প্রেমের সম্পর্ক যদি ফুলের মত পবিত্র না হয়, তখন তার ভিত্তি ঘুণে খাওয়া কাঠের মতই হয়! ঈশান যে কতজনের সাথে প্রেম করে তা সে নিজেও ঠিকমত জানে কিনা সন্দেহ! আজ এর সাথে ফোনে কথা বলে তো কাল ওর সাথে। কল ওয়েটিং-এ থাকাটা যেহেতু প্রেমিকার মনে সন্দেহের জন্ম দেয়, তাই সে এই সমস্যারও একটি সুন্দর সমাধান বের করেছে।
ঈশান এখন তিনটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সিম ছয়টি। তার প্রত্যেক প্রেমিকা এটাই জানে যে তার কাছে একটি মাত্র ফোন এবং একটি সিমই আছে, কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত। যাইহোক, ঈশান এই দিক থেকে বেশ সফল এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়!
কিন্তু কথায় আছে যে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন! একদিন ঈশান তার প্রেমিকা নায়লার সামনে হাতেনাতে ধরা পড়ে! নায়লা তার বান্ধবীদের নিয়ে যে পার্কে বেড়াতে যায়, সেখানে সে গাছের আড়ালে ঈশানকে দেখতে পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলে আরও একজন মানুষ দৃশ্যমান হয়; সে আর কেউ নয় ঈশানের আরেক প্রেমিকা নাবিলা।
নায়লা কোনও কথা না বলে আড়াল থেকেই তাদের দুজনকে লক্ষ্য করে। সে দেখে যে ঈশান নাবিলার হাত ধরে আছে; মাঝে মাঝে পরম সোহাগে সেই হাতে এবং ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে; কখনও কখনও “আই লাভ ইউ” বলে জড়িয়ে ধরছে। নায়লা আর সহ্য করতে না পেরে “ঈশান” বলে এতো জোরে চিৎকার দেয় যে আশেপাশে থাকা কবুতরগুলো সব ভয় পেয়ে উড়ে যায়! ঈশান আতঙ্কিত হয়ে পেছনে তাকিয়ে নায়লাকে দেখে তোতলাতে তোতলাতে বলে,
- আ...আরে! না.নায়লা! ত.তুমি এখানে?
- হ্যাঁ, আমি! এতদিনে মাছ জালে ধরা পড়লো তাহলে!
- কি যে বলো না নায়লা?
- মেয়েটা কে?
- মেয়েটা আমার চাচাতো বোন, নাম নাবিলা।
- এই ঝোপের মধ্যে তার সাথে কি করছো?
- কিছু না, ও পার্ক দেখতে চেয়েছে তাই নিয়ে এসেছি।
- আমি যে দেখলাম তুমি তার হাত ধরে চুমু খাচ্ছ, সেটা কি?
- আরে, বোকা মেয়েটা কি যে বলে না! আমি ওর হাত দেখছিলাম! তুমিতো জানো যে আমি মানুষের হাত দেখে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারি!
- আমার সাথে ইয়ার্কি মারো না! তুমি কি আমাকে কচি খুকী পেয়েছো? মনে করেছো আমি কিচ্ছু বুঝি না! I hate you! আমি তোমাকে এত্তগুলা ঘৃণা করি!
ঈশান কিছু একটা বলতে চাওয়ার আগেই নায়লা এগিয়ে এসে তার গালে একটা কষে চড় বসিয়ে দেয়! সেই চড় যেন সমস্ত পার্কের দেয়ালে ধাক্কা লেগে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। নাবিলা ঈশানকে একটি মেয়ের হাতে এভাবে চড় খেতে দেখে ঘৃণায় এবং বিরক্তিতে তখনই সেই স্থান ত্যাগ করে। তখন তার মনে হয় যে ঈশান একটা কাপুরুষ এবং মেরুদণ্ডহীন। ঈশান পার্কের সেই কোণায় আহত বাঘের মত একা এবং অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে!