ডব্লিউ এইচ অডেনের “ফিউনারেল ব্লুজ” কবিতায় আমরা একজন শোকাহত মানুষকে কাঁদতে দেখি। তার খুব প্রিয় একজন মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে বলেই সে কাঁদছে। তার এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেবার মতন নয়। প্রসঙ্গত, কবিতায় আমরা অনেক রূপকের ব্যবহার দেখতে পাই যা শুরু থেকেই একপ্রকার বিষাদের আবহ সৃষ্টি করে। বক্তা করুণ সুরে বলছে,
“কফিন আনো, বিলাপকারীদের আসতে দাও”।
হতাশা বক্তাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে এই হতাশার বলয় থেকে এতো সহজে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। সে যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো! হয়তো সে শ্রোতাদেরকে নিজের মনে জমে থাকা নীল কষ্টের জানান দিচ্ছে। হয়তোবা সে নিজেকেই এসব বলে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে। কবিতার একপর্যায়ে আমরা বক্তাকে বলতে শুনি যে
“পুলিশদেরকে কালো কটনের দস্তানা পড়তে দাও”।
আসলে আমরা জানি যে ‘কালো’ হচ্ছে শোক বা মৃত্যুর প্রতীক। বক্তা তার হৃদয়ের কষ্টের তীব্রতা থেকে পুলিশদেরকে সাদা দস্তানার পরিবর্তে কালো দস্তানা পড়তে বলছে। এটি আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে আর তা হচ্ছে যে বক্তা তার ভালোবাসার মানুষটিকে অকালে হারিয়েছে বলেই তার মনের যাতনা কমছে না।
ভালোবাসার মানুষটি বক্তার অস্তিত্বে এমনভাবে মিশে ছিল যেন সে তার ছায়া! মৃত মানুষটির প্রতি তার প্রেমের গভীরতা খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় যখন সে বলে, “সে ছিল মোর উত্তর, মোর দক্ষিণ, মোর পূর্ব এবং পশ্চিম”। তার মনের আশা ছিল যে এ প্রেম চিরতরে অক্ষয়, অমর রবে কিন্তু মৃত্যু এসে ঘূর্ণিঝড়ের মতন সবকিছু নিমিষেই তছনছ করে দিয়েছে।
বক্তা এতোটাই আবেগতাড়িত যে সে ঐ আকাশের সুন্দর তারাদের আর চায় না, সে চায় চাঁদ এবং সূর্য ধ্বংস হয়ে যাক কারণ যেহেতু তার প্রিয় মানুষটিই সাথে নেই, সেহেতু প্রকৃতির এইসব সুন্দর উপাদানগুলো এখন তার কাছে বিষের মতই লাগে। কোনোকিছুই পারবে না তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে আটকাতে।
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে একজন প্রিয় মানুষকে হারানোর পর আমাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা কেমন হয় এই কবিতাটি সুনিপুনভাবে তারই ইঙ্গিত বহন করে। বক্তা যেমন বলে,