ক্ষমতা এবং টাকার দাপটে কিছু মানুষ অন্যদেরকে মানুষ বলে মনে করে না; মনে করে যেন ক্ষমতা এবং টাকা দিয়ে সবকিছুই কিনে ফেলা সম্ভব! গ্রামের অসাধু চেয়ারম্যান জলিল আহমেদ আজ দরিদ্র কৃষক আসলাম মিয়াকে প্রকাশ্যে এই বলে হুমকি দিয়েছে যে আসলাম যদি তার জমিটুকু জলিলের নামে লিখে না দেয় তবে পরদিন জোর করে তার জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেবে এবং বিকেল চারটার দিকে সেই জমিতে জলিলের নামে সাইনবোর্ড ঝুলবে যেখানে লিখা থাকবে, “এই জায়গার মালিক জলিল আহমেদ”।
হতদরিদ্র আসলাম আতংকে দিশেহারা হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও সেখান থেকে কোনোরকম সাহায্য পায়নি, উল্টো তাকেই নানানভাবে হেনস্থা করে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও আসলামের পক্ষে অন্যান্য সহানুভূতিশীল কৃষকেরা রয়েছে, তবুও চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপটের সাথে যে পেরে উঠবে না এ কথা সে খুব ভালো করেই জানে।
তবুও আসলাম সিংহের সামনে তুচ্ছ খরগোশের মত সহজে দমে যাবার পাত্র নয়। তার অধিকারের জন্য সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত বাঘের নতন লড়বে। পরদিন তিনটার দিকে সে ঘর থেকে বের হবার সময় তার দুঃখী স্ত্রী মদিনা খাতুন বলে,
- তুমি না গেলে হয় না?
- তুমি হুনোনাই কাইল ঐ শয়তান চেয়ারম্যান কি কইয়া গেলো? আমি না গেলে যে আমার এই শেষ সম্বলডাও হাতছাড়া হইয়া যাইবো!
- জমি যাইলে যাক! জান থাকলে আল্লাহ্র রহমতে জমি আবার আইবো। তুমি যাইও না! আমার কেন জানি খুব ডর লাগতাছে!
- আরে বেটি কয় কি? এতো ডরাইলে কি চলে? চিন্তা করিস না, আমি একলা যামু না। আমার লগে আরও কয়জনরে লইয়া যামু। অহন যাই।
আসলাম ঘর থেকে বের হবার সাথে সাথে তার একমাত্র কন্যা সখিনা দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা পার হয়ে যায় কিন্তু আসলামের দেখা নেই। রাত আটটার দিকে কয়েকজন পুলিশ আসে। তাদের মধ্যে একজন মদিনাকে উঠোনে পেয়ে বলেন,
- আসলাম তোমার কে হয়?
- জে, তিনি আমার স্বামী।
- সে কি আজ বিকেলে ক্ষেতে গিয়েছিল?
- জে, গেছিলো। আমি অনেক মানা করছি কিন্তু তারপরও গেছে।
- সেখানে ভয়ানক মারামারি সংঘটিত হয় এবং যার ফলে দুজন মানুষের মৃত্যু হয়। সেই দুজনের মধ্যে আসলামও আছে। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে; তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
- এ্যা? এইডা আফনে কি শুনাইলেন সাব? ও সখিনারে তোর মাপ আর নাইরে!
আর্তনাদরত মদিনা এবং তার সাত বছরের কন্যা সখিনার বিলাপে আকাশে বাতাসে এক অস্বাভাবিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে পাড়া প্রতিবেশীরাও আসলামের খুনের ব্যাপারে জেনেছে এবং মদিনাকে সহানুভূতি জানানোর জন্য ছুটে আসছে। সুদূরে থাকা একলা চাঁদ এসবই নীরবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে!