দৈহিক [Bangla Story]

       আতিক রহমান একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক। একদিন ফেইসবুকে নায়লা নামের একটি মেয়ে তাকে হ্যালো ম্যাসেজ দিলে তিনিও সৌজন্যবোধ থেকে হাই বলে উত্তর দেন। যদিও ফেইসবুকে নায়লা আতিকের বন্ধুদের তালিকায় আছে, তবুও তাকে ভালো করে চেনার জন্য কিছু প্রশ্ন করেন। যেমন, কোন বিভাগে পড়ো? কোথায় থাকো? ইত্যাদি।

 

        নায়লাও আতিকের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেয়। তারপরও কেন জানি আতিকের মনে শীতকালে পাতায় জমা কুয়াশার মতন সন্দেহ জমে। আজকাল ফেইসবুকে হাজারো মানুষ ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে। তাদেরকে চেনাতো এতো সহজ নয়! কখন কে যে কোন ছদ্মবেশ ধারণ করে ক্ষতি করার মতলব আঁটছে, কে জানে?

 

        যাইহোক, এভাবে ফেইসবুকে নায়লার সাথে আতিকের টুকটাক চ্যাট হতে থাকে। একদিন আতিককে অবাক করে দিয়ে নায়লা বলে,

 

- আমি আপনাকে ভালোবাসি।


- মানে?


- মানে বোঝেন না? আমি কি খুব কঠিন কথা বলেছি নাকি?


- তুমি আমার সাথে মজা করছো নাতো?


- আশ্চর্য! আমি আপনার সাথে মজা করবো কেন? যা সত্যি তাই বলেছি!


- আমাকে ভালোবাসার কারণটা কি জানতে পারি?


- আপনি একজন স্যার হয়েও এমন বোকার মত প্রশ্ন করেন কি করে?


- এটা কি বোকার মত প্রশ্ন হলো?


- হ্যাঁ, তাইতো! কেউ কাকে কি কোনও কারণে ভালোবাসে? ভালোবাসাতো হুট করেই হয়ে যায়, তাই না? তাছাড়া ভালোবাসার সংজ্ঞাতো আমার চেয়ে আপনি ভালো জানার কথা! আপনিতো জ্ঞানী লোক!


- খোঁচা দিচ্ছ মনে হয়!


- না, না, খোঁচা দেবো কেন?

 

        মানুষের মাঝে ভালো এবং মন্দ দুটোই বিদ্যমান; যখন সে খারাপ কিছুর সংস্পর্শে আসে, তখন সে তার দ্বারা এতো বেশী প্রভাবিত হয় যে কখনও কখনও তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে মানুষ যখন কোনও ভালো কিছুর সংস্পর্শে আসে, তখন তার মধ্যে একই ধরণের পরিবর্তন খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। যাইহোক, ফেইসবুকে চ্যাট করতে করতে আতিক এবং নায়লার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একসময় তাদের দেখা হয়; তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়।

 

আতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বিয়ে করলে নায়লাকেই করবে। যেহেতু সে ভালোবেসেছে, সেহেতু সে এই সম্পর্কটাকে একটি সুন্দর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়। সে অন্য প্রেমিকদের মতন নয় যারা শুধু দৈহিক সুখের জন্য একটার পর একটা সম্পর্কে জড়ায়; এ ধরণের সম্পর্কে ভালোবাসা নামক কিছুই থাকে না।

 

কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে এই যে কয়েকদিন পর কোনও কারণ ছাড়াই নায়লা আতিককে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। মাঝে মাঝে আতিক ফোন করলে কথা বলে ঠিকই, কিন্তু যখনই সে দেখা করার কথা বলে, তখন নায়লা আসবে বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়। নায়লা দেখা করে না। আজকাল আতিক ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিলেও নায়লার কোনও উত্তর পাওয়া যায় না! 

 

একদিন আতিক সন্ন্যাসীর মতন ভাবে- হয়তো নায়লা সেই গোত্রের তথাকথিত প্রেমিকা যার কাছে দৈহিক তৃপ্তিই মুখ্য, ভালোবাসা নয়!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: