যখন সুমনা কলেজে পড়ে, তখন তার পড়াশুনা যাতে খুব ভালো করে হয় তাই তার বাবা শিহাব উদ্দীন একজন গৃহ শিক্ষকের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষকের নাম জলিল মিয়া। তিনি একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।
জলিলের পড়ানোর ধরণে সুমনা যারপরনাই মুগ্ধ! এর আগে এতো সহজে সবকিছু কেউ তাকে বুঝিয়ে দেয়নি। পড়াশুনাটা আগে কাঁধে পাথরের টুকরার মতই মনে হত কিন্তু এখন পড়তে তার ভালোই লাগে। কোনও বিষয় যদি সহজে বোঝা যায় তাহলে পড়ালেখাটা কষ্টের নয় বরং আনন্দের জন্ম দেয়!
ইতোমধ্যে সুমনা তার বাবাকে এবং মা রিনা খানমকে জলিল সম্পর্কে অনেক প্রশংসামূলক কথা বলেছে। মেয়ের আনন্দে পিতা মাতাও বেশ উচ্ছ্বসিত। তবে সাপ যেমন ধীরে ধীরে তার লেজ পাল্টাতে থাকে, এনাকণ্ডা যেমন অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তার শিকারকে গিলে খায়, জলিল মিয়াও ঠিক তেমনই সময়ের সাথে সাথে তার বিকৃত রূপ উন্মোচন করতে থাকে।
একদিন সুমনা জীববিদ্যা পড়ার জন্য জলিলের কাছে বই নিয়ে আসে। জলিল তার কাঁধে হাত রেখে বলে-
- জীববিদ্যা ভালো করে বুঝতে হলে তোমাকে ইন্টারনেট থেকে কিছু জিনিস ভালো করে জানতে ও দেখতে হবে।
- কি দেখতে হবে স্যার? আমিতো নিজে নিজে পারব না!
- কে বলেছে পারবে না? অবশ্যই পারবে। তোমার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার আছে না?
- হ্যাঁ, দুটোই আছে।
- আমি তোমাকে কয়েকটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিচ্ছি, তুমি গুগলে গিয়ে খুঁজলে সহজেই পেয়ে যাবে, ঠিক আছে?
- আচ্ছা স্যার, পারব। আর যদি কোনও সমস্যা হয় তবে আপনাকে জানাবো।
- ঠিক আছে। আজ আর পড়াব না। তুমি ইন্টারনেট থেকে তথ্য নাও। আমি কাল আসব।
জলিল সুমনার ডায়রিতে ঠিকানাগুলো লিখে দিয়ে সেগুলো সম্পর্কে অন্য বন্ধুদেরকে বলতে বারণ করে। এমনকি তার বাবা মাকেও যাতে না বলে সে ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়। সুমনাও স্যারকে কথা দেয় যে সে তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সুমনা ঘুমাতে যাবে এমন সময় হঠাৎ স্যারের কথা মনে পড়ে। সে ভুলেই গিয়েছিল যে ইন্টারনেট থেকে কিছু তথ্য যোগাড় করে রাখতে হবে। আগামীকাল স্যারের বকা খাবার আগে এখনই তাকে কিছু একটা করতে হবে।
সুমনা তার ল্যাপটপ নিয়ে টেবিলে বসে। স্যার যে ওয়েবসাইটের তালিকা দিয়েছিল সেগুলো থেকে প্রথমটাতে প্রবেশ করে; কিন্তু মুহূর্তেই তার চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে, তার জন্য সে মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। পারকিন্সন্স রোগাক্রান্ত মানুষের মত সুমনার সারা শরীর কাঁপতে থাকে! পুরুষ ও নারীদের নগ্ন দেহ এবং রগরগে যৌন দৃশ্যে ভরপুর ছবি এবং ভিডিও ভর্তি সেই ওয়েবসাইটে!
সুমনার মাথা হতে পা পর্যন্ত যেন হাজার ভোল্টের কারেন্ট একবার উপর থেকে নিচে আবার নিচ থেকে উপরে প্রবাহিত হচ্ছে! সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সে ভাবে যে হয়তো স্যার ভুল করে এই ঠিকানা দিয়েছে; আবার এমনও হতে পারে যে এটি কোনও ভাইরাসের কাজ!
সুমনা ঐ অশ্লীল ওয়েবসাইট বন্ধ করে এবার দ্বিতীয় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। এটাতেও একই রকম যৌন সুড়সুড়ি দেয়া ছবি; নগ্নতা এবং অবাধ যৌনতার ছড়াছড়ি! এমন সব বিকৃত যৌন কর্মকাণ্ড বিদ্যমান যে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়!
সুমনার বয়স খুব বেশী না হলেও সে বুদ্ধিতে কাঁচা নয়। সে বোঝে স্যার তাকে কেন এইসব ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়েছে। স্যারের আসল উদ্দেশ্য জানতে তার বাকি নেই। যে স্যারকে সে এতদিন দেবতার মত মনের মন্দিরে আশ্রয় দিয়েছে, সেই মানুষটিকে এখন আর মানুষ মনে হয় না; মনে হয় যেন একটি রাস্তার কুকুর যার লাজ নেই, নেই কোনও আত্মসম্মানবোধ!
পরদিন সকালে কলেজে যাবার আগে সুমনা তার মাকে বিষয়টা খুলে বলে। তার মায়ের কাছে সে একটি খোলা বইয়ের মত যার সব পৃষ্ঠা সহজেই পড়া যায়। সে কখনও কোনও কিছু লুকায় না; লুকাতে পারে না। মেয়েরা মায়ের কাছ থেকে স্পর্শকাতর অনেক বিষয় লজ্জায় লুকাতে চায়, আবার আকার ইঙ্গিতে এমন কিছু করে বা বলে যাতে মা সেই লুকনো বিষয়গুলো বুঝতে পারে!
তৎক্ষণাৎ রিনা তার স্বামীকে বিষয়টা জানায় এবং জলিলকে আর পড়াতে আসার জন্য বারণ করতে বলে। শিহাব কথাটা শোনামাত্রই রাগে তার চোখ মুখ তরমুজের মত লাল হয়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে জলিলকে সে জেলের ভাত খাওয়াবে। কিন্তু রিনার শত অনুরোধের কাছে সে হার না মেনে পারে না। শিহাব বহু কষ্টে নিজের ক্রোধকে সংযত করে জলিলকে আর না আসতে বলে। জলিল এর কারণ জানতে চাইলে শিহাব কোনও উত্তর না দিয়ে চৌদ্দ দিনের বেতন তার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানিয়ে ফোনটা রেখে দেয়।
সুমনা আর আগের মত নেই! তার মনের দুনিয়ায় যে পরিবর্তন ঘটেছে সেই পরিবর্তনের ধাক্কা তাকে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের রাজ্যে পরিচালিত করেছে। এখন সে আর কাউকে সহজে বিশ্বাস করে না। অজানা অচেনা সব ছেলে বা প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে সে তার বিকৃত স্যারের অবয়ব দেখতে পায়!