কথায় আছে, “অভাবে স্বভাব নষ্ট!” তবে তা সবক্ষেত্রে নয়। যেমন পিতামাতা হারা এতিম সালমা অসহনীয় অভাব দেখেছে ঠিকই; ঝড়ের মতন কষ্ট প্রতিনিয়ত তার মাথার উপর বয়ে গেছে প্রতিদিন। তবুও সে সাহসী যোদ্ধার মতই শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও জীবনের যুদ্ধে লড়াই করে যাবার জন্য নিজের কাছেই সদা অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
সালমা দেখেছে তার খুবই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আলেয়া কিভাবে অভাবের কাছে পরাজয় বরণ করে নিজের দেহ বিক্রি করে দিয়েছে! এখন সে পতিতাপল্লিতে প্রতিদিন কামুক খদ্দেরদের তৃপ্ত করতেই ব্যস্ত থাকে। জীবনে যে এসব না করেও ইচ্ছা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্মানের সাথে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে এই সালমা!
সালমা একটি এন জি ও-র কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন ও দুটি গরু কিনে ধীরে ধীরে পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। পাড়ার কোনও কোনও অভাবী মহিলারা সালমার সফলতা দেখে ঈর্ষায় কয়লার মতন জ্বলে পুড়ে মরে!
আবার অনেক মহিলা সালমার সফলতায় খুশি হয়েছে এ কথা বলতেই হবে। যেমন, রিক্সাওয়ালা খসরুর স্ত্রী মদিনা বিবি। মদিনা প্রায়ই সালমার কাছে এসে পরামর্শ চায় যে কি করে সেও তার জীবন সুন্দর করে গোছাতে পারে; কি করে সেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। একদিন মদিনা বলে,
- সালমা, তুমি আমারে ঐ এন জি ও না ফেন জি ও কি যেন, হেইখানে লইয়া যাইবা একদিন।
- তুমি কি হাছাই যাইতে চাওনি মদিনা? তুমি কি আসলেই যাইতে চাও, নাকি আমার লগে ইয়ার্কি মারতাছো কও দেহি?
- হ গো, হাছা কইতাছি। তুমি কবে নিবা কও।
- কাইল চলো তাইলে।
- হ, কাইল যাওয়া যায়। আমার মরদরে কইছিলাম হেইখানে লইয়া যাইবার লাইজ্ঞা কিন্তু হেয় এন জি ও-র কথা হুইনা কয় নাকি এইগুলান খারাপ! এন জি ও নাকি ভালা না! এরা নাকি লোনের প্যাঁচে ফালাইয়া মাইনষের বেবাকতা লইয়া ফকির বানাইয়া ছাড়ে!
- আরে ধুর! তোর জামাই একটা আহাম্মক! হেয় কিচ্ছুই জানে না, ব্যাঙ জানে! আমি হেইখান থেইকা লোন লইয়া স্বাবলম্বী হইছি না কও দেহি?
- হ, হইছোতো! আমরা সবাইতো এইডার সাক্ষী আছি!
- তাইলে তোমার মরদের আলতু ফালতু কথায় কান না দিয়া কাইল লও আমার লগে এন জি ও-তে।
- ঠিক আছে তাইলে কাইল বিকালে যামুনে নাকি কও?
- হ, বিকালেই ভালা হইবো।
- আইচ্ছা, আমি তাইলে উডি। কাইল দেহা হইবো। ভালা থাইকো। গেলাম।
- হ, তুমিও ভালা থাইকো বইন! আল্লাহ্ হাফেজ!
- আল্লাহ্ হাফেজ!
মদিনা লোন নিয়ে নিজেও সালমার মতন সফলতার মুখ দেখেছে। আজ মদিনার ঘরে সুখ আছে, অভাব নেই! আজ সে দরিদ্র নয়, স্বাবলম্বী ও সচ্ছল একজন মানুষ!