ছেলেটির নাম স্বপ্ন। পড়ে নবম শ্রেণিতে। যে স্কুলে পড়ে সেটার নাম বড়ুরা হাজী নওয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটি কুমিল্লা জেলার বড়ুরা নামক স্থানে অবস্থিত। তার নামের সাথে তার ব্যক্তিত্বের মিল আছে প্রবল। স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসে সে এবং অবশ্যই তা জেগে জেগে! এই দিক থেকে বলা যায় যে সে অনেকটা জোসেফ কনরাডের বিখ্যাত উপন্যাস “লর্ড জিম”-এর প্রধান চরিত্র জিমের মত।
স্বপ্নের বাবা চাকরি করেন পুলিশ বিভাগে। বড়ুরা থানার ওসি মানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিনি। স্বপ্নরা থাকে থানার নির্দিষ্ট সরকারি কোয়ার্টারে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই খাওয়া দাওয়া করার পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, ঘুড়ী ওড়ানো, বড়শীতে পুকুর থেকে মাছ ধরা, কখনও মনের আনন্দে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটা, গাছের ডালে বসে থাকা, পাখীর বাচ্চা ধরার চেষ্টা ইত্যাদি তার দৈনন্দিন কাজের অংশ।
স্বপ্নরা যে বাসায় থাকে তার ঠিক পেছন দিয়ে একটা ছোট খাল সময়ের বোবা সাক্ষী হয়ে বয়ে চলেছে। এই খাল পার হলেই যে এলাকা শুরু হয় তাকে সাধারণ জনগন ‘উপজিলা’ বলেই ডাকে। থানায় খেলার মাঠ নেই। আছে একটা বিশাল পুকুর। পুকুরের পানি এত সবুজ যে মনে হয় যেন কেউ সবুজ রঙ ঢেলে দিয়েছে।
যাইহোক, ঐ উপজিলায় দুটি খেলার মাঠ আছে। স্বপ্ন এবং তার বন্ধুরা মিলে প্রতিদিন বিকেলে সেখানে খেলতে যায়। কখনও ফুটবল, কখনও ক্রিকেট খেলে। একদিন যথারীতি ফুটবল খেলছে, হঠাৎ স্বপ্নের চোখ পড়ে অসম্ভব রকম সুন্দরী একটা মেয়ের দিকে। মেয়েটি বয়সে তার চেয়ে তিন বা চার বছরের বড় হবে। মেয়েটিকে দেখলেই মায়া লাগে। মনেহয় যেন স্বর্গের অনিন্দ্য সুন্দরী এক পরী পথ ভুলে এখানে এসে হাজির হয়েছে। মেয়েটি আরও দু একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে হাঁটছে আর সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সবখানে।
একসময় ফুটবলটি মাঠের বাইরে চলে গেলে স্বপ্ন এক দৌড়ে সেটা আনতে যায়। ফিরবার পথে আবার মেয়েটিকে দেখে। সে অপলক তাকিয়েই থাকে। মেয়েটির টানা টানা স্নিগ্ধ চোখ দুটোও যেন এতক্ষন স্বপ্নকেই খুঁজছিল। মেয়েটির সামনে দিয়ে মাঠে প্রবেশ করার পথেই পেছন থেকে মেয়েটির সুমিষ্ট কণ্ঠ শুনতে পেল-
- এই শুনো!
স্বপ্ন নিজের কান দুটোকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা! সে উত্তরে বলে,
- আমাকে বলছেন?
- হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি।
ঐদিকে বন্ধুরা আবার খেলা শুরু করতে চায় তাই গলা চেঁচিয়ে স্বপ্নকে বল নিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে। স্বপ্ন বলটা সজোরে ওদের দিকে ছুড়ে দিয়ে আবার মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটির নিস্পাপ শিশুর মত হাসি দেখে মনে হয় যেন সময় এখানেই থেমে যাক আজ। তার শুধুই মনে হয় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকেই অনন্তকাল পার করে দিতে পারবে সে।
ফুটবল খেলার ফলে স্বপ্নের পুরো শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছিল তখনও। হৃদয়ের ধকধকানো যেন আগের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে গেছে; ঠিক তবলার আওয়াজের মত! সে নিঃশব্দে তাকিয়েই থাকে। মেয়েটি বলে,
- তোমার নাম কি রিয়াজ?
