৩ জানুয়ারী ২০২০

স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে কে না দেখে? আমিও দেখি মাঝে মাঝে। বেশীরভাগই মনে থাকে না। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, কি দেখছিলাম যেন? তখন যদি মনে না পড়ে মেজাজ খারাপ হয়। মনে থাকলে ভাল লাগে। বেশীরভাগ সময়ই সেটা কারো সাথে শেয়ার করা হয় না। কিছু কিছু স্বপ্ন আবার এতটাই অর্থহীন হয় যে এগুলোর কোন মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। ওগুলো খুব সহজেই ভুলে যাই। ইদানিং কি সব কিছু আগের মত মনে থাকছে? আমি নিশ্চিত নই। মনে হয় না। কিছুই আর আগের মত মনে থাকছে না। যখন আমি আমার ছাত্রজীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখি তখন আমার ভাল লাগে। স্বপ্নের মধ্যে বন্ধুদের দেখি মাঝে মাঝে যাদের সাথে সহসা দেখা হয় না এখন। মাঝে মাঝে পরীক্ষা নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখি তখন ভাল লাগে না। খারাপ লাগে। বেশীরভাগ এমনই হয়। মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, স্বপ্ন যখন আমরা দেখি, সেটা কি আলাদা কোন জগৎ? যেই জগতেও আমি বা আমার মত কেউ আছে? সে আমার কাছে স্বপ্নের মাধ্যমে কিছু বার্তা পাঠায়? এমন কিছু? আমি জানি আমার এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। কি হবে সব জেনে? থাকুক কিছু অজানা রহস্য।

 

আজকে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। ক্লাসে গেছি। টপিকটা অবশ্য নতুন কিছু না। ভার্সিটিতে পড়া নিয়ে আগেও বহুবার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সববারই আমার সাথে থাকে আমার বন্ধু বান্ধবগুলা অর্থাৎ যাদের সাথে আমি বাস্তবেই পড়ে এসেছি। সব আমার পরিচিত গন্ডিতেই থাকে। কিন্তু এবার ভিন্ন। এবার বন্ধু বান্ধবগুলা একদম নতুন। কাউকেই চিনি না সবগুলা নতুন মুখ। রুমে গিয়ে দেখি বেঞ্চে সব এলোপাথাড়ি করে বসে আছে। সবাই সবার মত খোশগল্পে মশগুল। আমি কাউকে চিনি না। আমার সাথে কারো কারো কথা হল। বেঞ্চে ব্যাগ রেখে বসলাম। প্রথমেই নাকি ম্যাথ ক্লাস হবে। সাদা একটা পোলো-টিশার্ট পরে টিচার এলেন। ইয়ং ম্যান। আশ্চর্য হলেও সত্যি স্যার কি টপিক পড়িয়েছেন সেটা আমার মনে আছে। স্যার বোর্ডে অঙ্ক করাচ্ছিলেন যে টপিকে সেটা হল, ‘Differential Equation’

 

বাস্তব জীবনে এই টপিক পড়েছিলাম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেভেল-১, টার্ম-২ তে থাকতে। আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার নামে একজন ইয়ং স্যার এই টপিক পড়িয়েছিলেন। কিন্তু মামুন স্যার তো কখনও টি-শার্ট পরতেন না। বেশীরভাগ সময় সাদা একটা শার্ট পরতেন আর কালো একটা প্যান্ট। আর স্বপ্নে যে স্যারকে দেখলাম তার সাথে মামুন স্যারের কোন মিল নেই! মামুন স্যারের একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল। সেমিস্টার শেষে উনি একটা ফিডব্যাক নেয়ার ব্যবস্থা করলেন। আমাদের কাগজ দেয়া হল। আমরা লিখলাম। যেহেতু নাম দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না, আমাদের বন্ধু রানা এটার পুরো সদ্ব্যবহার করলো। সে কমেন্ট এ লিখল, ‘Sir, there is something in your eyes’! আমি রানার কাছেই বসে ছিলাম। আমি যখন এটা দেখলাম, কাগজ জমা দেয়ার পরে স্যার বের হয়ে যেতেই হাসিতে ফেটে পড়লাম!

 

আসল কথা কি জানেন? যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যত বয়স বেড়ে যাচ্ছে, ততই যেন পেছনের দিকে যাওয়ার জন্য মন তত বেশী আকুল হয়ে থাকে। এখন আমরা ক্লাস করি না ক্লাস নেই, পরীক্ষা দেই না পরীক্ষা নেই! ছাত্ররা মনে করে স্যাররা কত মজায় আছে! কিন্তু আসলে তা না। বারবার ঘুরে ফিরে সেই পেছনের দিনগুলোর কথাই মনে পড়ে। আবার ছাত্র হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবার সেই ভার্সিটির দিনগুলোতে ফিরে যাই। ক্যাম্পাসে আড্ডা দেই সেই সব বন্ধুদের সাথে যাদের সাথে চাইলেও এখন আর দেখা করতে পারি না। জীবন অনেক নিষ্ঠুর। না চাইলেও সামনে এগিয়ে নিয়েই যায়, কিন্তু শত হাহাকার করলেও এক পাও পিছনে ফিরতে দেয় না।     

View shawon1982's Full Portfolio