১২ ডিসেম্বর ২০১৯

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে আমরা অনেকেই প্রায়শই ভুলে যাই বা হয়ত অন্যের অবদান মনে রাখতে চাই না। এ থেকে জীবনে অনেক ধরণের জটিলতা তৈরী হয়। আমরা ভুলে যাই, আমাদের জীবনে যত ধরনের জটিলতা তৈরী হয় তার বেশীরভাগই আমরা নিজেরা হাতে ধরে নিজেরাই তৈরী করি। কেউ কেউ আবার ইচ্ছাকৃত এসব জটিলতা তৈরী করে এক ধরণের বিজাতীয় আনন্দ লাভ করে। আমাদের আশে পাশে প্রতিনিয়তই আমরা এমন সব মানুষজন দেখতে পাই যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য অতি সহজেই অতীতকে ভুলে যায়। ভুলে যায় যে তাদের অতীতে অন্য কারো কোন অবদান ছিল। মুখের উপর এই জাতীয় কথা বলে দেয়া খুব সোজা, ‘কি করেছো তুমি’? এখন আমাকে কেউ এজাতীয় কথা বললে, আমিও পালটা বলে দিতে চাই, ‘কিছু করি নাই, আর ভবিষ্যতেও করতে চাই না’। বর্তমানে বসে, ভবিষ্যতের চশমা চোখে দিয়ে অতীতকে ভুলে যাওয়া খুব সহজ। অতীতকে সহজে টেনে আনা যায় না যে। সে থাকে নীরবে নিভৃতে। অতীতে যারা ভুক্তভোগী থাকে, তারাই শুধু মনে রাখে তাদের জ্বলন্ত অতীতকে। অতীতে যে শুধু তিক্ততাই থাকে তা নয়। অনেক মধুর স্মৃতিও থাকে। যেগুলো মনে পড়লে, সেইসব মানুষগুলো মহানুভবতার কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য সেই মানুষগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ছোট ছোট ঘটনা কত ঘটে যেগুলো মনে দাগ কেটে বসে যায়। এমন এক মূহুর্তের একটা ঘটনা বলছি। অনেকের কাছেই খুব সামান্য হতে পারে কিন্তু ঘটনাটা আমার বেশ মনে আছে।

 

Techno Edge’ নাম ছিল আমাদের এঞ্জিনিয়ারিং ক্যান্টিনের যখন সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। একদিন দুপুরে খেতে যেতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। মনে হয় সেটা ২০০৯ সালের দিকের ঘটনা হবে। সেদিন কোন একটা মিটিং ছিল প্রফেসরের সাথে। মিটিং শেষ করে খেতে গেলাম ক্যান্টিনে। অল্প কয়েকজন খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল লাইনে বিভিন্ন দোকানে। খাবারের দোকানগুলোর একদম শেষের এক কোনার একটা দোকান ছিল মালেশিয়ান খাবারের। ঐ দোকানটা ‘হালাল’ খাবার এর দোকান হিসেবে পরিচিত ছিল। দেখলাম দুইজন চাইনিজ স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দোকানের খাবার প্রায় শেষ পর্যায়ের ছিল। প্রথমজন খাবার নিয়ে চলে গেল। আমার ঠিক সামনে চাইনিজ যে ছেলেটা দাঁড়ানো ছিল, সে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখতে পেল। আমার পাঞ্জাবি পরা এবং মুখে দাঁড়ি দেখে বুঝতে পেরেছিল আমি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হব। মুরগির মাংস দোকানে মাত্র আর এক পিস ই বাকী ছিল। কারণ আমার যেতে প্রায় বিকাল হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটা চট করে লাইন থেকে সরে এসে যে ইংরেজীতে আমাকে যে কথাগুলা বলেছিল তা হল, ‘you please take the food. I know you need halal food. I can buy food from other shops’। (বঙ্গানুবাদঃ ‘তুমি এই খাবারটা নিয়ে নাও। আমি জানি তোমার হালাল খাবার দরকার। আমি তো অন্য দোকান থেকেও খাবার কিনতে পারবো)।

 

ছেলেটা এই কথা বলে মুচকি হাসি দিয়ে পাশের এক দোকানে সরে চলে গেল। আমি শুকনা মুখে ছেলেটাকে একটা থ্যাঙ্কস বললাম। মন থেকে ছেলেটার জন্য দোয়া বের হয়ে এসেছিল, আল্লাহ! এই ছেলে আমার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নিজের ভাগ ছেড়ে চলে গেল। তুমি এই ছেলের সর্বত কল্যান করো। এখনও মনে পড়ে সেই ছেলেটার কথা। নাম ধাম চেহারা কিছুই জানি না। কিসে পড়তো তাও জানি না। কিন্তু অজানা সে চাইনিজ ছেলেটার কথা আমার যখনই মনে পড়ে তখনই আমি তার জন্য দোয়া করি। ছেলেটা জীবনে সুখী হোক। ভাল থাকুক।  

View shawon1982's Full Portfolio