- না, আমার নাম স্বপ্ন।
এ কথা বলেই সে এক দৌড়ে আবার ফিরে গিয়ে খেলায় যোগ দেয়। বন্ধুরা এর মধ্যে তাকে আর মেয়েটিকে নিয়ে অনেক মশকরা করা শুরু করেছে। স্বপ্ন কিছুতেই তাদেরকে বোঝাতে পারছে না যে মেয়েটিকে সে চেনে না। হয়ত তারাও জানত যে সত্যিই সে মেয়েটিকে আগে কখনও দেখেনি কিন্তু ইচ্ছে করেই স্বপ্নকে বিব্রত করে মজা করছে।
রাতে স্বপ্নের এক ফোটাও ঘুম হয়নি। সারা রাত জুড়েই সে এ পাশ আর ও পাশ করেছে আর ঐ মেয়েটিকে নিয়ে ভেবেছে। তার হাসি, কথা বলার ধরন, চুলের খোপা- সবকিছুই তাকে কোনও এক রহস্যময় মায়ায় বেঁধে ফেলেছে। সে ভাবে, “এমনত আগে কখনই হয়নি?” “তবে কি এটাকেই প্রেম বলে?” মনেমনে একটু আফসোস হচ্ছে তার। সে মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেল?
সে ঠিক করে যে পরেরদিন যখন খেলতে যাবে তখন আবার দেখা হলে অবশ্যই নামটি জেনে নেবে। সে মেয়েদের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে বেশ লাজুক কিন্তু সে যথেষ্ট সাহস সঞ্ছয় করে নামটা জেনেই ছাড়বে।
তার বন্ধুরা যে যাই বলুক বা ভাবুক তাতে তার কিছুই আসে যায়না। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসছে সে। সকালে বিছানা ছেড়ে উঠার পরে স্কুলের পড়া পারবে কিনা, স্যার-এর বেতের আঘাত থেকে কিভাবে বাঁচবে এই চিন্তা না করে কখন স্কুল থেকে ফিরে উপজিলায় যাবে এই চিন্তায় মগ্ন সে!~
স্কুলে স্যার কোন ক্লাসে কি পড়াচ্ছে তাতে তার কোনও মনোযোগ নেই। তার চোখজুড়ে শুধু ঐ মেয়ের অবয়ব দৃশ্যমান। যথারীতি বাসায় ফিরে স্বপ্ন উপজিলায় যাবার জন্য ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করতে থাকে। কিছুই করতে ভাল লাগে না তার। মন যেন আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতেই থাকে পাখীর মত। উড়ছেই, কোনও বিরাম নেই!
যথাসময়ে ফুটবল খেলা শুরু হয়। আজ খেলায় স্বপ্নের একটুও মনোযোগ নেই। সে তেমন একটা পরিশ্রম করে খেলছেনা। অধীর অপেক্ষায় আছে কখন ঐ অপরুপা মেয়েটি আসবে আর তার দিকে তাকাবে? পারলে সে তার বাসাটাও চিনে নেবে। আজ অনেকক্ষণ খেলা চলে। আসল কথা হচ্ছে স্বপ্নের বন্ধুরা চলে যেতে চায় কিন্তু সে আরও একটু আরও একটু করতে করতে তাদেরকে মাঠে ব্যস্ত রাখে।
সে প্রায় নিশ্চিত যে আজ মেয়েটি হাঁটতে বের হবেই। সূর্য চাঁদকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নেয় ইতোমধ্যে। স্বপ্নের মনটা খুব খারাপ হয়েছে আজ। মাঠ ছেড়ে আসার সময় সে বারবার মাথা ঘুরিয়ে দেখছে মেয়েটি হাঁটাহাঁটি করছে কিনা। তার বন্ধুরা তার এই অবস্থা দেখে অবাক হচ্ছে। তারা বুঝতে পারছেনা স্বপ্ন বারবার পেছনে তাকাচ্ছে কেন? একজনতো জিজ্ঞেস করেই বসে তার এই অদ্ভুত চাওয়ার কারণ!
খেলোয়াড় কম। অনেকেই খেলতে যেতে চায় না। কিন্তু স্বপ্নের পীড়াপীড়িতে ঐ তিন চারজন যেতে বাধ্য হয়। খেলায় অন্যদিনের মত প্রাণ নেই বললেই চলে। রাস্তার দিকে তাকাতেই স্বপ্ন মেয়েটিকে দেখে। নীল রঙের একটা ড্রেস পরা। হাতে নীল চুড়ি, কানে নীল রঙের দুল। দুই ভ্রুর ঠিক মাঝখানে একটা ছোট নিল টিপ। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। তাকে সুন্দর বললে ভুল হবে, সে যেন সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে!
মাঠের পাশ দিয়ে যাবার সময় স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হেসেছে। হে, সে নিশ্চিত ঐ হাসিটা তাকে লক্ষ্য করেই। ঠিক ঐ সময় স্বপ্ন এই ইহজগতে নেই, সে যেন অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছে যেখানে সবকিছু সুন্দর। অনুভূতিগুলো অসাধারণ, যেখানে নেই কোনও ভয়। শুধুই আনন্দ আর আনন্দ!
স্বপ্নের জীবন আর আগের মত নেই। তার চিন্তায়, চেতনায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। সে যা ভাবছে তাই তার কাছে সঠিক মনে হচ্ছে। একবার ভেবেছে মাকে মেয়েটির ব্যাপারে জানাবে, পরে কি ভেবে যেন আর জানায়নি।
এরপর কয়েকদিন স্বপ্ন খেলতে যেতে পারেনি। শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। শরীর খারাপ এই জন্য তার মন খারাপ না, মেয়েটিকে অনেকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছে না এই চিন্তায় সে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সে সুধু মেয়েটিকে নিয়ে কল্পনা করতে ভালোবাসে। তার শুধুই মনে হয় মেয়েটি এসে যদি তার কপালে একবার হাত রাখে তবে তার সেরে উঠতে বেশি সময় লাগবেনা।
যাইহোক, ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠে। সে ভাবে হয়তো সেই মেয়েটির দোয়ায় সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে। তার আর অপেক্ষা সইছেনা। উপজিলায় যাবার জন্য অস্থির।
স্বপ্ন আজ শুধুই দর্শক। সে খেলছেনা কারণ শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে। মাঠের এক অংশে কিছুটা দেয়াল ঘেরা; দেয়ালের উপরে বসে সে একবার মাঠে তাকায়, একবার রাস্তায় তাকায়। তার আশায় গুড়েবালি। হঠাৎ সে একটা মেয়েকে মাঠের পাশ দিয়ে দৌড়ে যেতে দেখে। স্বপ্নের মনে পড়ে এই মেয়েটি ঐ নাম না জানা মেয়েটির সাথে হাঁটত। মেয়েটির বয়স তেরো হবে হয়তোবা। সে মেয়েটিকে ডাক দেয়,
- এই মেয়ে শুনো!
মেয়েটি না শুনার ভান করে চলে যেতে চাইল কিন্তু স্বপ্ন একটু করুণার সুরে বলাতে কেন জানি মেয়েটির তার জন্য একটু মায়া বোধ হয়। মেয়েটি তার কাছে যায় এবং বলে,
- কি?
- তোমার নাম কি?
- লজ্জাবতী, মেয়েটি ডান হাতের তর্জনীর নখ কামড়াতে কামড়াতে উত্তর দেয়।
স্বপ্ন ঐ মেয়েটির বর্ণনা দিয়ে তার নাম জানতে চায় কিন্তু মেয়েটি কোনওভাবেই নাম বলতে চায় না। স্বপ্ন একটু বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করে,
- নাম বললে কি হবে?
- জানি না, আমার ভয় লাগে। আমার আম্মু আমাকে মারবে।
স্বপ্ন বুঝতে পারে যে মেয়েটির কাছ থেকে নাম জানার চেষ্টা করা আর খড়ের গাঁদা থেকে সুঁই খোঁজা একই কথা। স্বপ্নের মাথায় তখন অন্য এক বুদ্ধি আসে। সে ভাবে যে একটা কার্ডে তার মনের অবস্থা এবং মেয়েটির প্রতি তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে লজ্জাবতীর মাধ্যমে মেয়েটির কাছে পাঠাবে।
আর কথা না বাড়িয়ে সে লজ্জাবতীকে চলে যেতে বলে বাজারের দিকে হাঁটা শুরু করে। কয়েকটা কার্ডের দোকান আছে সেখানে। দামের দিকে তাকিয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হবার মত অবস্থা। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিল কত টাকা আছে। বেশি না। মাত্র একশ পাঁচ টাকা।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা কার্ড খুবই পছন্দ হয়। দাম একশ টাকা। কার্ডটি খুললেই একটি মেয়ের কণ্ঠে ‘আই লাভ ইউ’ বাজতে থাকে। দোকান থেকে স্বপ্ন সরাসরি বাসায় চলে যায়। রুমে বসে একবার চোখ বন্ধ করে একবার কার্ডের দিকে তাকায়।
চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটির চেহারা ভেসে উঠে। কার্ডে কি কি লিখবে সেটার একটা খসড়া করে নেয়। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে “আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি; আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবনা” এই শব্দগুলো লিখবে। তাই করে সে। কার্ডের একদম নীচে একটা হৃদয়ের ছবি একে লিখে, “ইতি, স্বপ্ন”। পরে আবার ঐ হৃদয়ের ছবির ঠিক মাঝখানে লিখে- (স্বপ্ন + ?)।
পরদিনও মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু লজ্জাবতীকে দেখতে পেয়ে মন আনন্দে ভরে উঠে। স্বপ্ন মনে মনে ভাবে কমপক্ষে কার্ডটাতো পৌঁছানো যাবে। লজ্জাবতীকে ডেকে নিয়ে কার্ডটা দিয়ে বলে ঐ মেয়েটির হাতে দেবার জন্য। লজ্জাবতীর মুখ পাকা মরিচের মত লাল হয়ে গেছে। সে ভয় পাচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে।
- না বাবা, আমি এ কাজ করতে পারবনা। ঐ আপুর আম্মু জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।
- কাজটা করে দিলে এরকম মজার মজার আরও অনেক চকলেট পাবে।
অবশেষে লজ্জাবতীকে রাজি করানো যায়। স্বপ্ন তাকে এক্ষুনি এক দৌড়ে কার্ডটি দিয়ে আসতে বলে। মেয়েটি যাবার আগে আবার মনে করিয়ে দেয়,
- ভুলেও অন্য কাউকে দিওনা; তোমার ঐ আপুর হাতেই দিও কিন্তু।
মেয়েটি কিছু না বলেই কার্ড নিয়ে দৌড় দেয়। স্বপ্ন এমনিতে সাহসী, কিন্তু এখন তার হাত পা কাঁপা শুরু হয়েছে। সে ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে আল্লাহর নাম নিতে থাকে বারবার। তার শুধু মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটির মা বিষয়টা বুঝে ফেলবে। সে কোনওমতেই এই ভয়টাকে মাথা থেকে তাড়াতে পারছেনা।
পরদিন স্কুল থেকে ফিরে বাসায় আসার পর স্বপ্নের মা তাকে তার স্বপ্নের পৃথিবী থেকে কানে ধরে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনে। মায়ের হাতে সেই কার্ডটা ধরা যেটা লজ্জাবতীকে দিয়েছিল ঐ মেয়েটিকে দেবার জন্য। মা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, “এটা কি?” স্বপ্নের মুখ ফুটে কোনও শব্দ বের হচ্ছে না।
যেন সে কথা বলাই ভুলে গেছে! লজ্জায় তার মনে হয় মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে। মা তার ডান গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়। স্বপ্নের চোখ দুটো পানিতে টলমল করতে থাকে। সে তার রুমে গিয়ে কাপড় পাল্টে খাটে শুয়ে পড়ে। খাবার সময় মা তাকে অনেক ডাকে কিন্তু সে খাবেনা বলে দরজা বন্ধ করে দেয়।
পরদিন উপজিলায় গিয়ে লজ্জাবতীকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে যে মেয়েটির মা দরজা খুলে কার্ডটি হাতে দেখে নিজের হাতে নিয়ে দেখার পর তাকে সজোরে ধমক দিয়ে যার কার্ড তাকে দিয়ে আসার জন্য বলেছে। তাই সে অনেক কষ্টে স্বপ্নের বাসা খুঁজে কার্ডটি পৌঁছে দিয়েছে। স্বপ্ন চিন্তা করে কাকে দোষ দিবে? এই ছোট মেয়েটিকে? ঐ মেয়েটির মাকে? তার নিজের মাকে? নিজেকে? নাকি নিজের দুর্ভাগ্যকে?
এরপর আর আগের মত আগ্রহ নিয়ে উপজিলায় যায়না স্বপ্ন। কেন জানি তার একটু অস্বস্তি লাগে। হয়তো সময় একদিন তাকে সব ভুলে যেতে সাহায্য করবে; হয়তোবা সে যাতে কখনও না ভুলতে পারে তার জন্য ‘সময়’ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে; কে জানে?
অনেকদিন পর সে লজ্জাবতীকে দেখতে পেয়ে ঐ মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করে। সে বলে যে তারা বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে। কোথায় সে জানেনা। এ কথা শুনার পর স্বপ্নের বুকে শূন্যতা ভর করে। সে আকাশের দিকে তাকায়। তার কপালে এক ফোঁটা পানি এসে পড়ে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সে বিষণ্ণ মনে হাঁটা শুরু করে। নিজেকে বড়ই একা মনে হচ্ছে। স্তব্ধ আকাশও যেন তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কাঁদছে আজ!