১৮ জুন ২০২০

করোনা ভাইরাস টেস্টের নামে প্রহসন

 

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমার শাশুড়ি আর এক সপ্তাহ প্রায় হাসপাতালে আছেন। উনাকে হাসপাতালে নেয়ার পেছনে আছে কিছু কথা যা আপনাদের বলতে চাই। শুনুন তাহলে।

 

খুব দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, সারা পৃথিবী যেখানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে স্তম্ভিত হয়ে আছে সেখানে আমাদের দেশের কতিপয় মানুষ/প্রতিষ্ঠান মানুষের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এক কিম্ভুত প্রহসনে লিপ্ত। চটকটার কথা আর বিজ্ঞাপন নিয়ে, অনেকগুলো টাকার বিনিময়েও পাওয়া গেল না সেবা, এবং ভুল সিদ্ধান্ত জানানো হল রোগীর পরিবারকে। শুধু আমরাই না, না জানি এমন আরো কত মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছে এসব ধোঁকাবাজির।

 

বিগত ৬ই জুন থেকে আমার শাশুড়ি (বয়স-৬৫ বছর) সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন। বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, উনাকে ঘরোয়া আইসোলেশনে রাখা হয় এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়। উল্লেখ্য যে, উনার নিয়মিত ইন্সুলিন ব্যবহার করতে হয় এবং উচ্চরক্তচাপও আছে। আমরা আমাদের বাসা থেকেই নিয়মিত উনার খোঁজ খবর নিতে থাকি। গত ৯ তারিখের দিকে অক্সিমিটার দিয়ে মেপে দেখা গেল উনার শরীরে অক্সিজেন পরিমান সহনহশীল মাত্রা নিচে নেমে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে উচ্চমূল্য দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়, এবং আমাদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে, এটা করোনা ভাইরাসের সংক্রমন কিনা।

 

আমরা যোগাযোগ করি DMFR Molecular Lab and Diagnostics এর সাথে। কথা হয়, উনারা বাসা থেকে এসে রোগীর করোনা সনাক্তকারী উপকরণ নিয়ে যাবেন এবং দুই দিনের মধ্যে ওয়েবসাইটে ফলাফল আপলোড করে দিবেন। এজন্য তারা রোগী প্রতি গ্রহন করে 4500  টাকা। ১০ই জুন উনারা দুপুরের দিকে আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ি দু’জনেরই স্যাম্পল নিয়ে যায় এবং সর্বোচ্চ তিন দিনের মাথায় রেজাল্ট পাওয়া যাবে বলে। অবস্থার অবনতি ঘটায় আমার শাশুড়িকে সেদিন রাতেই ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে তাদের উদ্দোগেই করোনা ভাইরাস চেক করা হয়। পরদিন বিকালের মধ্যে আমরা ফলাফল হাতে পেয়ে দেখি আমার শাশুড়ি করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শিকার এবং উনার নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। পারিবারিক সিদ্ধান্তে উনাকে ইমপালস হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে এবং অদ্যবধি আমার শাশুড়ি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

স্যাম্পল সংগ্রহকরা প্রতিষ্ঠানটির আশ্বাস অনুসারে ১২ তারিখ থেকে আমরা বারংবার ওয়েবসাইটে চেক করতে থাকি রিপোর্ট এর জন্য। সেখানে শুধুমাত্র ‘পেন্ডিং’ কথাটাই প্রতীয়মান হতে থাকে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জনাব Md Abdulla khan এর সাথে যোগাযোগ করি। উনি রোগীর আইডি পাসওয়ার্ড সমেট ম্যাসেজটি হোয়াটসয়অ্যাপে দিতে বলেন। আমরা দেই। উনি দেখবেন বলে জানালেও কোন উত্তর দেন না। এরপর আমরা যতবারই ফোন দিয়েছি, ততবারই উনি বলতে থাকেন, হোয়াটসয়অ্যাপে ম্যাসেজ দিতে। আমরা বারংবার বলা সত্ত্বেও উনি কোন উত্তর দেনা না। কল কেটে দেন এবং আমি বাইরে আছি, মেসেজ করতে এসব বলতে থাকেন। আমরা মেসেজ করেও কোন উত্তর পাইনি। এভাবে কেটে যায় ৫ দিন। আমরা দফায় দফায় সেন্টারটির সাথে যোগাযোগ করি এবং প্রতিবার আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, আপনাদেরটা দেখা হচ্ছে। গত ১৫ই জুন দুপুর বেলা আমাদের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়, রাত দশটার মধ্যে ফলাফল ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। ১৬ই জুন দুপুরেও ফলাফল না পেয়ে আমরা আবার বাধ্য হয়ে প্রথমে তাদের কল সেন্টারে এরপর ডিজিএমের সাথে আবার যোগাযোগ করি। উনি বাইরে আছে বলে প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে বলে আমাদের রিপোর্ট অবিলম্বে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সন্ধ্যা অবধি আমরা কোন কর্মীর সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফলাফল পাইনি। ১৬ই জুন সন্ধ্যার পরে ডিজিএম সাহেব আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ‘সুসংবাদ’ জানায়ে বলেন, আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ি দুইজনেই করোনা সংক্রমন মুক্ত। উনাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে দুইজনেরই এবং কিছুক্ষণের(!) মধ্যে ফলাফল ওয়েবসাইটে আপলোড হয়ে যাবে। উনার কথা শুনে আমার স্ত্রী জানালেন, তার মা ইতিমধ্যেই গত পাঁচ দিন ধরে হসপিটালে আছেন এবং উনার করোনা ভাইরাস সংক্রমন হয়েছে বিধায় ইবনে সিনা থেকে ইমপালস হসপিটালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন সদুত্তর ডিজিএম সাহেব দিতে পারেননি।

 

এখন বাকী কথা পাঠকের উপরে ছেড়ে দিলাম। আপনারাই বিবেচনা করুণ, উচ্চঅঙ্কের টাকার বিনিময়ে মানুষের দুর্দিনে, এমন প্রহসনের মানে কি? এর জন্য কি করা উচিত?

View shawon1982's Full Portfolio