গতকাল ২৬শে মে ২০২১ নাকি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহন ছিল। আমি জানতামই না। জানলে চেষ্টা করতাম সেটা দেখার। বিকালে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে যখন উঠলাম, তার অনেক আগেই গ্রহন শেষ। গতকাল নাকি আকাশে অনেক মেঘ ছিল। মেঘের জন্য এমনিতেই নাকি ঢাকার আকাশে গ্রহন দেখা যেত না। এই কথা ভেবে মনের দুঃখ কিছুটা লাঘব হলো। যাক দেখা যদি গিয়ে থাকে, তাহলে আর দুঃখ করে লাভ কি আর? তবে আমার মনে আছে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি মনের সাধ মিটিয়ে দেখেছিলাম একটা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহন সিঙ্গাপুর থেকে। দেশে আসার প্রসঙ্গ ছিল। ফ্যারার পার্কে গিয়েছিলাম কিছু শপিং করতে। ওখানেই হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি গ্রহন শুরু হয়ে গেছে। অনেক বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ ওইদিন যে গ্রহন হচ্ছিলো সেটা আমার আগে জানা ছিল না। যেহেতু চাঁদের গ্রহন হচ্ছিলো একদম মেঘমুক্ত আকাশে, সেহেতু খালি চোখে দেখতে তো আর সমস্যা কি? বার বার তাকিয়ে দেখছিলাম। বাসায় আসার পথেও বারবার দেখেছি। যখন বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি তখন চাঁদ পুরোটা ঢেকে গিয়েছিল। কিন্তু মজার কথা হলো, চাঁদ একদম অন্ধকারে হারিয়ে যায় না। বরং অনেক গাঢ় রক্তিম রঙের অবয়ব নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ডুবে থাকে! ‘ব্লাড রেড মুন’ একেবারে! ওটা দেখা একটা অদ্ভুত অনুভুতি ছিল আমার। অন্ধকারের মধ্যে ডুবে আছে রক্তিম পূর্ণিমার চাঁদটা!
গ্রহনের সাথে সম্পর্কিত কিছু কিছু কথা বা কুসংস্কার শুনতে পাই। গতকালও শুনলাম বেশ কিছু। তার বেশীরভাগই আরোপিত হয় গর্ভবতী মেয়েদের উপরে! ই অদ্ভুত! মাছ বা শাক সবজি কাটাকুটি করা যাবে না, বাইরে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি! এগুলোর কোন ব্যাখ্যা মানুষের কাছে জানতে চেয়েও পাইলাম না। উপযুক্ত ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা না পেলে অযথা সেটাকে নিয়মের বা সংস্কারের আওতায় মেনে চলতে আমি রাজী নই। ইসলাম ধর্মের নিয়ম বিধান, সুন্নাত অনুসারে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহন চলাকালীন নফল নামাজ পড়তে হয়। এই নফল নামাজের নাম ‘সালাতুল কুসুফ’ (সূর্য গ্রহনের নামাজ) এবং ‘সালাতুল খুসুফ’ (চন্দ্রগ্রহনের নামাজ)। স্বয়ং নবীজী এই নামাজ পড়েছেন। এটা নফল নামাজ! এর বেশী আর কিছু তো পেলাম না কোথাও! কারও যদি উপযুক্ত প্রমাণ সহ কিছু জানা থাকে আমাকে জানাবেন। উপকৃত হত। নিছক, ওমুকে বলে, তমুকে বলে, মৌখিক লোকাচার, এসব সংস্কারে মানায় আমি একদম বিশ্বাসী নই। ইসলাম ধর্মের অমোঘ বিশ্বাস অনুসারে, সমস্ত ভালো মন্দের নিয়ন্তা আল্লাহ স্বয়ং! চাঁদে বা সূর্যের গ্রহনের কারণেই কারও কল্যান অকল্যান হয় না। চাঁদ সূর্য কারও ভাগ্য নিয়ন্তা হতে পারে না। জীবন ধারণের যে বিধি বিধান আমাদের জন্য দেয়া আছে, সেটুকুই যথেষ্ট। মঙ্গলময় বা কল্যানময় জিনিসই দীন তথা ধর্মের অংশ! চন্দ্রগ্রহন বা সূর্য গ্রহন দেখার মধ্যে কি এমন অকল্যান থাকতে পারে আমি জানতে ইচ্ছুক! সূর্য গ্রহনের কথা একটু আলাদা! সেটি তো আর খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, তবে উপযুক্ত প্রটেকশন নিয়ে সেটিও দেখেছি। ভবিষ্যতে বেঁচে থাকলে, আর দেখার সুযোগ থাকলে আবারও দেখবো ইনশাআল্লাহ! চন্দ্র বা সূর্য গ্রহন প্রকৃতিরে ঘটা একটা অনিন্দ্য সুন্দর ঘটনা। আমার ভাল লাগে! অপেক্ষায় থাকি দেখার জন্য।
আরও এক ধরণের গ্রহন আছে। সেই গ্রহন যখন লাগে, তখন তা কিন্তু নিশ্চিত ভাবে ক্ষতি করে। সেই গ্রহন থেকে সাবধান! সেই গ্রহন লাগে মনে! মানুষের মনে যখন গ্রহন লাগে, সেই গ্রহন কখন ছাড়ে বা আদৌ ছাড়ে কিনা আমার জানা নেই। অনেক জটিল একটা ব্যাপার! চাঁদে আর সুর্যে যখন গ্রহন লাগে, ওরা কেউ জায়গা থেকে সরে যায় না। সাময়িক অন্ধকারে লুকিয়ে যায়। কিন্তু মনে যখন গ্রহন লাগে তখন অনেক সম্পর্ককেই দূরে সরিয়ে দেয়। সেই দূরত্ব অনেক সময় মোচন হয় না।