সবসময় আমি নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেবার চেষ্টা করি যে কোন বিপদ আপদে। কেউ আমাকে কিছু বললে যে শুনি না তা নয়, কিন্তু কেউ আমাকে Motivate করতে চেষ্টা করলেই যে আমি মোটিভেট হয়ে যাই ব্যাপারটা তাও না। তবে আমার একটা সমস্যা হল, আমি খুব সহজে যেমন রেগে যাই, আবার খুব সহজেই রাগ মিটেও যায়। আর আমার আরেকটা বড় ধরণের সমস্যা আছে। আমি বড্ড বেশী ঠোঁটকাটা আর কঠোরভাষী। আমি যখন সত্যি কথা বলা শুরু করি, তখন দিনক্ষণ সব উল্লেখ করে করে বলতে থাকি। রুঢ় কথা বলতে আমার একটুও দ্বিধা হয় না। কারণ আমার মনেও যা, মুখেও তা। এজন্য আমি বেশীরভাগ মানুষের চক্ষুশূল। আমি অভিনয় করতে জানি না, আমি অপ্রিয় সত্য কথা অকপটে বলতে পছন্দ করি। আমার দোষ মানুষের কাছে মূলত এখানেই। আমি ভীষণ অপ্রিয় আমার বাড়ির মানুষদের কাছেই। অবশ্য এতে আমার কোন ক্ষোভ নেই। কারণ লোকাচারে মানুষের কাছে প্রিয় হতে আমি চাই না। আমি যেমন তেমনই থাকবো, আছি। আমার কথায় মানুষের আপত্তি, আমার লেখায় আপত্তি, আমার চলন বললেও আপত্তি! এতগুলো আপত্তি এড়িয়েও আমি এগিয়ে যেতে জানি। জীবনের কিছু অপ্রিয় সত্য আমি অনুপুঙ্খ করেছি খুব কাছ থেকেই। বারবার আমাকে শিক্ষা নিতে হয়েছে। আমি বহুবার ভেঙ্গে পড়েছি এই ভেবে যে, আমি হেরে গেছি। এখন আমি জোর গলায় বলতে পারি, আমি অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা আমি শিখেছি, তা হল আমি হারতে শিখেছি। মানুষের কাছে। কেউ যদি মনে করে আমি হারাতে তাদের প্রভুত আনন্দ হচ্ছে, তো তারা আনন্দ করে নিক প্রাণভরে। আমি হারতে শিখে গেছি।
কিছুদিন আগে আমাকে পরিচিত এক বড় ভাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছিলেন। আমি উনাকে যতদূর চিনি, উনি কথা খুব কম বলেন কিন্তু যা বলেছেন দুই এক শব্দে, সেটা আমার মনে গেঁথে গেছে। ভালও লেগেছে কথাগুলা। আমি মানুষের কথায় আগে খুব সহজেই Convinced হয়ে যেতাম। আর তার খেসারত দিতে হয়েছে আমাকে বারংবার! আমাকে দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। শারিরীক, মানসিক নানা রকমের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে আমাকে দফায় দফায়। কেউ কেউ ধরে নিয়েছিল, আমাকে যা খুশি তাই বলা যায়, আমাকে যা খুশি তাই করা যায়, আর আমাকে মানিয়ে ফেলা তাদের চুটকির ব্যাপার! আমার লেখালিখির উপর চরমভাবে মুখ বিকৃত করে ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছে, আমি যেন লেখালিখি না করি। কারণ এতে তার প্রিয়ভাজনদের নাকি মনে চোট লাগছে।
আমার এই লেখালিখির কারণে আমাকে তাদের হাতে শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত হতে হবে, এই জাতীয় Threat ও আমাকে দেয়া হয়েছে। ঠিক, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আগে তো নিয়মিত লিখতাম না, এখন থেকে নিয়মিতই লিখবো। কারণ আমাকে যে ব্যঙ্গ করে মানা করেছিল, সে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিল, আমার লেখালিখির জন্য আমাকে তার প্রিয়ভাজনরা যদি শারিরীক ভাবে আক্রমন করে, আমাকে যদি মেরে ফেলে, আমাকে যদি আক্রমন করে, তাহলে কি সেটা প্রতিহত করতে পারবো? উত্তর হল, না! আমাকে যদি শারিরীক ভাবে কেউ আক্রমন করে, তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আসলেই আমার নেই। কারণ আমি আমার সমগ্র জীবনে এই বিদ্যা তো রপ্ত করি নি। লেখালিখি করার জন্য কাউকে আক্রমন করতে হবে, শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত হতে হবে, এই বিদ্যা আমার জানা নেই। আমি আমার সেই সমালোচককে বলেছিলাম, ‘অসির চেয়ে মসি বড়’ এই আপ্তবাক্যটা আপনার কাছ থেকেই শুনেছিলাম। আমি কোন মূল্যেই আমার লেখা থামাবো না। কারণ উনার প্রতিক্রিয়া দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি কতটা সত্য কথা লিখছি।
যেই পরিচিত ভাইয়ের কথা বলছিলাম একটু আগে, উনি আমাকে খুব সংক্ষেপে যা বলেছিলেন সেটা হল, ‘জীবনে কিছু জয় করার আগে হারতে শেখ। হেরে যাও না দুই একবার, সমস্যা কি? শুধু নিজের জীবনের লক্ষ্য থেকে নড়বে না। কোন কথাতেই নিজেকে টলাবে না। নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে যদি হেরে যেতে হয় দুই একবার তো হেরে যাও’। আমি হেরে গেছি। এখন আমার আর কোন ভয় নেই। এখন আমি একটু একটু করে হাঁটা শিখেছি আমার নিজের লক্ষ্যে। আমার এই লেখা গোপনে গোপনে অনেকেই পড়ে, সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক আলোচনা, সমালোচনা, অনেক কিছুই হয়। তাদের সেই সমালোচনার আগুনের আঁচ আমাকে আগে দগ্ধ করতো, এখন আর করে না। কারণ যে হেরে যায় সে আর দগ্ধ হয় না।