ভালবাসার বিলাসিতা

আমাদের জীবনের সম্পর্কগুলো অনেক অদ্ভুত তাই না? তার চাইতেও বেশী অদ্ভুত আমাদের মনের গতি প্রকৃতি। অনেক কিছু মনে আনলেও মুখে বলা যাবে না। আবার অনেক কিছু মুখে বললেও মনে ধরা চলবে না। মানুষের মুখে মুখে কথাটা বহুবার শুনেছি, মানুষের মুখের কথা আর বন্দুকে গুলি, বের হয়ে গেলে আর ফেরানো যায় না। কথাটা শুনতে খুব সাধারণ হলেও নিতান্তই বাস্তব কথা। যে কথা একবার বলা হয় যায়, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে যতবারই ক্ষমা প্রার্থনা করা হোক না কেন, বা বোঝানো হোক না কেন, মনে কিন্তু বসে থাকেই। হয়ত আমরা পরিস্থিতি মেনে নেই বা নিজেকে মানিয়ে চলতে চেষ্টা করি। আর আমরা মানিয়ে চলতে পারি বলেই মনে হয় আমরা মানুষ। পরিস্থিতির সাথে সামাল দিয়ে আমাদের অনেক কিছুই মানিয়ে চলতে হয়। অনেক প্রিয় জিনিসকেও গোপন করে রাখতে হয়। অনেক ভালবাসার জিনিসও মনের ভেতরেই সুপ্ত রাখতে হয়।

 

আমাদের আচরণের বহুমাত্রিকতার কারণে আমাদের নিজেদেরকে অনেক রকমভাবে পরিবর্তন করতে হয়। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগে কখন জানেন, যখন, আমার মনের কথা আমার প্রিয় মানুষকেও বলার সময় আমাকে ভেবে নিতে হয়, এই কথাগুলো বললে ‘অন্যরা’ কি মনে করবে। এটা আমাদের এক ধরণের সমাজ স্বীকৃত মনের বন্দীত্ব। কারণে অকারণে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমাদের এমন বন্দীত্ব মনে নিতে হয়। আমার ভাল লাগা না লাগায় কি যায় আসে? নিজের ভাললাগা গুলোকেও অনেক সময় অন্যের কৃপাদৃষ্টির জন্য লুকিয়ে রাখতে হবে। সে হোক। তবুও বেঁচে থাকুক আমাদের ভালবাসা গুলো। তবুও ভাল থাকুক আমাদের ভালবাসার মানুষগুলো।

 

কে না জানি আমরা, আমাদের আবেগই অনেক সময় আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সিনেমার কাহিনীতেই নয়, আমাদের বাস্তব জীবনেও আমাদের আবেগ আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। আমরা চাইলেও কি আমাদের আবেগকে চাপা দিতে পারি সবসময়? অনেক সময় অবুঝের মত প্রকাশ করা আবেগই আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

 

ঘটনার সত্যি মিথ্যে যাচাই করতে যাবার সময় কই আমাদের? বই পড়ে দেখার সময় কই? চলার পরে দোকান থেকে বইয়ের দুটো পাতা উল্টেই যদি আমরা ঠোঁট উল্টাই তাহলে কি বইটার প্রতি সুবিচার করা হয়? তেমনি একটা মানুষের ভেতরে আসলে কি চলছে, বা কি চলছিল, সেটা না দেখেই যদি দূর থেকে তার উদ্দেশ্যে একটা বাক্যবান ছুড়ে দেই, তাহলে কি সেটা কোন সুবিবেচকে মত কাজ হবে? আমি যদি চাই, আমার ভাললাগার মতই সব মানুষ হবে, সেটার কি আদৌ কোন বাস্তবতা থাকবে? আমি কি নিজেই পারি নিজেকে নিজের মত করে ঢেলে সাজাতে? যদি নিজেকেই নিজের ইচ্ছেমত পরিবর্তন না করতে পারি, তাহলে আমরা অন্য একজনের ব্যাপারে খুব সহজেই কি করে উপসংহারে চলে আসতে পারি? ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হয় না। অনেক প্রশ্নই মনের ভেতরে উদয় হয় কিন্তু এগুলোর উত্তর কোথাও পাওয়া যায় না। উত্তর আমি চাইও না কারও কাছে। আর কার কাছেই বা চাইবো? যার কাছেই জানতে চাইবো এসব কথা, সে হয়ত দুটো শুনেই বলে বসবে, পাগল হয়েছো?

 

পাগল হয়েছি কিনা জানি না। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় হলেই বা কি করা যেত! বেঁচে থাকাটাই যেখানে প্রতিনিয়ত একটা চ্যালেঞ্জ সেখানে মাঝে মাঝেই মন চায় মুক্তি। এটা কি একটা বিলাসিতা? হবে হয়ত। ঠিক তেমনি ভালবাসাটাও মনে হয় এক ধরণের বিলাসিতাই। কিংবা হয়তো একটা চোরাবালির মত কিছু। যতই সেখান থেকে উঠে আসার চেষ্টা করি, ততই যেন আরো বেশী করে গেড়ে বসে যাচ্ছি। যতই ভুলতে চেষ্টা করি, ততই যেন মনের মধ্যে আরো বেশি করে বসে যায়। কেন এমন হয়? সেই উত্তর এখন আর খুঁজতে যাই না...    

Author's Notes/Comments: 

১ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio