আজকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনলাম তাদের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা। তাদের নিজস্ব কিছু ভাবনার কথা। একজন মুক্তিযোদ্ধা (বীর বিক্রম) কথার শেষভাগে বললেন, ‘আমি জানতে চাই দেশপ্রেম কাকে বলে? এদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই সবাই মেয়েদের ধর্ষণের প্রসঙ্গে বলে। এদেশের মেয়েরা কি শুধু ধর্ষিতাই হয়েছে? তারা কি যুদ্ধ করে নাই? তাদের কথা ইতিহাস বলে না কেন?” এরপর উনি বললেন একজন মেয়ের দেশপ্রেমের কথা। আমি উনার বলা কথাগুলকেই লেখার চেষ্টা করছি। না হলে হয়ত আমিও ভুলে যাব।
দু’জন মুক্তিযোদ্ধা হেটে আসছিলেন এক গ্রামের ভেতর দিয়ে। এমন সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। ঐ দু’জন মুক্তিযোদ্ধা উপায় না দেখে নিকটের এক কচুরীপানা ভর্তি পুকুরে ঝাপ দিয়ে পড়ে নিজদের লুকিয়ে ফেলে পানির ভেতরে। পুকুরের পাড়ে একজন মেয়ে কাপড় কাঁচছিল। দু’জন মানুষ পুকুরে ঝাপ দিলে পানিতে আলোড়ন হয় আর সেজন্য কচুরিপানাও দুলতে থাকে। এতে সহজেই বোঝা যেত যে মুক্তিযোদ্ধা দু’জন কোথায় লুকিয়েছে। মেয়েটি হানাদার বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে, কাপড় কাঁচা বাদ দিয়ে পা দিয়ে পুকুরের পানি আরো বেশী করে আলোড়িত করতে থাকে। যেন মনে হয় মেয়েটির পায়ের দোলানিতেই কচুরীপানা নড়ছে। হানাদার বাহিনী মেয়েটিকে ঘিরে ফেলে। জিজ্ঞাসা করে মুক্তিবাহিনীর ওরা কোথায়। মেয়েটি কিছুই বলে না। পা দোলাতে থাকে। হানাদার বাহিনীর দু’জন মেয়েটিকে পেছন থেকে দুই হাত ধরে দাঁড় করায়। মেয়েটি গর্ভবতী ছিল। অন্য একজন বেয়নেট দিয়ে মেয়েটির পেট ফেড়ে ফেলে। পেটের বাচ্চাটিকে বের করে দুই পা দু’দিক দিয়ে টান দিয়ে দুই টুকরা করে ঐ পুকুরে ফেলে দেয়। মেয়েটিও মারা যায়”।
ঘটনা এইটুকুই। ইতিহাস সবকিছু লিখে রাখে না। মানুষ খুব সহজেই অনেক কিছু ভুলে যায়। আমি শুধু আমার নিজের একটুকরো উপলব্ধির কথা বলতে পারি। এতদিন দেশপ্রেমের যে সংজ্ঞা আমি জেনেছি, তা এই মেয়েটির দেশপ্রেমের কাছে নিতান্তই প্রহসন মনে হয়েছে।