আধো আলোয় [Bangla Story]

         রাজ এবং আইরিনের সম্পর্কের বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। সম্পর্কের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ছোট বড় অনেক মান অভিমান, ঝগড়া ইত্যাদি হলেও আত্মার সাথে আত্মার টানের ফলে তারা কখনই একে অন্যকে ছেড়ে থাকতে পারে না; কখনও আলাদা থাকার কথা চিন্তাও করতে পারে না।

 

        কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে রাজের ফোনে ম্যাসেজ আসে। ঘটনাটি প্রায় প্রতিদিন হচ্ছে বলা চলে। ম্যাসেজের ভাষা অত্যন্ত রোম্যান্টিক। রাজ যখন সেগুলো পড়ে তখন তার মনে হয় যেন কোনও সাহিত্যিক ম্যাসেজগুলো লিখে পাঠাচ্ছে!

 

        ইতোমধ্যে একদিন সেই নাম্বার থেকে কল আসলেও কেন জানি রাজের কলটি রিসিভ করতে বেশ অস্বস্তি হয়। রাজ কিন্তু চাইলে খুব সহজেই সেই অপরিচিত নাম্বারটি ব্লক করতে পারে। তবে সে এই কাজটি না করার পক্ষেই অবস্থান নেয়। কারণ তার মনে হয় যে কে না কে প্রেমের ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে, এটাকে এতোটা গুরুত্ব দেবার কিছুই নেই। একসময় এমনিতেই এসব ম্যাসেজ দেয়া বন্ধ করে দেবে।

 

        একদিন রাজ ব্যাংকে যাবার জন্য প্রস্তুত হবার সময় সেই নাম্বার থেকে ফোন আসে। কৌতুহলবশত রাজ কলটি রিসিভ করতে না করতেই অপর প্রান্ত থেকে অত্যন্ত সুমিষ্ট কণ্ঠে একটি মেয়ে বলে,

 

- আই লাভ ইউ!


- মানে?


- মানে, আমি আপনাকে ভালোবাসি!


- আপনি কে?


- আমাকে আপনি চিনেন না কিন্তু আমি আপনাকে ঠিকই চিনি!


- দয়া করে আপনার পরিচয়টা দিলে খুব খুশী হবো।


- উহু, এতো তাড়াতাড়ি আমার পরিচয় দেবো না। তবে কথা দিচ্ছি যে একদিন না একদিন আপনি আমার সম্পর্কে সব জানতে পারবেন।


- দেখুন, এসব হেঁয়ালি আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আপনি যদি আপনার পরিচয় না দেন, তাহলে আমি আপনার নাম্বারটি ব্লক করে রাখবো।


- আমার তা মনে হয় না!


- ঠিক আছে, এই আমি ফোনটা রাখছি। অনুগ্রহ করে আপনি আমাকে অন্য কোনও নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। গুডবাই!

 

        রাজ ফোনটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করতে থাকে। সে আসলে ঐ মেয়ের নাম্বার ব্লক করার কথাটি মন থেকে বলেনি। তার উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটিকে ঘাবড়ে দেয়া। যাইহোক, রাজ তার কাজ করতে ঘরের বাইরে চলে যায়।

 

        রাত বারোটার দিকে রাজ যখন মাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে, ঠিক তখন তার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে। সেই মেয়েটি ম্যাসেজে লিখেছে- কি, আপনি না হুমকি দিয়েছেন যে আমার নাম্বারটি ব্লক করবেন? কই, ব্লকতো করেননি? তাহলে কি আপনিও আমার প্রেমে পড়ে গেছেন নাকি? মুচকি হেসে রাজ উত্তরে লিখে- আপনার কি তাই মনে হয় নাকি? মেয়েটিও লিখে, হ্যাঁ, আমার তো তাই মনে হয়!

 

        রাজের সাথে সেই মেয়েটির সম্পর্ক ফোনে বেশ ভালোভাবেই অগ্রসর হতে থাকে। তার নাম লুবনা। মাঝে মাঝে রাজের মনে হয় যে কাজটি মোটেও ঠিক হচ্ছে না কারণ এটা করে সে আইরিনকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু কেন জানি লুবনার প্রেমের জালে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াতেই থাকে, যেমনটা একটি মশা মাকড়সার জালে জড়ায়!

 

        একদিন আইরিন অকস্মাৎ রাজের সামনে এসে বলে,

 

- লুবনার সাথে প্রেম কেমন চলছে?


- লুবনা? কে সে?


- লুবনাকে চেনো না? মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে পড়লে?


- কি যে বলো না তুমি? লুবনা নামে কাউকেই আমি চিনি না?


- তোমার ভণ্ডামি ধরা পড়ে গেছে রাজ! তোমার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে! এখন আর লুকানোর চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই!


- কি লুকাবো? তুমি এভাবে কোনও প্রমাণ ছাড়া আমাকে দোষারোপ করতে পারো না!


- তুমি লুবনা নামে যেই মেয়েটির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ, তাকে আমিই বলেছি তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে! আমার ইচ্ছে ছিল তোমার সততাকে একটু যাচাই করে দেখার! জানো, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তুমি কখনই আমাকে ঠকাবে না, কখনই আমার মন ভাঙবে না। কিন্তু তুমিও অন্য দশটা ছেলের মতই চরিত্রহীন হলে! ছি! রাজ ছি!


- আমি খুব লজ্জিত এবং দুঃখিত আইরিন! আমি ভুল করেছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।


- ক্ষমা? তুমি আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছো আর আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো? আমি যদি অন্য ছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতাম তখন কি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে বলো?


- প্লিজ আইরিন, আমার কথা শোনো!


- আর শোনাশুনির কিছু নেই! এখন থেকে তোমার সাথে আমার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। অতীতে যা কিছু ছিল সবই একটি ভয়াল স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবো। খোদা হাফেজ!


- আইরিন! দাঁড়াও! একটু শুনে যাও প্লিজ! আমি খুব দুঃখিত! আইরিন!

 

        মানুষ প্রাণপণে চাইলেও সময় যেমন থামে না, তেমনি আইরিনও থামেনি। রাজ তার এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনটাকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। সে একবার পিছলে পড়েছে এবং সেই পতনের খুব চড়া মূল্যও দিয়েছে। সান্স এন্ড লাভারস উপন্যাসের পলের মতন সে অন্ধকারের কাছে আর কখনও আত্মসমর্পণ করতে চায় না, সে আলোর পথের যাত্রী হতে চায়; আলো তাকে ডাকছে!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: