অসাধারণ প্রেমের অনুভূতি! [Bangla Story]

        ক্লাস ফাইভের ছাত্র রাজিব তারই ক্লাসের সুর্মি নামে একটি মেয়ের প্রেমে এতটাই মজেছে যেমন করে পানির ভেতরে পদ্ম ফুল সিক্ত হয় ঠিক তেমন! রাজিব মেয়েদের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে একটু বেশ লাজুক। আসলে একটু লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ এতো অল্প বয়সের একটি ছেলের লাজুক লাজুক ভাব থাকাটা একেবারেই সাধারণ একটি ব্যাপার।

 

        রাজিব প্রতিদিন সুর্মির দিকে তাকিয়ে থাকে; ক্লাসের ভেতরে কিংবা বাইরে। যখনই সে মেয়েটিকে দেখে, তখনই যেন সে হ্যারি পোটারের মত স্বপ্ন আর জাদুর রাজ্যে চলে যায়! তার স্যার ক্লাসে কি পড়াচ্ছে না পড়াচ্ছে তাতে তার বিন্দুমাত্র মনোযোগ থাকে না।

 

সুর্মির হাসি, তার কথা বলার ধরণ, তার তাকানো, তার বসার ধরণ- সবকিছু রাজিবের কাছে এতো সুন্দর লাগে যে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। এককথায়, ঠিক যেন কোনও রাজকীয় রাজকন্যার মতই সুর্মির সবকিছু!

 

রাজিব অনেকবার মনে মনে ঠিক করেছে যে সুর্মির সাথে যে কোনও একটি বাহানা দিয়ে কথা বলবে, কিন্তু কেন জানি একটি সঙ্কোচ এবং দ্বিধার কারণে তা হয়ে উঠে না। তার শুধু মনে হয় যদি সুর্মি রাগ করে, যদি তাকে হালকা ধরণের ছেলে মনে করে, যদি সে গিয়ে হেডমাস্টারকে তার নামে উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয়। এরকম নানা রকম নেতিবাচক ভাবনা রাজিবের মনকে বর্ষাকালে আকাশে উড়ে বেড়ানো কালো মেঘের মত ঢেকে ফেলে।

 

ইতোমধ্যে হয়েছে কি, ক্লাসের ক্যাপ্টেন সিয়াম কিভাবে যেন বুঝতে পেরেছে যে রাজিব সুর্মিকে খুব পছন্দ করে। সিয়াম দেখতে ছোট খাটো হাতির মত বললে ভুল হবে না! তার উপর তার আচার ব্যবহার যেন স্বৈরাচারী হিটলারের মতন! যাকে যা ইচ্ছা বলে, ধমক দেয়, কর্তৃত্ব দেখায়। এসব করার ক্ষমতা অবশ্য সে স্যারদের কাছ থেকেই পেয়েছে। তাই কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পায় না।

 

রাজিব যদিও শান্ত ধরণের ছেলে। এমনিতে সে খুব একটা রাগে না; কিন্তু যখন রাগে তখন আকাশে বিজলী চমকালে যেমন সেই আওয়াজ বহু দূরেও শোনা যায়, তার ক্রোধের আগুনও দাবানলের মত দূর থেকে দূরে ছড়াতে থাকে।

 

রাজিবের আত্মসম্মানে আঘাত আসলে সে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। হোক তা তার ভাই, বোন কিংবা বাবা মা। যাইহোক, সিয়ামেরও সুর্মির প্রতি দুর্বলতা আছে। তাইতো যখন সে জানতে পেরেছে যে রাজিব সুর্মিকে পছন্দ করে, তখনই যেন সে রাজিবকে তার টার্গেট করে ফেলেছে।

 

এখন থেকে ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাইরে রাজিবকে দেখলেই সিয়াম বাজে মন্তব্য করে, ইচ্ছে করে তার গায়ে জোরে ধাক্কা দেয়। যেহেতু সিয়াম ক্লাসের ক্যাপ্টেন, তাই তার পক্ষে অনেক ছাত্রই হেমিলনের বাঁশিওলার পেছনে ঘুরতে থাকা শিশুর দলের মত ঘুরতে থাকে!

 

রাজিবের পক্ষে তার দুয়েকজন বন্ধু ছাড়া তেমন আর কেউ নেই। তবুও রাজিবের মনোবল পাথরের মতই শক্ত। সে দ্যা পার্সুট অব হ্যাপিনেস সিনেমার নায়ক উইল স্মিথের মত ভাঙবে তবু মচকাবে না!       

 

একদিন সিয়ামের বাড়াবাড়ি চরমে পৌঁছে যায়। সে রাজিবকে সুর্মির কাছ থেকে একশো হাত দূরে থাকতে বলে। ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাকে একশো হাত দূরে থাকুন অনেকটা সেই রকম! সিয়াম ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলে রাজিবকে ইভটিজিং নয় অ্যাডামটিজিং শুরু করে দেয়! মারাত্মক ঝড়ে কবলে পড়ে যেমন সমুদ্রের তীরের বাধ ভেঙে পানির সাথে মিশে যায়, রাজিবের সহ্যের বাধও তেমন ভেঙে যায়। রাজিব তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সিয়ামকে একটা ঘুষি মারে!

 

ঘুষিটা এতো জোরে মারা হয়েছে যে সিয়ামের মত ইয়া মোটা ছেলেও বাতাসে কাঁপতে থাকা পাতার মত নড়ে উঠে! মুহূর্তেই তার বাম চোখ রক্তের মত লাল হয়ে যায়। রাজিব অবশ্য সেখানে সেই অবস্থাতেই দাঁড়ানো। রাগে সে গোখরা সাপের মত ফুঁসছে; তার শুভ্র মেঘের মত ফর্সা মুখ আপেলের মত লাল হয়ে গেছে।

 

সিয়াম কিছু না বলে সেই স্থান থেকে সরে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রাজিবের মনে এক অজানা আশঙ্কা ভূতের মত ভর করে! তার মনে হয় যে সিয়াম যদি হেডমাস্টারকে এই ব্যাপারে বলে তবে এই কথাটা তার বাবার কানেও যাবে; এমনও হতে পারে যে এই স্কুল থেকেই তাকে বিতাড়িত করা হতে পারে।

 

যাইহোক, ছুটির ঘণ্টা পড়তেই, আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করে রাজিব বাসার পথে রওনা হয়। বাসা কিন্তু স্কুল থেকে বেশ দূরে। সাধারণত সে হেঁটে হেঁটেই ঘরে ফিরে। যেহেতু আজ একটি ঘটনা ঘটেছে, তাই তার মন থেকে ভয়ের কালো ছায়াটি সহজে যাচ্ছে না।

 

রাজিব হাঁটছে এবং কিছুক্ষণ পরপর পেছনে তাকাচ্ছে। কেন জানি তার মনে হচ্ছে যে সিয়াম তার দলবল নিয়ে নিশ্চয়ই তাকে ধাওয়া করবে। কিছুদূর পথ চলতে না চলতেই রাজিব পেছনে তাকিয়ে দেখে পেটলা সিয়াম তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ধর তারে ধর বলতে বলতে রাজিবের দিকে এগিয়ে আসছে! সিনেমায় নায়ক গুণ্ডাদেরকে তাড়া করে করে মারে, কিন্তু এখানে বেচারা নায়ক রাজিব গুণ্ডাদের তাড়া খেয়ে ভয়ার্ত হরিণের মত দৌড়ে পালাচ্ছে!

 

রাজিব ডান বাম না দেখে এমন জোরে দৌড় দেয় যে খুব অল্প সময়েই সে বাসায় পৌঁছে যায়। সে জীবনে কখনও এতো দ্রুত দৌড় দিয়েছে কিনা সন্দেহ! চিতা বাঘও মনে হয় তার সাথে এমন দৌড়ে পরাজিত হত! উসাইন বোল্টতো পাত্তাই পেত না!

 

        বাসায় গিয়ে রাজিব মরুভূমির বুকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পথিকের মত হাঁপাতে থাকে। পরবর্তী কয়েকদিন সে আর স্কুলে যায়নি। তার মনে হয়েছে যে পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে তারপর স্কুলের পথ মাড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে! এ কয়েকটা দিন সুর্মিকে সামনাসামনি দেখতে না পারলেও দিনরাত রাজিবের মনের ক্যানভাসে তো তার ছবি দেয়ালে টানানো বাধাই করা ছবির মতই থাকবে!   

Author's Notes/Comments: 

Based on a true story! :)

View kingofwords's Full Portfolio