এইমাত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আরও কিছু গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিল বলেই নাকি তাদের জন্য এমন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে! চারিদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া; লাশের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
[রাইফেল হাতে দুই মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন এবং বিজয় মঞ্চে প্রবেশ করেন]
স্বাধীনঃ [বিজয়কে বলেন] স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে! ঐ পাক হানাদার বাহিনীর দিন শেষ! শালারা অনেক অত্যাচার জুলুম করেছে। অনেক হয়েছে! আর না! বাংলাদেশ স্বাধীন হতে আর বেশিদিন বাকি নেই।
বিজয়ঃ একদম আমার মনের কথাটাই বলেছো বন্ধু! পাকিস্তানি হায়েনারা চতুর্দিক থেকেই কোণঠাসা হয়ে গেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম এখন মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র!
স্বাধীনঃ [তৃপ্তির হাসি হেসে] ভাবতেই ভালো লাগে বন্ধু, স্বাধীন বাংলাদেশের বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেবে সকল বাংলাদেশি, এটি যে কত বড় গর্বের বিষয় সেটি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না! [বলতে বলতে আবেগে স্বাধীনের চোখে পানি জমে]
বিজয়ঃ [খুশিতে হেসে] লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ নরনারীসহ সকলের ত্যাগের ফল হতে যাচ্ছে এই স্বাধীনতা। অত্যাচারীরা বুঝে গেছে যে তাদের পরাজয় আসন্ন তাই তারা আরও বেশি অত্যাচার ও খুন করা শুরু করেছে। শুনেছি তারা নাকি দেশের বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার প্রমুখ নাগরিকদের বেছে বেছে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে!
স্বাধীনঃ [রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন] ঐ পাকিস্তানি শয়তানগুলো পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই ঘৃণ্য কাজগুলো করছে। তারা ভালো করেই জেনে গেছে যে তাদের দিন শেষ! তাই যাবার আগে তারা বাংলাদেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। শালা শয়তানের দল!
বিজয়ঃ কিন্তু মনে হয় তারা এটি ভুলে গেছে যে বাঙালি সাহসী এবং সংগ্রামি জাতি। যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেবার এবং টিকে থাকার ক্ষমতা বাঙালির রক্তে মিশে আছে।
স্বাধীনঃ সেটাই বন্ধু! সেটাই! এসব জুলুম অত্যাচার করেও পাকিস্তানিরা আমাদের মনোবল আগেও ভাঙতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না! দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা সকল বাংলাদেশিরা মিলেমিশে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো!
বিজয়ঃ স্বাধীনতা আমাদের অধিকার! ঐ পাকিস্তানিরা অন্যায়ভাবে আমাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের সাথে আছে এটি একটি আশাব্যঞ্জক ব্যাপার।
স্বাধীনঃ ঠিক কথা। ভারত আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যেভাবে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে তা এককথায় অসাধারণ!
বিজয়ঃ শুনেছি আমেরিকা নাকি পাকিস্তানিদের পক্ষে?
স্বাধীনঃ অন্যায়কারীদের পক্ষে থেকে কোনও লাভ নেই বন্ধু! অন্যায়ের পরিণতি কখনও ভালো হয় না। তুমি দেখে নিও, বিজয় আর কয়েকদিনের ব্যাপার মাত্র।
বিজয়ঃ [সন্তুষ্টির সাথে হেসে] দোয়া করি যেন তোমার কথাই সত্য হয়!
[হঠাৎ পাকিস্তানি সৈন্যদের উর্দু কথা বিজয় এবং স্বাধীনের কানে ভেসে আসে।]
স্বাধীনঃ [সাবধানী হয়ে আস্তে আস্তে বলেন] বন্ধু! আশেপাশে পাকিস্তানি শকুনের দল এসেছে মনে হয়! চলো কেটে পড়ি!
বিজয়ঃ [সাবধানী হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে] হুম, চলো আপাতত এখান থেকে সরে যাওয়াই উত্তম।
[বিজয় এবং স্বাধীন মঞ্চ ত্যাগ করেন।]
[দুইজন পাকিস্তানি সেনা মঞ্চে প্রবেশ করে। একজন ওয়াসিম, আরেকজন আবেদ।]
ওয়াসিমঃ মুক্তিবাহিনী!
আবেদঃ মুর্দাবাদ!
ওয়াসিমঃ পাকিস্তানি!
আবেদঃ জিন্দাবাদ!
ওয়াসিমঃ [আশেপাশে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে] না জানে কিউ মুঝে কুছ কুছ লাগ রাহাহে কে আসপাস কোই মুক্তিসেনা সাপকি তারহা ছুপকে বেয়ঠা হেয়!
আবেদঃ [সন্দেহে এবং আতংকে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে] হা জনাব! মুঝে ভি এইসাহি লাগরাহাহে!
[রাইফেল তাক করা অবস্থায় “বাংলাদেশ বাংলাদেশ” বলতে বলতে বিজয় এবং স্বাধীন মঞ্চে প্রবেশ করেন। তাদের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা লাগানো। ওয়াসিম এবং আবেদ পালাতে চাইলে বিজয় এবং স্বাধীন মুহূর্তেই রাইফেলের গুলিতে তাদেরকে ঝাঁঝরা করে দেন। ওয়াসিম এবং আবেদের রক্তাক্ত মৃত দেহ মঞ্চে পড়ে আছে। তাদের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বিজয় এবং স্বাধীন আনন্দের হাসি হাসছে!]
স্বাধীনঃ [উচ্চস্বরে রাইফেল উঁচিয়ে বলেন] বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!
বিজয়ঃ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!
[কয়েকবার “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!” বলতে বলতে বিজয় এবং স্বাধীন মঞ্চ ত্যাগ করেন।]
[সমাপ্ত]