মহান লেখকদের জীবন সম্পর্কে ১০টি বিস্ময়কর তথ্য

লেখকঃ সারাহ স্টোডলা


অনুবাদকঃ মো. জিয়াউল হক


 

আমার নতুন বই প্রসেসঃ দ্যা রাইটিং লাইভস অব গ্রেট রাইটার্স”-এ আমি বিংশ শতাব্দীর সেরা ১৮ জন লেখকের কৌশল, অভ্যাস এবং অনুপ্রেরণা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই বই লেখার আনন্দের একটি অংশ লেখকদের (আমি ভেবেছিলাম তাদেরকে ইতোমধ্যেই খুব ভালো করেই জানি) সম্পর্কে অপ্রত্যাশিত তথ্যগুলির পর্যায়ক্রমিক আবিষ্কারের সাথে আসে এখানে সবচেয়ে বিস্ময়কর, বিপরীতমুখী, কখনও কখনও অবাক করা ১০টি তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছেঃ


১। জেমস জয়েস ৩০ বছর বয়সের পর কখনো আয়ারল্যান্ডে পা রাখেননি


একজন লেখককে তার পছন্দের বিষয়ে লেখার জন্য দূরত্বের প্রয়োজন; জয়েস যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়ারল্যান্ড ত্যাগ করেছিলেন, তারপর বাকি জীবন এটি (দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা) বিবেচনা করে অতিবাহিত করলেন১৯০৪ সালে, ২২ বছর বয়সে, তিনি ইতালির ট্রিয়েস্টেতে স্থায়ীভাবে সেই মহিলার সাথে (নোরা) বসবাস শুরু করলেন যিনি অবশেষে তার স্ত্রী হবেন। ঘটনাক্রমে ১৯০৪ সালে তার অনন্য সাহিত্যকর্ম ইউলিসিস ভিত্তি লাভ করেজয়েসের জন্য, ডাবলিন সবসময় ১৯০৪ সালের ডাবলিন ছিল, বলেছেন ডেভিড নরিস, যিনি ডাবলিনের জেমস জয়েস সেন্টার পরিচালনা করেন। এমনকি ১৯৩১ সালে তার বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও তাকে তার দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।


২। টনি মরিসন তার মধ্য ত্রিশের দশক নাগাদ লেখা শুরু করেননি


আনন্দের সাথে যখন তার ত্রিশের দশকে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত, মরিসন শুধুমাত্র মজা করার জন্য একটি লেখার দলে যোগ দিয়েছিলেন এবং এতে একটি ছোট্ট কালো মেয়ে সম্পর্কে গল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন যার ইচ্ছা ছিল যদি তার নীল চোখ থাকতোমরিসনের বিবাহ বিচ্ছেদের পর, তিনি গল্পটির উপর কাজ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এটি তার প্রথম উপন্যাসে পরিণত হলোঃ “দ্যা ব্লুয়েস্ট আই”। মরিসনের বয়স যখন ৩৯, তখন বইটি প্রকাশিত হয়েছিল।


৩। নাবোকভকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছিল


তিনি রাশিয়ায় ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তার পরিবার বলশেভিক বিপ্লব থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, ভ্লাদিমির নাবোকভ বুঝলেন যে তার জীবিকা নিজেকেই অর্জন করতে হবে- প্রথমে ইউরোপে এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথমদিকে তিনি ছাত্রদের পড়াতেন এবং টেনিস শেখাতেন। আমেরিকায় তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দশক পূর্ণকালীন শিক্ষকতা করেছিলেন। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কাছ থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্মান অর্জন করেছিলেন, ১৯৫৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ললিতা প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত ভ্লাদিমির নাবোকভ কোনও বাণিজ্যিক সাফল্য পাননি। পরের বছর তিনি লেখালেখি ব্যতীত সব চাকুরী ত্যাগ করলেন।


৪। জ্যাক কেরোয়াক কখনো গাড়ি চালানো শিখেনি


কেরোয়াক কিশোর বয়সে বৃত্তি পেয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে চলে গিয়েছিলেন বোর্ডিং স্কুলে এবং তারপরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। নিউ অর্লিন্স অথবা মেক্সিকোসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবার সময় কেরোয়াক তার বন্ধু নীল ক্যাসেডির নির্দেশনা এবং বাসের মতন যানবাহনের উপরই নির্ভরশীল ছিলেন।   


