রঙ্ধনু ১। কতদিন যাবৎ লেখালেখি করছেন?
মো. জিয়াউল হক: ছোটবেলা থেকেই ছড়া, কবিতা ইত্যাদি লেখার অভ্যাস ছিল যা এখনও ছায়ার মতন আমার সত্ত্বার সাথে মিশে আছে।
রঙ্ধনু ২। এ পর্যন্ত কোনো বই প্রকাশ পেয়েছে কি? যদি পেয়ে থাকে কয়টি ও কী কী?
মো. জিয়াউল হক: এ পর্যন্ত দেশে বিদেশে আমার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- “Advanced Reading and Writing, The Easy Way” [2011], “Advanced Reading and Writing: History, Developments, Concepts and Techniques” [2014], “হযরত শাহ্ জালাল (রা.): একটি মহাকাব্য” [2015], “Poems of Love” [2015], “Characterless” [2015], “Hell Followed Him!” [2015], “Rocket in My Pocket” [2015], “Poetenry: Poems of Ten Lines” [2015], “Kurine: Poems of Twenty Lines” [2015], “The Shakespeare-mystery: Much Ado about Nothing” [2015], “Eastern Thoughts: Islam, Hinduism, Buddhism and Beyond” [2015], “Rat in the Hat” [2016], “Tom and Jerry” [2016], “Fragrance of Love” [2016], “A Farewell to Love” [2016], “Visions and Deaths: Trying to Reveal the Mystery behind the Extremely Unnatural Deaths” [2016]. তাছাড়া, “ভয়ংকর সাবলেট” নামে আরেকটি বই আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
রঙ্ধনু ৩। লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?
মো. জিয়াউল হক: ছোটবেলায় বিভিন্ন ম্যাগাজিন পড়ার প্রতি তীব্র ঝোঁক ছিল। সেই ম্যাগাজিনগুলোতে প্রকাশিত ছড়া, কবিতা, গল্প ইত্যাদি পড়তে পড়তে একসময় নিজেও কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করলাম এবং একটু আধটু লিখতে লাগলাম। মূলত এভাবেই আমার লেখালেখির শুরু।
রঙ্ধনু ৪। আপনার লেখালেখিতে উৎসাহ পান কার কাছ থেকে?
মো. জিয়াউল হক: লেখালেখিতে উৎসাহ পাই প্রিয় পাঠক এবং ভক্তদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণা থেকে। পাশাপাশি বিখ্যাত লেখকগণের অসাধারণ সাহিত্যকর্ম পাঠ করার পরে নিজের অন্তরে এক প্রকার ইতিবাচক উত্তেজনা কাজ করে যেটি আমাকেও নতুন কোনও সৃষ্টির প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায় বা ধাবিত করে।
রঙ্ধনু ৫। বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই?
মো. জিয়াউল হক: আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই বলছি যে বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা ‘ভালো’ তবে ‘খুব ভালো’ নয়। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলতে চাই যে আমাদের দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পুস্তক প্রকাশিত হলেই কিন্তু এ কথা বলা সমীচীন হবে না যে এই দেশের সাহিত্য ভালো অবস্থানে আছে। সাহিত্যের সুস্থতা নির্ভর করে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর, যেমনঃ সংখ্যার চেয়ে মানের উপর গুরুত্ব দেয়া, বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা, সামাজিক ব্যধি এবং মূল্যবোধের স্পষ্ট প্রতিফলন, নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি করা, সম্পূর্ণ নতুন ধারার সাহিত্য রচনা করা ইত্যাদি।
রঙ্ধনু ৬। পত্রিকায় এবং অনলাইনে নতুন যারা লিখছেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মো. জিয়াউল হক: পত্রিকায় এবং অনলাইনে নতুন যারা লিখছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে গতানুগতিক ধারায় লেখার আগে আপনি লেখালেখির জগতে একান্ত আপনার একটি নির্দিষ্ট ধারা তৈরি করুন। পাঠকগণ লেখা পড়েই যেন বলতে পারে যে এই লেখা অমুক লেখকের; শুধুমাত্র ঐ লেখকই এই স্টাইলে বা এই ধারায় লিখেন। লেখকগণের স্বকীয় সফলতার সমষ্টিই কিন্তু দেশের সফলতা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং অন্যের লেখার ধরণের হুবহু অনুকরণ না করে নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করুন। এভাবেই আপনারা আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন। তাছাড়া অনুগ্রহ করে আপনাদের কলমকে কখনও বিশ্রাম নিতে দেবেন না; লেখালেখি চালিয়ে যান কারণ শেষ বিদায়ের পর সৃষ্টিকর্মগুলোই আপনাদের স্বকীয় চিহ্ন বা স্বাক্ষর হয়ে চির অম্লান হয়ে রবে।
রঙ্ধনু ৭। অনলাইন এবং পত্রিকায় লেখে এমন কার কার লেখা ভালো লাগে?
মো. জিয়াউল হক: সত্যি কথা বলতে কি অনলাইন এবং পত্রিকায় লেখে এমন অনেকের লেখাই ভালো লাগে।
রঙ্ধনু ৮। ফেসবুক সাহিত্যগ্রুপ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মো. জিয়াউল হক: ফেসবুক সাহিত্যগ্রুপ একটি আধুনিকতম সংযোজন। ফেসবুকের জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন নামে নানান সাহিত্যগ্রুপ আত্মপ্রকাশ করেছে যা লেখক এবং পাঠকদের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এ সকল সাহিত্যগ্রুপ লেখক এবং পাঠকের মাঝখানে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করছে।
রঙ্ধনু ৯। অনলাইনের সাহিত্য ব্লগ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মো. জিয়াউল হক: অনলাইনের সাহিত্য ব্লগও সাহিত্য রচনা এবং সাহিত্য সংরক্ষণে বিশাল বড় অবদান রাখছে। যেমন একজন লেখকের একটি নির্দিষ্ট বই হয়তো বাজারে দুর্লভ, কিন্তু তার সেই বইটির পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ করে কোনও সাহিত্য অনুরাগী তার সাহিত্য ব্লগে রাখার ফলে অগুনতি পাঠক সেটি অনায়াসে পড়তে পারছেন এবং জ্ঞান আহরণ করছেন।
রঙ্ধনু ১০। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
মো. জিয়াউল হক: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আরও ভালো কিছু সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করা, গরীবদের জন্য কিছু করা ও নাটক এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।
রঙ্ধনু ১১। অনলাইনে সাহিত্য চুরি সম্পর্কে কিছু বলুন। কীভাবে তা ঠেকানো যায়?
মো. জিয়াউল হক: অনলাইনে সাহিত্য চুরি ঠেকানো অসম্ভব। ‘চুরি’ এবং ‘চোর’ সেই আদিম যুগ থেকে এখন পর্যন্ত আছে এবং থাকবে। কারো টাইমলাইনে নিজের কোনও কবিতা বা গল্প প্রকাশ করলে সেটি খুব অনায়াসেই যে কেউ কপি করে নিতে পারে। এটা অনেকটা ঘরের দরজা খুলে ঘুমানোর মতই! যারা অনলাইনে লেখা প্রকাশ করেন তাদের লেখা চুরির ব্যাপারে খুব একটা আতঙ্কিত হবার কিছু নেই কারণ সাহিত্য চোরদের সংখ্যা অতি নগণ্য এবং তারা এই চুরি থেকে খুব একটা লাভবান হয় না বলেই একসময় চৌর্যবৃত্তি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে সাহিত্য চুরি করে কেউ কখনও খ্যাতি অর্জন করতে পারেনি এবং পারবেও না।
রঙ্ধনু ১২। অনলাইন ও পত্রিকায় গদ্যের চেয়ে পদ্য লেখকেরই আধিক্য লক্ষ্যনীয়, এটি কি মন্দ লক্ষণ নয়? আপনার মতামত কী?
মো. জিয়াউল হক: অনলাইন ও পত্রিকায় গদ্যের চেয়ে পদ্য লেখকের আধিক্য বেশী এ কথা সত্যি। তবে আমি এটিকে মন্দ লক্ষণ মনে করি না কারণ এই ব্যস্ত জীবনে পাঠকগণ বিভিন্ন কাজে এখন এতোটাই নিয়োজিত থাকেন যে অনলাইনে বা পত্রিকায় কয়েক পৃষ্ঠার গদ্য পড়ার মতন সময় অবশিষ্ট থাকে না। সেই গদ্যটি হয়তো খুব তথ্যপূর্ণ এবং অসাধারণ কিন্তু সময়ের অভাবে একজন পাঠক সেটি চাইলেও পড়তে পারেন না। অন্যদিকে দশ লাইন কিংবা বিশ লাইনের একটি কবিতা খুব অল্প সময়েই পড়ে ফেলা যায়। কবি এবং লেখকগণ এই বিষয়টি আঁচ করতে পারেন বলেই অনলাইনে ছোট ছোট কবিতা প্রকাশ করেন। তার অর্থ এই নয় যে তারা গদ্য লিখছেন না! তারা গদ্য লিখছেন ঠিকই তবে সেগুলো অনলাইনে খুব একটা প্রকাশ করছেন না। সেগুলো পুস্তক আকারেই প্রকাশিত হচ্ছে বেশী।
রঙ্ধনু ১৩। লেখকদের বিরক্তিকর বানান ভুল এবং বইপত্র না পড়াকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মো. জিয়াউল হক: লেখকদের বিরক্তিকর বানান ভুলটাকে আমি খুব একটা গুরুত্ব দেই না। একজন লেখকের একটি বইয়ে কয়েকটি বানান ভুল থাকার মানে এই নয় যে তিনি ঐ নির্দিষ্ট বানানগুলো জানেন না বা তিনি বড় মাপের লেখক নন। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বানান ভুল থেকে যায়, যেমন, অতি ব্যস্ততার কারণে ঠিকমত পাণ্ডুলিপি খুঁটিয়ে পড়তে না পারা, কম্পিউটারে ঠিকমত বানানটি না লেখা ইত্যাদি। তবে বইপত্র না পড়াকে আমি কখনই সমর্থন করি না। একজন ভালো লেখক হতে হলে তাকে অবশ্যই একজন ভালো পাঠক হতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। বিশ্বের বিখ্যাত সকল গুণী লেখকগণ কিন্তু প্রচুর অধ্যয়ন করেছেন। কেউ লেখক হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে চাইলে তার প্রথম কাজ হচ্ছে বই পড়া।
রঙ্ধনু ১৪। ফেসবুক বন্ধ হলে ফেসবুকের সাহিত্য চর্চার কী হবে, বলুন?
মো. জিয়াউল হক: আমার মতে ফেসবুক বন্ধ হবার পেছনে কোনও যুক্তি নেই। যদি কোনও কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ও তখন অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যাওয়া যাবে। তাছাড়া অনলাইনে এখন হাজার হাজার ওয়েবসাইট আছে যেখানে সাহিত্য চর্চার ব্যাপক সুযোগ বিদ্যমান।
রঙ্ধনু ১৫। রঙ্ধনু সম্পর্কে কিছু মতামত ও পরামর্শ বলুন।
মো. জিয়াউল হক: রঙ্ধনু সাহিত্য গ্রুপটি তার জন্মলগ্ন থেকেই একটি অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে যেটি হচ্ছে সাহিত্যের প্রকাশ এবং প্রচার। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক লেখা এই গ্রুপটিতে প্রকাশ করেছি। গ্রুপটি সবসময় নিখুঁত এবং মার্জিত সাহিত্যের উপর গুরুত্ব দেয় যা আমার কাছে বেশ প্রশংসনীয় বলে মনে হয়। রঙ্ধনু গ্রুপটির প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পরামর্শ নয় তবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য শুধুমাত্র একটি প্রস্তাব দিতে চাই আর তা হচ্ছে এই যে কোনও লেখক তার লেখা প্রকাশ করলে যদি সেখানে কোনও বানান ভুল থাকে সেই ভুল শোধরানোর জন্য তার ঐ লেখার নীচে মন্তব্য না করে তার ইনবক্সে বার্তা দিয়ে ভুলটি ধরিয়ে দিলে সেই নির্দিষ্ট লেখক বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণামূলকভাবেই নেবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
রঙ্ধনু ১৬। রঙ্ধনুর মতো বা মোটামুটি এক্টিভ সাহিত্যগ্রুপ কি চোখে পড়ে, তুলনা করুন।
মো. জিয়াউল হক: ফেসবুকে হাজারো সাহিত্যগ্রুপ বিদ্যমান ঠিকই তবে রঙ্ধনুর মতো সাহিত্যগ্রুপ আমার চোখে খুব একটা পড়েনি কারণ এই গ্রুপটি বেশ সক্রিয়, সুশৃঙ্খল এবং সত্যিকার অর্থেই সাহিত্যানুরাগী।
রঙ্ধনু ১৭। সাক্ষাৎকার দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. জিয়াউল হক: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।