ক্রিকেটই জীবন! [Bangla Story]

জীবনের কাছে ক্রিকেট খেলাটা জীবনের মতইযেদিন তার বাবা আরিফুল হায়দার প্রথমবার জীবনের জন্য একটি ক্রিকেট ব্যাট কিনে আনেন, সেদিন থেকেই এটি তার কাছে হীরার টুকরার মতই মহা মূল্যবান একটি বস্তুতে পরিণত হয়েছে

 

আরিফুল আগে অনেকবার খেয়াল করেন যে যখনই টিভিতে ক্রিকেট খেলা শুরু হয় জীবন তখন শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলাটাই দেখতে চায়যদি তার বাবা কিংবা মা রিতা হায়দার তখন চ্যানেল পরিবর্তন করতে চায়, জীবন এমনভাবে চিৎকার জুড়ে দেয় যেন আশেপাশের দেয়ালগুলো তার ঐ ভয়ার্ত চিৎকারে ভেঙ্গে পড়বে!

 

বাবা মা কারো কথাই তখন জীবন শুনে নাএমন একগুঁয়েমির জন্য সে কতবার যে মায়ের বকুনি খেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! সে ক্রিকেটের এতই অন্ধভক্ত যে যখন তার গৃহ শিক্ষক তাকে পড়াতে আসেন, তখন যদি টিভিতে কোনও ক্রিকেট ম্যাচ চলতে থাকে, জীবনের মন তখন সেদিকেই পড়ে থাকেশিক্ষক তাকে কি পড়াচ্ছেন না পড়াচ্ছেন তাতে তার বিন্দুমাত্র মনোযোগ থাকে নাউলুবনে মুক্তো ছড়ানো যাকে বলে আর কি!

 

তবে বাবা আরিফুল জীবনের এই ছোটখাটো আবদার, দুষ্টামি, একগুঁয়েমি ইত্যাদিকে স্বাভাবিকভাবেই নেনতিনি মনে করেন যে নয় বছরের ছেলের ক্ষেত্রে এরকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একেবারেই সাধারণ একটি ব্যাপারযতই বয়স বাড়বে, ততই জীবন আরও অনেক বেশী বুঝতে শিখবেতার যত ছেলেমানুষি তা পুরনো দেয়ালের গা থেকে যেমন করে রং ঝরে পড়ে, ঠিক তেমনই ঝরে ঝরে পড়বে

 

কিন্তু রিতা জীবনের কিছু কিছু ব্যাপারকে বাড়াবাড়ি বলেই মনে করেএ নিয়ে মাঝে মাঝে স্বামী স্ত্রীর মাঝে উষ্ণ মান অভিমান চলেযাইহোক, বাবার কাছ থেকে পাওয়া ক্রিকেট ব্যাটটি জীবনের এতই পছন্দ হয়েছে যে সে যখনই তার রুমে একা থাকে তখন এক দৃষ্টিতে সেই ব্যাটটির দিকে তাকিয়ে থাকেযেন সেটি ব্যাট নয়, কোনও এক বিশ্ব সুন্দরী যাকে দু চোখ ভরে সে দেখে নিচ্ছে, যেন চোখ ফেরালেই সে জাদুর মত অদৃশ্য হয়ে যাবে

 

দিনে রাতে কতবার যে জীবন ব্যাটটা স্পর্শ করে, নাড়াচাড়া করে তার কোনও হিসেব নেই! তিন চার বছরের শিশুরা যেমন মোটরসাইকেলে বাবার সামনে বসে ঘুরে বেড়াতে স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করে, ঠিক তেমনই অনুভূতির স্বাদ জীবন গ্রহণ করে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমেএকজন রোগীর যেমন নিয়মিত ঔষধ না খেলে চলে না, ঠিক তেমনই জীবনের প্রতিদিন ক্রিকেট না খেললে চলে না

 

