মূল রচনাঃ মাইকা জিয়েরভোগেল
অনুবাদকঃ মো. জিয়াউল হক
পুত্ররা তাদের বাবার কাছ থেকে আলাদা হয় যাতে তারা পুরুষ হতে পারে- বহু গল্পই এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করে লেখা। কিন্তু এটিও সমানভাবে সত্য যে কন্যাদেরকেও তাদের মায়ের কাছ থেকে আলাদা হতে হয়- এবং এই নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে খুব বেশী লেখা কিন্তু আমরা দেখতে পাই না। যাইহোক, নিম্নে বর্ণিত দশটি বই পাঠকদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেঃ
১। “দ্যা গ্রেট মাদার”- এরিক নিউম্যান
পাশ্চাত্য সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে আমরা আমাদেরকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর অংশ হিসেবে দেখতে পাই। কিন্তু আমাদের অবচেতন মনের গহীনে থাকা স্ত্রীলিঙ্গাত্মক দ্যোতনার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে? দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানী নিউম্যান ছিলেন কার্ল জাং-এর ছাত্র। এই ধ্রুপদী পুস্তকটিতে লেখক স্ত্রীলিঙ্গাত্মক দ্যোতনাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন পৌরাণিক গল্পের আলোকে গুহার গায়ে ছবি আঁকা থেকে শুরু করে একেশ্বরবাদী ধর্ম পর্যন্ত।
২। “দ্যা বুক অব রুথ”- (অনুমোদিত কিং জেমস সংস্করণ)
ওল্ড টেস্টামেন্ট সময়ে রুথ এবং তার শাশুড়ি নওমি খুব ভালো করেই জানে যে কিভাবে খেলা খেলতে হয়, কখন থামতে হয় এবং নিজের প্রভাব ও সম্পর্কের জোর খাটিয়ে অনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করে নিতে হয়। এই গল্পটি আমাদের কাছে কাব্যিকভাবে এটা মনে করিয়ে দেয় যে মহিলাদের ঐতিহ্যগত ভূমিকা কতই না সঙ্কীর্ণ ছিল- এমনকি যদিও প্রথম দর্শনে এটা দৃশ্যমান হতে পারে যে সেই সময় মহিলাদের আত্মকেন্দ্রিক পরিচালনের জন্য ক্ষেত্র ছিল।
৩। “দ্যা ব্লু রুম”- হ্যান ওরস্টাভিক
একজন মা তার যুবতী কন্যাকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। এটি একটি অসাধারণ বই যেটিতে একটি মেয়ে তার মায়ের কাছ থেকে দূরে যাবার জন্য যে আভ্যন্তরীণ দৃঢ় প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় তার পরিস্কার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। বইটি আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে জীবনে যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন, আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে।
৪। “এ্যা ভেরি ইজি ডেথ”- সিমন দ্যা ব্যূভোঁয়া
এটি বইটি একটি শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম। লেখিকা তার মায়ের শেষ জীবনের কিছু কথা বর্ণনা করেছেন এবং আসন্ন মৃত্যুর আগমুহূর্তে মা এবং মেয়ের সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেছেন। বইটিতে মা ও মেয়ের সম্পর্ককে বেশ সহানুভূতি এবং সততার সাথেই উপস্থাপন করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি জ্ঞানগর্ভ বই।
৫। “সার্চিং ফর মার্সি স্ট্রিটঃ মাই জার্নি ব্যাক টু মাই মাদার অ্যান সেক্সটন”- লিণ্ডা গ্রে সেক্সটন
অ্যান সেক্সটন অসাধারণ কবিতা লিখতেন। কিন্তু তিনি মা হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে সমর্থ হননি। লিণ্ডা গ্রে সেক্সটনের ছোটবেলার বোধশক্তিসম্পন্ন এবং হৃদয়বিদারক বর্ণনা আমাকে এটা অনুভব করতে বাধ্য করেছে যে সৃষ্টিশীল লেখিকা বা শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিশীলতার ভুবনে এমনভাবে বিচরণ করেন যে তারা তাদের সন্তানদের কথা প্রায়ই ভুলে যান বলা চলে; তাদের সন্তানদের প্রতিও দায়িত্ব আছে যা এক অর্থে আলোর ভুবনে ফিরে আসার মত।
৬। “প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস”- জেইন অষ্টেন
সকল মাতার মাতা হচ্ছেন মিসেস বেনেট। তার পাঁচ কন্যা এবং নিজের জন্য কোনও উচ্চাশা নেই; তার আশা একটাই তা হচ্ছে কন্যাদের জন্য বর খুঁজে দেয়া। বইটির শেষের দিকে লেখিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেনঃ “আমি যদি বলতে পারতাম, তার পরিবারের তরে, যে তার গভীর বাসনার প্রাপ্তি... তাকে বিচক্ষণ, সহৃদয়, সুবিদিত মহিলায় পরিণত করেছে বাকি জীবনের জন্য...” এককথায় বইটি বেশ চিত্তবিনোদনকারী।
৭। “এ্যা সিসিলিয়ান রোম্যান্স”- অ্যান রেডক্লিফ
একটি মধ্যযুগীয় প্রাসাদে একজন কর্তৃত্বপরায়ণ পিতা তার দুই সুন্দরী যুবতী মেয়েকে বন্দী করে রেখেছে। ভূগর্ভস্থ কক্ষ হতে রহস্যময় ঠকঠক আওয়াজ ভেসে আসে। মাতা এবং কন্যাকে কেন্দ্র করে একটি কাল্পনিক গল্প যেখানে একজন সুদর্শন প্রেমিক আছে। তাছাড়া গল্পটি সুন্দরভাবে শেষ হয়।
৮। “দ্যা ডেভিল কিসড হারঃ দ্যা স্টোরি অব মেরী ল্যাম্ব”- কেথি ওয়াটসন
মেরী ল্যাম্ব চার্লস ল্যাম্বের বোন এবং কোলরিজ ও ওয়ার্ডসওয়ার্থের বন্ধু ছিলেন। তিনি “টেইলস ফ্রম শেক্সপিয়ারঃ চিলড্রেনস ক্লাসিক্স” গ্রন্থটির সহ-লেখিকা। ১৭৯৬ সালে মেরী ল্যাম্ব তার মাকে হত্যা করেছিলেন। ওয়াটসন চমৎকারভাবে নারী এবং সেই সময়টাকে অঙ্কন করেছেন এবং আমাদের ভাবনার খোরাক যুগিয়েছেনঃ মেরী কি অপরাধী ছিল- নাকি তার সমাজটাই উন্মাদ ছিল?
৯। “দ্যা গ্লাস এ্যাসে”- অ্যান কার্সন
“আমার মায়ের নিজস্ব ধারা আছে কোনও বিষয়ের উপসংহার টানার।/ আইন তিনি খুব একটা পছন্দ করেননি কখনও।/ কিন্তু তিনি আমার একজন পুরুষ বেছে নেয়া এবং জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ধারণাকে পছন্দ করতেন”। কবি অ্যান কার্সনকে যথাযথ সরলতার প্রভু বলা যায়। এটি একটি কবিতা যেখানে একটি প্রেম কাহিনীর সমাপ্তি বিদ্যমান যার সাথে মা-মেয়ের সম্পর্কেরও মিল লক্ষণীয়। মোটের উপর বিবরণদাতাকে শেষে আমরা আবার তার মায়ের রান্নাঘরে বসে থাকতে দেখি।
১০। “অন মেট্রিসাইডঃ মিথ, সাইকোএনালিসিস এন্ড দ্যা ল অফ দ্যা মাদার”- এম্বার জেকবস
দেবতা জিউসের মাথা থেকে দেবী এথেনা সশস্ত্র ভঙ্গিতে দৃশ্যমান হলেন। এই পৌরাণিক কাহিনীর অজানা অংশ হচ্ছে এই যে জিউস সন্তানসম্ভবা মেটিসকে গিলে ফেলেছিল। সে জিউসের অভ্যন্তরেই এথেনাকে জন্ম দিল। এখানে জেকবস অরিষ্টিয়া পৌরাণিক কথার একটি অসাধারণ পুনঃব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে পথ দেখান যে কিভাবে আমরা আমাদের চিন্তাকে পরিবর্তন করতে পারি। বইটি অবশ্য পাঠ্য এবং এটির অর্থ বুঝতে হলে আগে অরিষ্টিয়ার কাহিনী পড়ার প্রয়োজন নেই।