মিরার বিয়ে ঠিক হয়েছে আজ। তার বৃদ্ধা নানী শামীমা খুবই আনন্দিত। তিনি মিরাকে খুব বেশী পছন্দ করেন। শামীমার মুখে একটিও দাঁত অবশিষ্ট নেই বলে তিনি কোনও কথা বললে তার মর্ম উদ্ধার করা খুব কঠিন হয়ে যায়! অতঃপর কথার অর্থ বোঝার জন্য তাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়।
যখন পরিবারের সকলে মিলে বেশ জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছে, তখন কথাপ্রসঙ্গে মিরা বলে যে তার বিয়েতে কে কি উপহার দেবে। একে একে তার মা, বাবা, ভাই, চাচু, খালা প্রমুখ কি কি উপহার দেবে তা বলেন। একপর্যায়ে মিরা তার প্রিয় নানীকে জিজ্ঞেস করে,
- কি ব্যাপার নানী, তুমি দেখি কোনও কথাই বলছো না? তুমি কি আমাকে উপহার না দেবার ফন্দি এঁটেছো নাকি?
- না, না, কি যে বলিস না? তোর বিয়েতে আমি কোনও উপহার দেবো না তা কি হয়?
- তাহলে ঝটপট বলে ফেলো যে কি উপহার দেবে?
- তোকে আমি একটা “টিফিন” দেবো!
- ওয়াও নানী! তুমি আমায় টিভি দেবে?
- হ্যাঁ!
আসলে বৃদ্ধা শামীমা বলেছেন যে একটা ‘টিফিন বক্স’ দেবে, কিন্তু তার মুখে দাঁত না থাকার কারণে কথা জড়িয়ে যাওয়াতে সবাই শুনেছে ‘টিভি’ দেবে! যাইহোক, মিরাসহ সকলেই অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে এ কথা বলাই বাহুল্য।
বিয়ের দিন শামীমা একটি সুদৃশ্য টিফিন বক্স কিনে এনে মিরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
- এই নে তোর সাধের টিফিন বক্স!
- টিফিন বক্স?
- হ্যাঁ, তোকে বলেছিলাম না যে আমি তোকে টিফিন বক্স কিনে দেবো!
- কিন্তু নানী তুমি টিফিন বক্স বলো নি, টিভি বলেছো?
- ধুর! কি যে বলিস না তুই? টিভির কথা বলতে যাবো কেন?
- কিন্তু আমিতো তাই শুনলাম!
- তুই নিশ্চিত ভুল শুনেছিস!
- কিন্তু ওখানেতো বাবা মাসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলো, তারাও কি ভুল শুনেছে নাকি?
- তোরা সবাই ভুল শুনেছিস!
- আচ্ছা, তাহলে তুমি দুয়েকজনকে জিজ্ঞেস করো তাহলে আসল বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে!
- আরে বাবা, এখানে আর জিজ্ঞেস করার কি আছে?
- প্লিজ নানী, তুমি আমার মাকে একবার জিজ্ঞেস করো!
- আচ্ছা, ঠিক আছে তোর মার সাথে আমি কথা বলছি।
শামীমা মিরার মা জোহরা বেগমকে ডাক দিতেই তিনি এসে উপস্থিত হন। শামীমা বেশ অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন,
- আচ্ছা জোহরা, তোমার মেয়ে কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?
- কেন, কি হয়েছে?
- সে বলছে যে আমি নাকি ঐদিন সবার সামনে বলেছি যে তার বিয়েতে আমি একটি টিভি কিনে দেবো? তুমিওতো ঐদিন উপস্থিত ছিলে তাই না?
- হ্যাঁ, ছিলামতো!
- আমি কি টিফিন বক্স কিনে দেবার কথা বলিনি?
- না, আপনিতো টিভি কিনে দেবার কথা বলেছেন! আমি নিজের কানে শুনেছি। এখানে মিরারতো কোনও দোষ নেই!
- বুঝতে পেরেছি গণ্ডগোলটা কোথায় হয়েছে?
- কোথায়?
- আসলে আমি বলেছি ‘টিফিন’ কিন্তু অন্য সবাই শুনেছে ‘টিভি’!
মিরাসহ উপস্থিত সকলেই শামীমার কথা শুনে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাবার মতন অবস্থা!