এমনও দিন গেছে যখন শরীরে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে জীবন ক্রিকেট খেলতে গেছেবর্ষা কাল শুরু হয়ে গেছেএই ঋতুটি তার দু চোখের বিষকারণ বৃষ্টি বাদলার দিনে সে বিকেলে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারে নাতবে যখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটা আকাশ থেকে পড়তে থাকে, তখন সে আশায় বুক বেধে ছাতা হাতে মাঠে যায় এই আশায় যে যদি ক্রিকেট খেলা যায়! কিন্তু যখন দেখে যে পাড়ার ছেলেরা মহানন্দে কর্দমাক্ত মাঠ জুড়ে ফুটবলের পেছনে দৌড়াচ্ছে তখন তার মন কাঁচের মত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়

 

জীবন তখন এতই দুঃখী হয় যে কিছুই করতে ইচ্ছে হয় নাকারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না ইত্যাদিএক কথায় ভুত যেমন মানুষের উপর ভর করে, তেমনই তার মধ্যে রাজ্যের নেতিবাচকতা ভর করে 

 

জীবন মনে মনে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করে যাতে বর্ষা কাল তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়দেখতে দেখতে বর্ষার আধিপত্য এই উপমহাদেশে ইংরেজদের আধিপত্যের মত ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকেযে সূর্য এত দিন মেঘের আড়ালে নববধূর মত মুখ আড়াল করতে বাধ্য হয়েছিল, সেই সূর্য আজ প্রচণ্ড প্রতাপের সাথে পুরো আকাশ এবং পৃথিবী শাসন করে বেড়াচ্ছে যেন!

 

জীবনের খুশীর বাধ যেন ভেঙ্গে গেছেসে তার পুরনো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছেযেন এত দিন কোনও ডাইনীর মন্ত্রের দ্বারা আবিষ্ট হয়ে সে নিস্প্রাণ হয়ে গিয়েছিলতার আনন্দের মিটার দ্বিগুণ বেড়ে যায় যখন সে তার বাসার বাইরের দেয়ালে একটি পোস্টার দেখতে পায়পোস্টারটি এ রকম- মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছেযারা যারা অংশ গ্রহণ করতে চান তাদেরকে ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের মধ্যে নিন্মে উল্লেখিত ঠিকানায় এসে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে

 

জীবন দ্রুত বাসায় ফিরে গিয়ে কাগজ আর কলম নিয়ে ফিরে আসেসে আনমনে হাসতে হাসতে ঠিকানা লিখে নিয়ে বাসায় ফিরবে এমন সময় তার প্রিয় বন্ধু জিসানকে দেখতে পায়জীবন বলে,

 

- জিসান, এই জিসান!

 

- আরে দোস্ত! দাড়া, আসছি

 

- কেমন আছিস?

 

- এইতো কোনোরকম আছি আর কি!

 

- তোর খবর বল

 

- এত দিন খারাপ ছিলাম, তবে এখন অনেক ভালো আছি

 

- খারাপ ছিলি মানে? অসুস্থ ছিলি নাকি

 

- আরে না না, অসুখ টসুখ কিছু নাসে অন্য বিষয়পরে বলবো

 

- আচ্ছা ঠিক আছেআমাকে ডাকলি কেন বলতো?

 

- এদিকে আয়, এই পোস্টারটা দেখ

 

- এই পোস্টার তো আমি গতকালই দেখেছি

 

- আমরা যারা নিয়মিত ক্রিকেট খেলি, আমরা কি একটি দল নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারি না?

 

- তা তুই ঠিকই বলেছিসসত্যি কথা বলতে কি আমারও এই রকম ইচ্ছে ছিল

 

- তাহলে আর দেরী কেন? আজ বিকেলে মাঠে চলে আয়; যারা যারা উপস্থিত থাকবে তাদেরকে বিষয়টা জানানো যাবেসকলের সম্মতি পেলে একটি দল গঠন করে প্র্যাকটিস শুরু করে দেবো, কি বলিস?

 

- ঠিক আছে, আমি তিনটার দিকেই মাঠে চলে যাবোরাফি, আদনান এবং জায়েদকেও ফোনে বলে দেবো যাতে অবশ্যই আজকে মাঠে যায়তুই অন্যদের জানিয়ে দিতে পারবি না?

 

- হ্যাঁ পারবো

 

- তাহলে এখন যাই দোস্তমা দোকান থেকে চাল কিনে আনতে পাঠিয়েছেদেখা হবে

 

- ঠিক আছে যা

 

        জীবনে কোনও কাজের শুরুটা হয়ে গেলে শেষ হতে বেশী সময় লাগে নাশুরুটাই খুব গুরুত্বপূর্ণবাসায় ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে জীবন চোখ বন্ধ করে স্বপ্নের রাজ্যে চলে যায়তার মনে হচ্ছে সে যেন প্রতিযোগিতাটা জিতেই গেছে! সে কল্পনা করছে যে সে ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে এগিয়ে গিয়ে জয়ী দলের পক্ষে প্রথম পুরস্কারটি হাতে নিয়ে আকাশের দিকে উঁচু করে ইয়েস, ইয়েস বলে চিৎকার দিচ্ছেএমন সময় তার দরজায় কেউ ধাক্কা দেয়জীবন কে বলতেই মা বলেনখেতে আয় তাড়াতাড়ি

 

        দ্রুতগতির বিমানের মত বেগে খাওয়া শেষ করে জীবন উঠে চলে যায়ইতোমধ্যে আড়াইটা বেজে গেছেতিনটার সময় সবাই মাঠে থাকবেযত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছতে হবে

 

        জীবন ৩ টা ১০ মিনিটে মাঠে গিয়ে উপস্থিততার মনে হয়েছে সে হয়তো একটু দেরী করে ফেলেছে কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখে মাঠ সফদার ডাক্তারের মাথার টাকের মতই ফাঁকা! কিছুক্ষণ পরে জিসানসহ অন্যরাও একে একে আসতে থাকে

 

        জীবন আসন্ন টুর্নামেন্ট সম্পর্কে সবাইকে বুঝিয়ে বলে এবং সেখানে অংশ নেবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেএ প্রস্তাবে সকলেই একবাক্যে রাজী হয়ে যায়সত্যি কথা বলতে কি এখানে কারো অনীহা থাকার প্রশ্নই আসে না কারণ সকলেই ক্রিকেটের জন্য পাগল!

 

        জীবন কে কে ক্যাপ্টেন হতে আগ্রহী জানতে চাইলে সর্বমোট পাঁচজন তাদের সম্মতির কথা জানায়পাঁচজনের মধ্যে জীবন অন্যতমযাইহোক সর্বমোট ১৮ জন খেলোয়াড়ের উপস্থিতিতে ভোটের মাধ্যমে জীবনকে দলীয় ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত করা হয়

 

        বলাই বাহুল্য যে ক্যাপ্টেন হবার কারণে জীবন অনেক অনেক আনন্দিতহাতে যেহেতু সময় খুব বেশী নেই তাই পরদিন থেকেই সিরিয়াসভাবে মাঠে প্র্যাকটিস চলতে থাকেঅতঃপর টুর্নামেন্টও শুরু হয়ে যায়জীবনের চমৎকার এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে তার দল সিঁড়ির মত তড়তড় করে উপরে উঠতে থাকেএক পর্যায়ে তার দল ফাইনালে যাবার সৌভাগ্যও অর্জন করে

 

        ফাইনালের প্রতিপক্ষ খুবই শক্ততাদেরকে হারানো কোনও ছেলে খেলা নয়দলীয়ভাবে সবার চমৎকার পারফর্মেন্সই পারে প্রত্যাশিত জয় এনে দিতেযথারীতি ফাইনালের দিন খেলার মাঠে দু পক্ষে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অনুষ্ঠিত হয়শেষ পর্যন্ত ভাগ্য জীবনের দলের দিকেই সুপ্রসন্ন হয়জীবন বাসায় বসে যে কল্পনা করেছিল জয়ের পুরস্কার হাতে নিয়ে উপরে তুলে চিৎকার দেবার, সে কল্পনা আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছেআজ সম্ভবত পৃথিবীতে জীবনের চেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ নেই!

