সেলফি! [Bangla Story]

ক্লাসের সবাই মিলে আজব পাহাড় দেখতে রওনা হয়েছে। যাত্রার বাহন হচ্ছে বাস। ছাত্রদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পড়েছে দুজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং দক্ষ শিক্ষকের উপর। ক্লাসের নিয়ম কানুনের বালাই নেই বলেই ছাত্ররা উচ্চস্বরে গান গেয়ে এবং নেচে নেচে বাসের ভেতরটা বিয়ে বাড়ির পরিবেশের মত করে ফেলেছে! আজ যেন তারা বাঁধনহারা পাখী!  

 

পাহাড়টির নাম আজব পাহাড় কারণ এই পাহাড়টি দেখতে অদ্ভুত রকম খাঁড়া; ঠিক যেন আইফেল টাওয়ারের মতন! তাছাড়া এই পাহাড়ের গাঁ বেয়ে সারা বছর জুড়ে সাদা দুধের মত ঝরনা বয়ে যায়।

 

দেখতে দেখতে গন্তব্য এসে যায়। সবাই হৈ হুল্লোড় করে বাস থেকে নামে। শিক্ষকগণ ধমকের সুরে ধীরে নামতে বললে কয়েক মিনিটের জন্য ছাত্ররা ভদ্র এবং লক্ষ্মী সন্তানের মত চুপ হয়ে থাকে কিন্তু পরক্ষণেই আবার আগের মতই কাণ্ড করা শুরু করে!

 

কোমলমতি এই ছাত্রদের কর্মকাণ্ড এবং আচার আচরণ সদ্য খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়া সেই বাঘের মতন যে মুক্তির স্বাদ পেয়ে যা ইচ্ছে করে বেড়ায়! সবাই বাস থেকে নামার পর শিক্ষকগণ সবাইকে কঠোরভাবে নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দেন, কেউ বেশী দূরে যাবে না, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলা যাবে না, সবাই একসাথে থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

কিন্তু এতো সহজে কি আর এই সমস্ত বাঁদরের মত দুষ্টু ছাত্রদের নিয়মের শৃঙ্খলে বেধে রাখা যায়? সবাই শিক্ষকদেরকে কথা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু পরে কেউই আর সেই কথা রাখে না। যার যেদিকে ইচ্ছা ছুটে যেতে থাকে। আলভী তার দুইজন বন্ধু লিটু এবং জায়েদকে নিয়ে পাহাড়ের বেশ খানিকটা উঁচু অংশের দিকে এগিয়ে যায়।

 

কিছু দূর এগিয়ে যাবার পর লিটু ক্লান্ত হয়ে কুকুরের মত হাঁপাতে হাঁপাতে আলভীকে বলে,

 

- বন্ধু, আর যে হাঁটতে পারছি না!


- কি যে বলিস না! এতো অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে গেছিস? তুই কি হরলিক্স খাস না?


- দুষ্টামি রাখ! পাহাড় এতো খাঁড়া যে আর উপরে যাওয়াটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে। রোদের উত্তাপ এতো বেশী যে আমি এবং জায়েদ ঘেমেটেমে একাকার! তাছাড়া স্যাররা যদি জানতে পারেন যে আমরা এতোটা উপরে উঠেছি তবে খবর আছে। 


- আরে আয় না! এইতো আরেকটু উপরে যাব। তারপর তিন বন্ধু মিলে সেলফি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করলেই দেখবি আমরা কেমন ফেমাস হয়ে যাব! হাজার হাজার লাইক পড়বে আমাদের ছবির উপর!

 

অগত্যা লিটু এবং জায়েদ আলভীর জেদের কাছে হার মেনে সামনে এগিয়ে যায়। নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছেই উত্তেজনাবশত আলভী নিজের পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সেলফি তোলার জন্য তৈরি হয়। সেলফি এক ধরণের ইতিবাচক এবং সাময়িক আত্মমুগ্ধতা! অসাবধানতায় আলভী পা পিছলে পাহাড় থেকে পড়ে যায়! লিটু এবং জায়েদ মুহূর্তেই আলভীকে গাছ গাছালীতে পরিপূর্ণ গভীর খাদে অদৃশ্য হতে দেখে! আতঙ্ক তাদের চোখে মুখে। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে স্যারদেরকে এই খবরটা দিলে তারা দ্রুত সেখানে ছুটে যায়। 

 

আজব পাহাড় থেকে সকলেই আলভী আলভী বলে চিৎকার দিতে থাকে। উচ্চস্বরে সকলের চিৎকার আকাশে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার নিজেদের কানেই ফিরে আসছে যেন! তাদের চিৎকার আলভীর কানে কি পৌঁছাচ্ছে? কে জানে? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো বা না!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: