আপনি যেই হোন না কেন, ভাল মানুষ হতে হলে এথিক্স থাকতে হবে। ওটা যার থাকবে, সে অন্যকে এত সহজে বিচারের পাল্লায় তুলে দেয় না। এথিক্স যার থাকে, সে অনেক সহনশীল হয়। আমার যদি কাউকে কিছু বলার দরকার হয়, তাহলে আমি আশপাশ দিয়ে বলি না। যাকে বলার সরাসরিই বলে দেই। ভাল থাকবেন সবাই।

Author's Notes/Comments: 

২৩ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio