ব্যভিচার [Bangla Story]

      সামাদ সাহেবের ছোট সংসার; স্ত্রী শিউলি এবং একমাত্র ছেলে শিহাবকে নিয়ে তার সাজানো সংসারে আভিজাত্যের অভাব থাকলেও সুখের কোনও অভাব নেই! কিন্তু মানব জীবন দুঃখ যেমন চিরস্থায়ী নয়, তেমনি সুখও নয়। অনেকটা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছের মতন, যেটি পানির ঝাঁপটায় মুষড়ে পড়ে ঠিকই, তবে পানি সরে গেলে আবারও যেন তার পুনর্জন্ম হয়!

 

        সামাদ যেহেতু ব্যবসায়ী, সেহেতু দিনের বেশীরভাগ সময় তাকে ব্যবসার কাজে ঘরের বাইরেই থাকতে হয়। বিকেলে শিহাবকে পড়াতে এক শিক্ষক আসেন; তার নাম আকিব জাবেদ। তিনি ভালোই পড়ান, তবে তার চরিত্র তেমন ভালো নয়। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়!

 

        শিহাবকে পড়ানোর প্রথম দিন থেকেই শিউলির উপর আকিবের কুনজর পড়েছে; মরুভূমির বুকে একলা ইঁদুরের উপর যেমন আকাশের উড়ন্ত ঈগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়ে, অনেকটা তেমন। শিউলিও বুঝতে পারে যে আকিব তাকে পছন্দ করেন। কখনও শিহাব ঘরের বাইরে থাকলে আকিব নানান ছলে এবং কৌশলে শিউলির হাত স্পর্শ করতে চায়, তার দেহের উষ্ণতা অনুভব করতে চায়। শিউলিও লজ্জাবতী গাছের মতন লাজে কুঁকড়ে যাবার পরিবর্তে শাপলা ফুলের মতন নিজেকে আরও বেশী করে মেলে ধরে। এই যেমন বুকের উপরে ওড়না এমনভাবে রাখেন যেন পুষ্ট স্তনের আকার একেবারে পরিস্কারভাবে বোঝা যায়। তাছাড়া শাড়ি পড়লে সমুদ্রের চরের মতন শুভ্র পেট স্পষ্ট ভেসে উঠে। আকিবের মতন দুশ্চরিত্রের এইসব লোভনীয় ইশারা বুঝতে একটুও দেরী হয় না।

 

        একদিন যথারীতি আকিব শিহাবকে পড়াতে এসে তাকে ঘরে না পেয়ে তার ফিরে আসার অপেক্ষায় বসে থাকেন। ইতোমধ্যে শিউলি স্যারের জন্য চা বানাতে যায়। আকিব চোরের মতন পাকঘরে গিয়ে শিউলিকে এমনভাবে জাপটে ধরেন যেন সে তার বিবাহিতা স্ত্রী! যাইহোক, শিউলি তাতে একটুও বাধা দেয় না।

 

        সেইদিন থেকেই আকিব এবং শিউলির রাম-লীলা চলতে থাকে! কিন্তু কথায় আছে যে চোরের দশ দিন তো গৃহস্থের এক দিন! একদিন সামাদ অসুস্থ বোধ করাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। এমন অপ্রত্যাশিত সময়ে স্বামীকে বাসায় আসতে দেখে শিউলি এমনভাবে আঁতকে উঠে যেন সাক্ষাৎ যম দাঁড়ানো! ভয়ে কিছুটা কাঁপতে কাঁপতে স্বামীকে বলে,

 

- কি ব্যাপার? তুমি আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলে যে?


- কেন? কোনও সমস্যা নাকি?


- না, সমস্যা হবে কেন? এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছি!


- শরীরটা একটু খারাপ, তাই চলে এসেছি।

 

        সামাদ ধীরে ধীরে তার কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে প্রবেশ করতেই আকিবকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে তার হার্ট এ্যাটাক হবার মতন অবস্থা! এদিকে শিউলিও ফ্যাঁকাসে মুখে সেই কক্ষে এসে হাজির। শিউলি এবং আকিব কেউই এভাবে হাতেনাতে ধরা পড়বে এমনটা কখনও কল্পনাও করেনি!

 

        সামাদ নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে আকিবকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মারধর করতে থাকে। অর্ধনগ্ন আকিব টানাহেঁচড়ায় পড়ে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে! এদিকে শিউলি পাগলপ্রায় সামাদকে থামাতে এলে সামাদ তাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিউলির মাথা প্রচণ্ড জোরে জানালার রডে ধাক্কা খায় এবং সে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে সামাদ আকিবকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে।

 

        সামাদ দুটো লাশের মাঝখানে পাথরের মূর্তির মতন বসে আছে! যেন সে অপেক্ষায় আছে যে কেউ এসে লাশগুলো নিয়ে যাবে। বিকেলে শিহাব স্কুল থেকে ফিরে বাসায় ঢুকে রক্তের বন্যা এবং লাশ দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। ধীরে ধীরে আশেপাশের মানুষ এসে জড়ো হতে থাকে। ইতোমধ্যে পুলিশের কাছেও খবর চলে যায়। সামাদকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেয়া হয়। 

View kingofwords's Full Portfolio
tags: