২২ ডিসেম্বর ২০১৯

শীতকাল মানেই হল আমার কাছে বারবার ফিরে আসে শৈশবের কিছু মজার মজার স্মৃতি। যখন স্কুলে পড়তাম, শীতকাল মানেই হল দাদু বা নানু বাড়ীতে যাওয়া। সেখানে অন্যান্য ফুফাতো মামাতো ভাই বোনদের সাথে দেখা হওয়া, জমজমাটা আড্ডা দেয়া, পিঠা খাওয়া, ভ্যানে করে ঘোরা আর কত কি! এখন সবাই যে যার সংসারে ব্যস্ত হয়ে গেছে। যারা তখন ছোট ছিল, তারাও এখন বিয়েশাদী করে এলাহী কারবার! একেকজন একেক জায়গায় থাকে। চাইলেও সেই আগের মত সবাইকে একসাথে পাই না পাবোও না। যে দিন গেছে সে দিন আর কখনই ফিরে আসবে না, স্মৃতির পাতায় উঁকি দেয়া ছাড়া। তাই আমার যেগুলো যখন মনে পরে, চেষ্টা করি লিখে রাখতে। হয়ত যখন স্মৃতিগুলোকেও একদিন ভুলে যাব, তখন এগুলো পড়লে যদি আবার কিছু মনে পড়ে। আমার এই লেখাগুলোর শিরোনামে ‘অভিধান’ শব্দটি আছে। অভিধানে যেমন শব্দ খুঁজলেই পাওয়া যায়, তেমনি আমার লেখাগুলো পড়লে আমাকে পাওয়া যাবে। আমি নিজেকে আমার লেখাগুলোর মধ্যে একটু একটু করে মিশিয়ে দিই।

 

ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দাদুবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের কথা। অন্যান্য ফুফুরাও বেড়াতে এসেছিলেন তাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে। পুরো দাদুবাড়ী একেবারে রমরমা অবস্থা। আমার বয়সী এক ফুফাতো ভাই ছিল সুমন। সুমন আমার চেয়ে বছর খানেকের বড় হবে। ওর সাথে সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম আর উদ্ভট সব কান্ড করতাম। সুমনের কাছ থেকে প্রথম শিখলাম যে, নিমের ফল খাওয়া যায় এবং খেতে বেশ ভালই লাগে। দাদু বাড়ীর পাশের মসজিদেই একটা নিমগাছ তখন ছিল। ওটার নিচে পাকা পাকা নিমফল পড়ে থাকতো, সেগুলা কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেতাম। মুখে দিয়ে চুষতাম। মসজিদের সামনেই ছিল বেশ বড় একটা বেতঝাড়। সেখানে থোকা থোকা বেতফল ঝুলে ছিল। সাদা সাদা থোকা থোকা বেতফল! দেখতে যে কি সুন্দর লাগতো! মনে হত যেন বরফের কতগুলা টুকরা গাছে ঝুলে আছে। যারা বেতফল খেয়েছেন তারা জানেন এটি খেতে একটু কস্টা কস্টা আর টক টক, কিন্তু এটা লবণ মরিচ দিয়ে ঝামিয়ে মাখিয়ে খেতে দারুণ মজা।

 

সুমন কোত্থেকে একটা ব্লেড নিয়ে আসলো। আমি বললাম, ব্লেড দিয়ে কি হবে? ও বলল, এইটা দিয়ে আগে বেতের শীষ কাটবো, পরে সেটা দিয়ে করাত বানায়ে কলাগাছ কাঁটা হবে। পরে সেই কলাগাছ নিয়ে সোজা নদীতে ভেসে থাকার খেলা হবে। আমি রীতিমত থ্রিল বোধ করতে লাগলাম। বেতঝাড় অনেক বড় ছিল। দেখলে মনে হয় সাপটাপ আছে হয়ত। আসলে ওসব কিছুই ছিলনা। সুমন আমাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বেতের ঝাড়ের ভেতর ঢুকে গেল। ব্লেড দিয়ে কয়েকটা লম্বা লম্বা বেতের শীষ কেটে আনলো। যার সবদিকেই কাঁটা ছিল, আমার হাতে দিল কয়টা। বললো, চল এবার কলাগাছ কাটি। রাস্তার পাশেই কলাগাছের অভাব ছিল না। আমরা দুইজন বেতের শীষের দুইদিকে ধরে, পোঁচ দিয়ে দিয়ে কলাগাছ কাঁটতে লাগলাম। সুমনের সে কি উৎসাহ! হেইও হেইও বলে কলাগাছ কাটতে লাগলাম দুইজন মিলে। পনেরো বিশ মিনিটের মাথায় দুইটা কলাগাছ ধরাশায়ী করে ফেললাম। এর পরের মিশন ছিল নদীতে কলাগাছ নিয়ে ভেসে থাকা। আমি সাঁতার পারি না, আজও পারি না। সুমন কলাগাছ কেটেছিল আমার জন্য। ও নিজে সাঁতার পারে খুব ভালমত। এরপরে সেই কলাগাছ নিয়ে দুইজন চলে গেলাম বারাশিয়া নদীতে। নদীটা এখন মৃতপ্রায়। তখন ভালই পানি ছিল। আমরা দুইজন কলাগাছ নিয়ে গেসে থাকার খেলা খেললাম অনেক্ষণ।

 

বিকালের দিকে সুমন বললো, আসো ‘ক্যাঁচকোচ’ বানাই! আমি বললাম সে আবার কি? ও বলল, পাটকাঠি দিয়ে বানায়। সেটা থেকে ক্যাঁচকোচ শব্দ বের করা হবে। সুমন কোথা থেকে একটা দা জোগাড় করে আনলো। স্বাস্থ্যবান দেখে দুইটা পাটিকাঠি নিয়ে মাঝবরাবর আধাআধি চিরে ফেললো। এরপরে দুইটার চেরা অংশ x এর মত করে অনেকটা কেঁচির মত একটার সাথে আরেকটা প্রবেশ করিয়ে মাথা রশি দিয়ে আটকে দিল। এরপর দুই পাটকাঠির সংযোগ স্থলে একটি কেরসিন তেল লাগিয়ে দিলো। এরপর দুইটা কাঠিকে নিচের অংশ ধরে নাড়াতেই গা শিরশিরানো ক্যাঁচকোচ শব্দ হতে লাগলো। হয়ে গেল আমাদের তৈরী একটা খেলনা। সেটা দিয়ে ক্যাঁচকোচ শব্দ করতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম পরবর্তীতে আর কি কি করা যেতে পারে। শহরে থাকলেও যখনই গ্রামে যেতাম, এমন কিছু কিছু মজার ঘটনা ঘটতো। কাজিনদের সাথে কত ধরণের খেলাধুলা করতাম। আফসোস করেও শেষ করা যাবে না, এমন একটা শৈশব আমরা আমাদের প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারছি না।

View shawon1982's Full Portfolio
bishu's picture

Daroon hoyeche lekha

Daroon   !!!


©bishu 

 

shawon1982's picture

great dada!

dada thank you so much that you read my writings regularly. thanks for being so nice to me dada! Cool


Dr. Zayed Bin Zakir Shawon