ছুটির দিনগুলো কেমন যেন উড়ে উড়ে চলে যায়। কিছুতেই ধরে রাখা যায় না। ব্যস্ত জীবনে একটু ছুটির জন্য মন কেমন যেন হাঁসফাঁস করতে থাকে। ছুটির দিনগুলোতে মনে হয় একটু স্বস্তির সাথে দম নেয়া যাবে। আর কিছু না করলেও মনে হয় সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকি। পরিবারের সাথে সময় দেই। আত্মীয় স্বজনের বাসায় মাঝে মাঝে যাওয়া হয়। অনেক সময় দাওয়াত থাকে। কখনও বা খুব অল্প সময়ের জন্য মনে হয় কোথাও থেকে ঘুরে আসি। আসলে এ সবকিছুই দৈনন্দিন জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে সাময়িক মুক্তি লাভের একটু প্রয়াস মাত্র। আমার বন্ধুদের কাউকে যখন বলতে শুনি সপ্তাহে মাত্র একদিন ছুটি পায়, তখন আমার ভীষণ খারাপ লাগে। আহারে! মাত্র একদিন? একটু ঘুমাবে না একটু বিশ্রাম নেবে? আমি সেই হিসাবে অনেক ভাল অবস্থানে আছি। অন্তত এখন পর্যন্ত। দুইদিন করে ছুটি পাচ্ছি। পরিশ্রমে ডুবে থাকার সপ্তাহগুলোতে যখন ছুটির দিনগুলো এগিয়ে আসে, তখন মন এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। ছুটি আসার আগের সময়গুলো, কি করবো না করবো, সেই যে পরিকল্পনাগুলো, ওগুলোই মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ছুটির দিন আসার আগেই এর জন্য যে জল্পনা কল্পনা চলে, সেটির আনন্দ তুলনাহীন।
আমার বহু আকাঙ্ক্ষিত ছুটিগুলোকে আমি আমার নিজের মত করে সাজিয়ে নেই। সকাল শুরু হয় আরামদায়ক আলস্য দিয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ছুটির দিনেও মাঝে মাঝে ভোর বেলাতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। সারা সপ্তাহের অভ্যাস যে! দেখা যায়, উঠে মনকে প্রবোধ দেই, আজ তো ছুটি। আবার ঘুমুতে চেষ্টা করি। ঘুম এসে গেলে ভাল, আর না আসলে বিছানা থেকে উঠে পড়ি। হাতে তুলে নেই কোন একটা উপন্যাস। ছুটির দিনে উপন্যাস পড়া আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটা। দেখা যায় কেউ হয়ত ঘুম থেকে উঠেনি, কিন্তু আমি একা একা উপন্যাসে ডুবে আছি। ওভেনে পানি গরম করে ঢাউস সাইজের মগে করে এক মগ ভর্তি করে কফি বানিয়ে নিয়ে বসি। হাতে সুবাসিত ধোঁয়া ওঠা কফির মগ আর সেই সাথে অপঠিত কোন উপন্যাস। এমন সময় কম্পিউটারে অথবা মোবাইল ফোনে ছেড়ে দেই কোন ধরণের যন্ত্রসংগীত। যেমন পিয়ানো বা গিটারের হাল্কা ধাঁচের কোন মিউজিক। ছুটির দিনে এটি আমার ভীষণ আরাধ্য একটা কাজ। মিউজিক, কফি আর সেই সাথে উপন্যাস! আমি নিমগ্ন হয়ে যাই এক অজানা স্বপ্নের ভুবনে। উপন্যাসের জগতে বিচরণ করতে করতে আমি যেন ভুলে যাই আমার নিজের পরিমন্ডলের সমস্ত ব্যস্ততা।
ছুটির দিনগুলোতে ভালমন্দ খেতেও ভালবাসি। আম্মু থাকলে আম্মুকে বলি পছন্দের কোন খাবার রান্না করতে। আমার খুব প্রিয় একটা খাবার হল, ভাতের ভেতর ভাপে ইলিশ মাছ আর শাক ভর্তা। এটি আম্মু থাকলে করা হয়। পরিবারের সবাই মিলে মজা করে খাই। না হলে কমপক্ষে খিচুড়ি তো খেতেই হবে। মাঝে মাঝে খিচুড়ি আমি নিজেও রান্না করি। রান্না করতে আমার ভালই লাগে। তবে কাউকে অবশ্যই মশলাগুলো রেডী করে দিতে হবে এই আর কি! খিচুড়ির সাথে ডিম ভাজা চাই! সেই সাথে আমি বেশী করে পেয়াজ কুঁচি, রসুন কুঁচি আর শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে একসাথে চটকে একটা ভর্তা বানাই। আমাদের বাসার মোটামুটি সবাই খিচুড়ীর সাথে এই ভর্তাটি খেতে পছন্দ করে। আমি অবশ্য ঝালের পরিমাণ অনেক নেই। ঝাল ঝাল না হলে আমার আবার ঠিক জমে না।
যদি বাইরে কোথাও যাবার প্ল্যান না থাকে, তাহলে আমি আমার স্ত্রী-সন্তান এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে নাটক, টেলিফিল্ম বা সিনেমা দেখতে পছন্দ করি। অবশ্য কি দেখবো না দেখবো তা নিয়ে ওদের সাথে আমার বেশ খানিক তর্কাতর্কি চলতে থাকে। কারণ ওদের ধারণা মতে আমার পছন্দ নাকি মান্ধাতার আমলের। যাই হোক যেটাই নির্ধারিত হোক না কেন, সবাই মিলে একসাথে সময় কাটাতে পারা যায়, সেটাই বা কম কি? সিনেমা বেশীরভাগ সময়ই ইন্টারনেট এ দেখা হয়। কাজেই সিনেমার মাঝখানে মাঝখানে চা পানীয় চলতে থাকে। আমি আমার মত করে কফি বানিয়ে নেই। বাসার সবাই হাল্কা নাস্তা করে। এভাবেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে যায়। রাত হয়ে গেলে শুয়ে পড়ি কিন্তু মনটা থাকে আনন্দে ভরে। একটা ছুটির দিন ভালই কেটে গেল সেটা ভেবে। পরেরদিন যদি আবারো ছুটি থাকে, তাহলে রাতে দেরী করে ঘুমাই। এভাবে দিন আসে দিন যায়। আমাদের জীবন চলতে থাকে তার নিজস্ব স্বকীয়তায়। কাজের পরে বহু আখাঙ্খিত ছুটির প্রতীক্ষায়।