গুণী শিল্পী উদিত নারায়নকে চেনে না এমন কোন সঙ্গীত প্রেমী মানুষ এই উপমহাদেশে আমার মনে হয় নেই। আমি সেই স্কুল জীবন থেকে এই গুণী শিল্পীর ভক্ত। তখন কার দিনে যে কোন হিন্দি মুভিতে মনে হয় উদিত নারায়নের কন্ঠ অপরিহার্য ছিল। বহু ভাষায় গান গেয়েছেন এই গুণী শিল্পী যার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ফিল্মে গাওয়া উনার গানে মুগ্ধ হয়ে আমি উনার গাওয়া কয়েকটি নন-ফিল্মের ক্যাসেটও কিনেছিলাম সেই ২০০০ সালের দিকে। সেই গানগুলো এখনও মনের ভেতরে বেজে ওঠে। Love is life অ্যাালবামের এই টাইটেল ট্র্যাকটি তো আমি এখনও শুনি। প্রিয় শিল্পীর পরিবার সম্পর্কে তো ধারণা আগে থেকেই ছিল। উনার স্ত্রী দীপা নায়ায়ন ঝা আর ছেলে আদিত্য নারায়নও গুণী কন্ঠ শিল্পী। আদিত্য অবশ্য কয়েকটি ফিল্পে অভিনয়ও করেছে। সেই ১৯৯৭ সালে আদিত্যর শিশু বয়সেই হিন্দি এবং দু’টি বাংলা অ্যালবাম বের হয়। যেগুলোর ক্যাসেট আমার সংগ্রহে ছিল। তখনো আমি স্কুলে পড়ি বা সদ্য কলেজে উঠেছি। আজ থেকে ২১ কি ২২ বছর আগের কথা।
দীপা নারায়ন ম্যাডাম আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন অনেক আগে থেকেই। একার উনার সাথে একটু কথাও হয়েছিল। সম্ভবত উনার জন্মদিন ছিল। শুভেচ্ছা দিয়েছিলাম। উনি উত্তর দিয়েছিলেন। তখন আমি উনাকে বলেছিলাম, আদিত্যকে বলবেন, ওর বাংলা গানগুলো অনেক মিস করি। ও যেন বাংলা গান গায় মাঝে মাঝে। দীপা ম্যাডাম আমাকে বলেছিলেন, আমি আদিত্যকে জানিয়ে দেবো। এসব সেই কত বছর আগের কথা। আজকে আমি স্বপ্ন দেখলাম এই এই পরিবারটিকে। ঘুম থেকে ওঠার পরেও আমার বিশ্বাস করতে মনে হচ্ছিলো যে এটা কি স্বপ্ন ছিল না সত্যি ছিল? কারণ স্বপ্নের প্রতিটি কথা এবং পোশাকের রঙ পর্যন্ত আমার মনে আছে। স্বপ্নে নাকি রঙ দেখে না মানুষ? আমার বেলায় তাহলে এটি সত্য নয়। আমি স্বপ্নেও রঙ দেখি এবং আমার স্পষ্ট মনে থাকে। এবার স্বপ্নের কথা বলছি।
স্বপ্নে দেখলাম আমি শিল্পী উদিত নারায়নের বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। সেখানে আমার উদিত নারায়ন, উনার ছেলে আদিত্য নারায়ন এবং স্ত্রী দীপা নারায়ন ম্যাডামের সাথে কথা হলো। বেশী কথা হলো দীপা নারায়ন ম্যাডামের সাথেই। একটা সোফায় বসে প্রথমে উদিত নারায়নের সাথে কথা হলো। সাধারণ কুশলাদি বিনিময় করলাম। উনি সাদা রঙের একটা সেরওয়ানী জাতীয় কিছু পরে ছিলেন যার উপরে সোনালী রঙের কাজ করা ছিল। এরপর আদিত্যর সাথে কথা হলো। সেখানেও আমি ওকে বললাম, আদিত্য তোমার কয়েকটা অ্যালবাম আমার কাছে আছে। আমি তোমার বাংলা গান অনেক মিস করি। আদিত্য হেসে দিলো। বললো, আপনি বসেন, আমি আসছি। উল্লেখ্য যে কথা বার্তা বাংলায় হচ্ছিলো, কারণ ওরা সবাই বাংলা বোঝে। আর দীপা নারায়ন ম্যাডাম তো কোলকাতাতেই লেখাপড়া করেছেন। আদিত্য ঘর থেকে কয়েকটা ক্যাসেট এনে আমার সামনে রেখে বললো, এই সেই অ্যালবাম যেগুলোর কথা আপনি বললেন। আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো। এর মধ্যে একটা অ্যালবার ছিল ‘আলাদীন’ নামের। স্বপ্নে সেটাকেও দেখলাম।
এরপর দীপা নারায়ন ম্যাডামের সাথে অনেক কথা হলো। মনে হচ্ছিলো যেন কতদিন ধরে এই পরিবারটিকে আমি চিনি। সবাই আমার কত আপন। আর উনাদের আন্তরিকতা তুলনাতীত ছিল। অনেক সমাদর করলো আমাকে। যেন আমিও তাদের কত আপন। আমি দীপা নারায়নকে বললাম, আপনার আর উদিতজীর গাওয়া একটা ডুয়েট আমার খুব প্রিয়। উনি জানতে চাইলেন কোনটা? তখন আমি বললাম, নেপালী ছবি, ‘দেউকি’ তে আপনাদের গাওয়া ‘জওনা হেয় লেই লেই’ ওই গানটা। শুনে উনি হেসে দিলেন। এরপর কথাবার্তা বলে যখন উনাদের ঘর থেকে বের হয়ে আসবো, তখন দীপা নারায়ন ম্যাডাম আর একজন বয়স্ক মহিলা আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। বের হবার আগ মুহুর্তে আমি উনাদের বললাম, আমাকে আশীর্বাদ করবেন আপনারা। আমি যেন সবসময় সরল এবং সত্য পথে চলে পারি। উনারা আমাকে আশীর্বাদ দিলেন। আমি বারবার অনুরোধ করলাম, উনারাও যেন আমার এলাকায় এলে বেড়াতে আসেন। এরপর আমি চলে এলাম। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।