গৃহে অবরুদ্ধ আমরা সবাই। চেষ্টা করছি কতদূর নিজেদের অবরুদ্ধ করা যায়। এরপরেও আমরা কেউই নিরাপদ নই। সবাই এক অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি। এর মধ্যেই শুনলাম মিরপুরে একজন বয়স্ক লক করোনা সংক্রমনে মারা গেলেন। পুরা বাসা লক ডাউন করে দেয়া হয়েছে। এক বন্ধুর সাথে চ্যাটিং এ কথা হল। আমি মিরপুর থাকি শুনে আমাকে সে বলল, তোদের মিরপুরের অবস্থা তো খারাপ! এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমি দিতে পারলাম না। আমাদের মিরপুরের অবস্থা খারাপ হলে ঢাকা বা বাংলাদেশের কোন অংশ নিরাপদ নিশ্চিত করে বলেন তো? আদৌ কোন উত্তর কি আছে কারো কাছে? আমরা কি কেউ জানি আমরা কতখানি বিপদের মধ্যে আছি বা আমরা আসলে কতটুকু নিরাপদ? দৃশ্যমান শত্রুর মোবাবিলা করার উপায় খুঁজে বের করা যায়, কিন্তু অদৃশ্য যে ভাইরাস, সে কিভাবে অনুপ্রবেশ করবে না করবে কিভাবে তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করবো? আমরা অনেক অসহায়! অনেক অনেক বেশী!
আমি নিজে আর জ্বরে ভুগছি গত দুই দিন ধরে। সেই সাথে চোয়ালে প্রচন্ড ব্যথা। আমাকে আমার বাসার ভেতরেও আলাদা রুমে রাখা হয়েছে। আমি গত দুইদিন ধরে আমার বাচ্চাদুইটার কাছেও যাচ্ছি না। খুব ইচ্ছা করে ওদের কোলে নিয়ে একটু চটকাচটকি করে আদর করি, সবসময় যা করি! সেটা আর করতে পারছি না। বাচ্চাদের কথা ভেবেই আমি নিজেই দূরে আছি। সেই সাথে চিন্তা হয় সেই সমস্ত মানুষগুলার কথা চিন্তা করে, যারা এই ভাইরাস আর এর সংক্রমন সম্পর্কে এখনও কিছুই জানে না। সেই সমস্ত মানুষ গুলাকে নিয়ে চিন্তা হয় যাদের জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত পথে নামতে হয়। রিক্সাওয়ালা, ঠেলাগাড়ীওয়ালা, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষগুলো? এদের কি হবে? এরা তো নিজেদের লক-ডাউন করে দিতে পারছে না? এরা খাবে কি তাইলে? এরা তো কক্স-বাজারে বিলাস ভ্রমনে গিয়ে বড় গাল করে বলতে পারছে না ‘আল্লাহর উপরে ভরসা করে আসছি’। আমরা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কি নিতান্তই আহাম্মক, তাই না?
যে সব মানুষ ফুটপাথে শুয়ে থাকে? গ্রামের হাজার লাখ মানুষ, আমার দাদা দাদী শ্রেণীর কত মানুষ, তারা কি জানে করোনা ভাইরাস কি জিনিস? এখনও তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন নিয়েই আছে। রাস্তার যেসব পথশিশু, তাদের নিয়ে কে ভাববে? এরা বাঁচবে কিভাবে? কে দেবে এদের চিকিৎসা? যে দেশের চিকিৎসকরাই সম্পূর্ণরুপে নিরাপদ নয়, সেদেশে কিভাবে আমরা এই সংক্রমনকে প্রতিহত করবো? ঘরে বসে থেকেই বা আমরা কিই বা করতে পারছি আর পারব?
ধর্মকে পুঁজি করে এখন আবেগতাড়িত হবার সময় নয়। খোদ কাবা ঘরের তাওয়াফ যে অবস্থায় স্থগিত করে দেয়া হয়, সেখানে আমাদের মাসজিদ আর জামাতে নামাজ পড়া নিয়ে এত বাড়াবাড়ি মাখামাখি করার কি আছে সেটা আমি বুঝি না! হয়ত আমি ভাইরাস বহন করে চলেছি, আমি তো না হয় ২৭ গুন বেশী সোয়াব নেয়ার জন্য জামাতে নামাজ পড়তে মাসজিদে যাচ্ছি, কিন্তু এর জন্য যদি ১০ জন মানুষ অতিরিক্ত সংক্রমিত হয় তাহলে সেই দায়ভার কে নেবে? আর সেজন্য যদি কেউ মারা যায় তাহলে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কি জবাব দেব? যারা মানুষের মধ্যে সহমর্মিতার পরিবর্তে প্রতিহংসা ছড়ায়, ধর্মীয় গুরু হওয়া তো দূরে থাক, আমি তাদের মানুষই বলি না। সে যেই হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কে সে ব্যাপারে। রাসূল উত্তর দিয়েছিলেন, নিকৃষ্ট আলেমগণই সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।