 

        মাঠে ট্রফিসহ সকলের প্রচুর ছবি তোলার পর জীবন তার দল নিয়ে আনন্দ মিছিল নিয়ে বাসার দিকে ফিরতে থাকেযেহেতু জীবন ক্যাপ্টেন, তাই ট্রফিটা সে তার বাসাতেই নিয়ে যায়সে যেন আজ রাজা! যেন সে যা খুশী করতে পারবেতার এই অর্জন যেন তাকে স্বেচ্ছাচার হবার বৈধতা এনে দিয়েছেএ স্বেচ্ছাচারিতায় অহংকার মেশানো নেই, কিন্তু গর্ব আছে অবশ্যই

 

        জীবন তার মার হাতে ট্রফিটা দিয়ে আবেগে আত্মহারা হয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরেমাও ছেলের এই অর্জনে গর্বিত বোধ করেনজীবন অপেক্ষা করে যে বাবা কখন অফিস থেকে বাসায় আসবে? কখন সে ওনাকেও চমকে দেবে?

 

        অন্যদিন আরিফুল রাত ৭ টা অথবা ৮ টার দিকেই বাসায় ফিরে আসেনআজ ফোনে রিতাকে বলেছেন যে আসতে একটু দেরী হবেতিনি আসতে আসতে ১০.৩০ বেজে গেছেততক্ষণে জীবন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেআজ মাঠে খেলায় অনেক ধকল গেছে; সে খুব ক্লান্ত বোধ করছিল, তাই শোবার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেছেরিতা ছেলের অর্জন সম্পর্কে আরিফুলকে বলতে গিয়েও বলেননিতিনি জীবনকে ডাকতে যানকিন্তু তার ঘরে গিয়ে দেখেন যে সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে! জীবন মশারীটাও টানায়নিরিতা মশারিটা টানিয়ে দিয়ে চলে আসেনতিনি মনে মনে ভাবেন যে জীবন সকালে উঠে নিজেই তার বাবাকে বিষয়টা সম্পর্কে বললে ভালো হবেতিনি নিজে এখন বলতে গেলে সকালে জীবন খুব রাগ করতে পারেকারণ তার বাবাকে সারপ্রাইজ দেবার ইচ্ছে আছে নিশ্চয়ই

 

        জীবন সকালে উঠতে উঠতে ১১ টা বাজিয়েছেঘুম থেকে উঠে হাত মুখ না ধুয়েই সে তার বাবার খোঁজ করেছেরিতা বলেছেন যে তোর বাবা অনেক সকালে বের হয়ে গেছেনএ কথা শুনে জীবনের মনটা একটু খারাপ হয়েছেবাথরুমে ব্রাশ করতে করতে একবার ভাবে যে বাবাকে ফোন দিয়ে আনন্দের সংবাদটা দিবে কি নাপরে চিন্তা করে যে সামনাসামনি দিলেই বরং অনেক ভালো হবে

 

        জীবন বিকেলে ব্যাট নিয়ে রাস্তা পার হয়ে মাঠের দিকে যাবার সময় প্রেতাত্মার মত একটি ট্রাক এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়সৌভাগ্যবশত সে ট্রাকের নিচে পড়েনিপ্রচণ্ড ধাক্কায় সে কয়েক গজ দূরে ছিটকে পড়েআশেপাশের কিছু মানুষের সহায়তা না পেলে জীবন মারাই যেত

 

        হাসপাতালের বিছানায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে জীবন নামের চঞ্চল কিন্তু ভালো মনের ছেলেটিতার নাম জীবন হলেও এখন, এই মুহূর্তে তাকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছেকেউ জানে না কে জয়ী হবে অবশেষেতবে তার বাবা মা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধবের দোয়ায় এবং আল্লাহ্‌ পাকের অশেষ করুণায় জীবন তার হুঁশ ফিরে পায়

 

        ডাক্তাররা অনেকক্ষণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর আরেকটি দুঃসংবাদ দেনসেটি হচ্ছে যে জীবনের একটি পা কেটে বাদ দিতে হবেএ কথা শুনে জীবনের বাবা মা এতটাই মর্মাহত হয়েছেন যে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভবআরিফুল একজন ডাক্তারকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেন, আর কি কোনও উপায় নেই; ডাক্তার উত্তরে না বলার সাথে আরিফুলের মনে হয় যেন শত শত সাপ ওনার দুই পায়ে অনবরত দংশন করেই যাচ্ছে

 

        এত বড় দুর্ঘটনার পরেও ছেলে বেঁচে আছে এটা ভেবেই বাবা মা কিছুটা সান্ত্বনা বোধ করছেনএকটি পা না থাকলেও ওনাদের যক্ষের ধন তো ওনাদের কাছেই থাকবেনধীরে ধীরে জীবন সুস্থ হয় ঠিকই, কিন্তু তার এক পা না থাকাটা যেন শরীরে কোনও অমোচনীয় দাগের মত তার জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনই

 

        জীবনের সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয় যখন সে বারান্দায় বসে দেখে তার বন্ধুরা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে যাচ্ছেতখন তার চোখ বেয়ে পাহাড়ি ঝরনার মত পানি বইতেই থাকেএখন সে আর টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য আগের মত ছেলেমানুষি করে না

 

        একদিন জীবনের বন্ধুরা হঠাৎ তার বাসায় আসেকারণ জানতে চাইলে তারা বলে যে তাকে তাদের সাথে মাঠে যেতে হবেজীবন যাবে না বলতেই তারা আঠার মত লেগে থাকেভাবটা এমন যে তাকে আজ মাঠে নিয়েই যাবে

 

        অগত্যা কোনও উপায় না দেখে জীবন যেতে রাজী হয়নিচে তার জন্য একটি ট্যাক্সি রাখা ছিলমাঠে পৌঁছেই জীবনের চোখ কপালে উঠে যায়মাঠের মাঝখানে দুটো দল উপস্থিতখেলোয়াড়দেরকে আম্পায়ার কিছু প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেনজীবনকে দেখে তার পুরনো বন্ধুরা দৌড়ে তার কাছে এসে তাকে কোলে তুলে মাঠের সেই অংশে নিয়ে যায় যেখানে একটি বিশাল ব্যানার টানানোব্যানারটির লেখাগুলো দূর থেকে ঠিক বোঝা যায়নিজীবন যতই ব্যানারটির দিকে অগ্রসর হয়, ততই লেখাগুলো স্বচ্ছ পানির মত পরিস্কার হতে থাকে

 

        ব্যানারটিতে বড় বড় হরফে লেখা, জীবন হায়দার গোল্ড কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টজীবনকে তার জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসিয়ে দেয়ার পর সে কাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে নাসে আশ্চর্য হয়েছে ঠিকই, পাশাপাশি তার ভেতরে একধরণের ভালোলাগাও কাজ করেছেসে নিজেকে আজ অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছে কিন্তু পরক্ষণেই সে ভাবে, এ সম্মান পাবার জন্য সে কি আসলেই যোগ্য? এটা তার প্রতি অন্যদের করুণার বহিঃপ্রকাশ নয়তো?    

 

        জীবন যেন আজ সকলের মধ্যমণি! সবাই হাসিমুখে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেঠিক সেই মুহূর্তে তার মনে হয় যেন সে হারানো পা ফিরে পেয়েছে! যেন তার ক্রিকেট ব্যাট তাকে জীবন, জীবন বলে ডাকছে আর বলছে, তোমার হাতের স্পর্শেই আমার মুক্তিআমায় তুমি মুক্ত করো!

View kingofwords's Full Portfolio