লাল গোলাপ [Bangla Story]

        শোভন নামের ছেলেটি ইরা নামের মেয়েটির প্রেমে এতোটাই মজেছে যে তাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারছে না। ইরাকে না পেলে যেন তার জীবনটাই বৃথা যাবে। অনেকদিন চেষ্টা করেও তাকে ভালোবাসি বলতে পারেনি সে।

 

        একদিন শোভন মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে ইরাকে তার মনের কথা জানাবে বলে ঠিক করে। ফোনে নয়, যখন ইরা কলেজের উদ্দেশে রওনা হবে তখন ফিল্মি  স্টাইলে তার পথ আগলে হাঁটু গেড়ে প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু শোভন খালি হাতে ইরার সামনে যেতে চায় না; সে চায় যে কোনও একটা উপহার সাথে নেবে। কি নেবে সেটা ঠিক করতে গিয়েই তার প্রচুর সময় ব্যয় হয়ে যায়।

 

        অবশেষে শোভন সিদ্ধান্ত নেয় যে সে একটি লাল গোলাপ হাতে রাখবে। সে যথাসময়ে একটি সতেজ টকটকে লাল গোলাপ কিনে এনে ইরা কখন তার বাসা থেকে বের হবে সেই অপেক্ষায় থাকে। ইরাকে বাইরে আসতে দেখার সাথে সাথে শোভনের হৃদয় ডেকচিতে উতরানো গরম পানির মত টগবগ করতে থাকে! ইরা কিছুদূর আসতেই শোভন তার সামনে গিয়ে এক হাঁটু গেড়ে বলে,

 

- একটু দাঁড়াও ইরা!


- কেন?


- দরকার আছে।


- কি দরকার?


- আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ইরা। আমার ভালোবাসার প্রতীক এই লাল গোলাপটি গ্রহণ করলে আমি খুব খুব খুশী হবো!


- তুমি কি পাগল নাকি? কি করছো এসব? লোকে দেখছে!


- যে দেখার তাকে দেখতে দাও! আমার তাতে কিছুই আসে যায় না! আমি তোমাকে ভালোবাসি, এতে লুকানোর কি আছে?


- কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না!


- প্লিজ ইরা! এ কথা বলে আমার মনটাকে কাঁচের মতন ভেঙে দিও না!


- এসব ফিল্মি   ডায়লগ বাদ দাও। পথ ছাড়ো, আমার দেরী হচ্ছে!


- তুমি যদি আমার এই গোলাপটি গ্রহণ না করো তাহলে কিন্তু আমি আত্মহত্যা করবো!


- উফ! কি যন্ত্রণায় পড়েছি রে বাবা! তোমার যা খুশী তাই করো, আমি চললাম!

 

        ইরা শোভনের লাল গোলাপ গ্রহণ করেনি। শোভন যদিও আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু ইরা ভেবেছে যে এটা তাকে রাজি করানোর একটা কৌশল মাত্র। সেদিন রাতে সে শোভনের কথা অনেক ভেবেছে। কেন জানি তার কথায়, প্রকাশভঙ্গীতে সে শোভনের বুকে তার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসার উপস্থিতি টের পেয়েছে। ইরার মনেও শোভনের জন্য কিঞ্চিৎ ভালোবাসার উদয় হয়েছে। পরদিন যদি শোভন তাকে আবারও লাল গোলাপ হাতে পথ আগলে দাঁড়ায় এবং ভালোবাসি বলে, ইরা হয়তো সেই গোলাপ নেবে। মনে মনে সে এমনটাই ভেবে রেখেছে।

 

সকালে ইরা কলেজে যাবার পথে মনে মনে ভাবতে থাকে যে এই বুঝি শোভন আবারও লাল গোলাপ হাতে তার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসি বলবে। তার চোখ এদিক ওদিক শোভনকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও শোভনের চিহ্ন দেখা যায় না। কলেজে ইরার বান্ধবী তাস্নিয়া তাকে বলে,

 

- একটা খবর শুনেছিস?


- কি খবর?


- আমাদের পাড়ার একটা ছেলে নাকি আত্মহত্যা করেছে?


- বলিস কি?


- হ্যাঁ, আমি আজই শুনেছি!


- কি নাম ছেলেটার?


- শোভন।


- শোভন?


- হ্যাঁ, কেন, তার নাম শুনে এভাবে আঁতকে উঠেছিস যে?


- না, কিছু না! কি কারণে আত্মহত্যা করলো জানিস?


- নিশ্চিতভাবে জানি না, তবে লোকে বলাবলি করছে যে প্রেমে ছেঁকা খেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে। 

 

        ইরার গলা শুকিয়ে খড়ের মতন হয়ে গেছে। সে আর কিছু বলার কিংবা শোনার অবস্থায় নেই। সেদিন কোনোরকমে ক্লাস করে বাসায় ফিরে ইরা সোজা তার কক্ষে গিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে উপুড় হয়ে কাঁদতে থাকে। হায়! তার কান্নার যদি সেই শক্তি থাকতো শোভনকে আবার এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: