বিসর্জন [Bangla Story]

      ফাতেমার বয়স পঁয়তাল্লিশ ছুঁই ছুঁই। তার দুই ভাই সোহেল এবং আরমানকে নিয়ে সিলেটের বড়বাজারে থাকে। আরমানের বয়স বারো বছর; অন্যদিকে সোহেলের বিয়ের বয়স হয়েছে। সে ট্যাক্সি চালায়।

 

ফাতেমা নিজে এখনও বিয়ে না করলেও কথায় কথায় সোহেলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। একদিন সোহেল তার বোনকে গম্ভীরভাবে বলে,

 

- আপা, যতক্ষণ না তুমি বিয়ে করছো, ততক্ষণ আমিও বিয়ে করবো না!


- এটা কি ধরণের কথা হলো?


- এটাই ঠিক কথা!


- তুই এতো বড় হয়েও ছেলেমানুষি কথা বলছিস?


- এটা মোটেও ছেলেমানুষি কথা নয় আপা! এটা যুক্তিসঙ্গত কথা।


- কিন্তু আমি বিয়ে করবো না!


- কেন করবে না শুনি?


- বলেছিতো করবো না, এর পেছনে আবার কারণ কি?


- তুমি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলে, আর আমি তার কারণ জানতে পারবো না!


- তোর এতো কারণ টারন জানার দরকার নেই!


- কেন দরকার থাকবে না? তুমি যেমন আমার ভালো চাও, তেমনি আমিও তোমার ভালো চাই!


- যদি ভালো চাস, তাহলে আমাকে আর কখনও বিয়ে করার কথা বলবি না!


- তাহলে তুমিও আমার কথা শুনে রাখো, আল্লাহ্‌র কসম বলছি, তুমি বিয়ে না করলে আমি বিয়ে করবো না!


- আবার ছেলেমানুষি! তুই কি পিচ্চি বাচ্চা যে কথায় কথায় কসম খাস!


- তোমার যা ভাবার ভাবো, আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়বো না বলে দিচ্ছি!


- এতো জেদ ভালো না!


- আমারটা জেদ! তোমারটা জেদ না!


- আচ্ছা শোন আমার কথা, তোর বিয়ে হবার পর আমি বিয়ে করবো, ঠিক আছে?


- আমাকে তুমি বোকা পেয়েছো আপু?


- বিশ্বাস কর ভাই, আমি মোটেও মিথ্যা কথা বলছি না। তোর বিয়ে হবার পর আমিও বিয়ে করবো, সত্যি!


- তুমি কথা দিচ্ছতো?


- হ্যাঁ, এই যে তোর মাথা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি! এখন খুশীতো?


- তোমার এ কথা শুনে আমার মাথা থেকে যেন এক বিশাল পাথর খসে পড়েছে!     

 

        বাবা মা গত হয়েছে সেই কবে, কিন্তু ফাতেমা কখনও ভাইদেরকে বাবা মার অনুপস্থিতি টের পেতে দেয়নি। বিপদে আপদে সর্বক্ষণ অন্ধের যষ্টির মতন তাদেরকে আগলে রেখেছে। এতো অভাবের সংসারে যেখানে দুবেলা ভাতই জুটে না, সেখানে নিজের বিয়ের চিন্তা করাটা ফাতেমার কাছে বিলাসিতা এবং স্বার্থপরতা মনে হয়েছে।

 

        কিন্তু সোহেলের পীড়াপীড়িতে ফাতেমাকে রাজি হতেই হয়। যাইহোক, সোহেলের জন্য পাত্রী খোঁজা এবং বিয়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করাটা বিমানের গতিতেই হয়। বিয়ে হতে না হতেই সোহেল তার বড় বোনকে তাকে দেয়া কথার কথা মনে করিয়ে দেয়। সে বলে,

 

- কি আপা, আমাকে দেয়া কথা মনে আছেতো?


- উফ রে বাবা! তুই দেখি জোঁকের মতন লেগেই আছিস!


- কেন থাকবো না বলো?


- তোর মতন এতো নাছোড়বান্দা কখনও দেখিনি বাবা!


- এসব বলে কোনও লাভ নেই! আমি ইতোমধ্যে পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছি!


- তোর যা খুশী তাই কর! তবে গত কয়েকদিন ধরে মাথাটা প্রচণ্ড ব্যথা করছে। আগে সুস্থ হই, তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে।


- ঠিক আছে আপা। ঔষধ খেয়েছো?


- হ্যাঁ, মাথাব্যথার ট্যাবলেট খাচ্ছি। তবে ট্যাবলেট খাবার পর ব্যথাটা কমে ঠিকই কিন্তু দুই তিন ঘণ্টা পর ব্যথাটা আবার ফিরে আসে!


- তাহলেতো ডাক্তার দেখানো উচিত।


- ধুর! কি যে বলিস না! কথায় কথায় ডাক্তার দেখাতে হবে নাকি? এরকম মাথাব্যথা আগেও হয়েছে, আবার সেরেও গিয়েছে। তুই এতো চিন্তা করিস নাতো!


- তোমার সবকিছুতেই খামখেয়ালী! একবার ডাক্তার দেখালে কি হয়?


- ডাক্তারের ফিস দিতে হবে, দামী দামী ঔষধ কিনতে হবে, এই টেস্ট সেই টেস্ট করে করে অনেক টাকা খরচ হবে! কি দরকার ডাক্তার দেখানোর?


- যদি মারাত্মক কিছু হয়?


- বললামতো এমন ব্যথা আগেও হয়েছে। এমনিই ঠিক হয়ে যায়।


- তোমার সাথে তর্কে পারবো না বাবা! তোমার যা ইচ্ছা করো!

 

        পরদিন সকালে সোহেল ট্যাক্সি নিয়ে ঘর থেকে বের হবার আগে ফাতেমার মাথব্যথা কমেছে কি না সেটা জানার জন্য তার কক্ষে গেলে ফাতেমাকে একপাশ ফিরে শুয়ে থাকতে দেখে। সোহেল আপা, ও আপা বলে ডাকলেও ফাতেমার দিক থেকে কোনও প্রকার সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না! সোহেল তার আপার কাঁধ ধরে আলতো নাড়া দিলেও কোনও লাভ হয় না। ফাতেমা সেই আগের মতই গাছের টুকরার মতন পড়ে থাকে! 

 

        সোহেল আর কালক্ষেপণ না করে ট্যাক্সি চালিয়ে গিয়ে অনেক অনুরোধ করে একজন ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে। ডাক্তার সাহেব কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর বলেন যে ফাতেমা পরকালের যাত্রী হয়ে গেছে!   

View kingofwords's Full Portfolio
tags: