বিগত কয়েক বছর ধরে আমার চশমার মধ্যে যখনই ভাংচুর হচ্ছে তখনই লেন্সটা ধরে রাখা ফ্রেমের অংশের কোথাও না কোথাও ‘কুট’ করে একটা শব্দ করে ভেঙ্গে যাচ্ছে! মানুষের তো হাত থেকে পড়ে কাঁচ টাচ ভাঙ্গে! আমার সেরকম কিছু হয় না। বিগত চার পাঁচ বছর ধরে যখনই আমার চশমা ভাঙ্গেছে তখনই ফ্রেমের মধ্যে কোথাও না কথাও একা একা ভেঙ্গে গেছে। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। একদিন ত বই পড়ছিলাম, এমন সময় দেখি চশমার মধ্যে ‘টুস’ করে শব্দ করে বিস্ফোরণ! আমি চমকে উঠলাম। দেখি ফ্রেম ভেঙ্গে সেখান থেকে আলগা হয়ে কাঁচ খুলে পড়েছে। আজকে সকালে আমার প্রিয় ‘ফ্রি-ফ্লাই’ এর চশমাটা এমন করেই ভেঙ্গে গেল! খারাপ লাগছে কারণ ওটি যে আমার অনেক প্রিয় ছিল।
মায়া পড়ে যায় তো। আমি সবসময় কয়েকটা চশমা বানিয়ে রাখি। দুই মিনিটও তো থাকতে পারি না ওটা ছাড়া। স্টক থেকে সাথে সাথে আরেকটা বের করে চোখে দিয়েছি, কিন্তু মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে আছে আগেরটার জন্য। মানুষের মন খুব অদ্ভুত! নতুন কে পাওয়ার আনন্দ বেশী না পুরানো চলে যাওয়ার দুঃখ বেশি? মনের মধ্যে যখন এই তুলনা চলে আসে তখন দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বৈকি! আমার আবার নতুন কে পাওয়ার আনন্দের চাইতে হারানোটার জন্য মায়া কাজ করে বেশি। এমনটা কি হওয়া উচিত?
মানুষের মধ্যে মায়া, ভালবাসা আছে বলেই মনে হয় আমরা ‘মানুষ’ হয়ে উঠি। মানুষের আরবী শব্দের একটি হচ্ছে “ইনসান”। আরবী ইনসান শব্দটি এসেছে “উনস” ধাতু থেকে যার অর্থ মায়া, মততা, সম্প্রীতি! ইনসান হচ্ছে আল্লাহর সেই সৃষ্টি যাদের মধ্যে সৃষ্টিগত ভাবেই মায়া, মমতা আছে। আবার এই মানুষই শুধু এই ‘মায়া’ এর অভাবে হয়ে যেতে পারে পশুর চেয়েও অধম! কয়জন আমরা মূল্যায়ন করি এভাবে?
সৃষ্টির উন্নত জীব হিসেবে আমাদের কাছে তো সমস্ত সৃষ্টিই নিরাপদ থাকার কথা ছিল। সেখানে মানুষ তো দূরের কথা, আমাদের অত্যাচার থেকে কোন পশু পাখিও কি নিরাপদ? পৃথিবীকে আমরা আমাদের হিংস্রতা দিয়ে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি আর কেনই বা? অন্যের ক্ষতি করে, অন্যের হক মেরে দিয়ে, জুলুম করে, বঞ্চিত করে, ছোট করে, অহেতুক অপমান করে- আমরা কি অর্জন করতে চাচ্ছি? জুলুমবাজ মানুষ হয়ে জন্মানোর চেয়ে ইট, কাঠ পাথর কিংবা একটা ভাঙ্গা চশমা হয়ে জন্মানোটাই কি ভাল ছিল না?