৫। কাফকা কখনো কোনও উপন্যাস শেষ করেনি  


কাফকার মৃত্যুর পর তার বন্ধু ব্রড কাফকার তিনটি সাহিত্যকর্মকে উপন্যাস হিসেবে সংগঠিত করেছিলেন। কাফকা নিজে কখনোই মেরিকা”, দ্যা ট্রায়াল বা “দ্যা ক্যাসেল”-কে সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হননি এবং প্রকৃতপক্ষে তিনি চেয়েছিলেন ব্রড যেন কাফকার মৃত্যুর পর এই লেখাগুলোসহ অন্যান্য সাহিত্যকর্মও ধ্বংস করেন। ব্রড কাফকার সেই ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যার ফলে আজ কাফকার তিনটি প্রকাশিত উপন্যাস বিদ্যমান।


৬। “ইনফিনিট জেস্ট” তিনটি পৃথক গল্প হিসেবে শুরু হয়েছিল


তার বিশ বছর বয়সে ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস একটি ভিডিও নিয়ে একটি গল্পের কাজ শুরু করেছিলেন যে ভিডিওটি মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল সেটাই দেখে। এর পরপরই, তিনি একজন টেনিস প্রতিভা এবং তার অদ্ভুত পরিবার সম্পর্কে আরেকটি গল্প শুরু করলেন। বেশ কয়েক বছর পরে, বোস্টনের বাইরে একটি বাড়িতে বসবাস করার সময় ওয়ালেস রিহ্যাবে দেখা একজনকে নিয়ে একটি গল্প শুরু করলেন। চরিত্রটির নাম দেয়া হয়েছিল ডন গেটলি। এরপর তিনি উপলব্ধি করলেন যে তিনটি গল্প একসাথে সম্পর্কিত এবং “ইনফিনিট জেস্ট” আকার নিতে শুরু করলো।


৭। জর্জ অরওয়েল “উই” নাম একটি উপন্যাস থেকে “১৯৮৪” এর প্লট ধার করেছিলেন


১৯৪৬ সালে অরওয়েল ট্রিবিউন’ এর জন্য ইয়েভগেনি জেমিয়াটিনের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস উই পর্যালোচনা করেছিলেন এবং যেটিকে তিনি “বেশ দুর্বল এবং অনিয়মিত পটভূমি” বলে অভিহিত করেছিলেন, তবে তিনি এটিকে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে প্রাসঙ্গিক” এ কথা বলতেও ভুলেননি “উই” ভবিষ্যতে কাঁচের তৈরি একটি শহরের পটভূমিতে স্থাপিত যাতে সরকার একজন বিগ ব্রাদারের মত ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে প্রতিটি কোণে তার জনগণকে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়। এর পটভূমি একজন পুরুষ এবং নারীকে কেন্দ্র করে যারা প্রেমে পড়ে এবং একসাথে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। চেনা লাগছে? অরওয়েল পর্যালোচনাটি লেখার তিন বছর পর “১৯৮৪” প্রকাশিত হয়েছিল


৮। “অন বিউটি”র প্রথম ২০ পৃষ্ঠা লিখতে জ্যাডি স্মিথের প্রায় দুই বছর লেগেছিল


প্রথম ২০ পৃষ্ঠা সবসময় স্মিথের জন্য সবচেয়ে কঠিন হয়। তিনি বলেন যে এই প্রথম অধ্যায়টি হচ্ছে সেই অংশ যখন বইটির পরিচয় উদ্ভূত হয় এবং কিছু শব্দের চয়ন করে জিনিসটির পুরো প্রকৃতি পরিবর্তন হয়। কিন্তু তার ২০০৮ সালের উপন্যাস অন বিউটি” এর জন্য প্রথম পৃষ্ঠাগুলো একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ সরবরাহ করেছিল। অবশেষে প্রায় দুই বছর কাজ করে পৃষ্ঠাগুলোকে গোছানোর পর, তিনি উপন্যাসের বাকি অংশটি মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে শেষ করেছিলেন।


৯। ফিটজেরাল্ড একটি ছোটগল্পের জন্য আজকের ডলারে $৫৫,০০০ পেয়েছিলেন


১৯২০-এর দশকের শেষে তার কর্মজীবনের উচ্চতায়, এফ স্কট ফিটজেরাল্ড ‘দ্যা সেটারডে ইভনিং পোস্ট’ এবং স্ক্রিবনার’ এর মত প্রকাশনা থেকে গল্প প্রতি $,০০০ নিতেন। ফিটজেরাল্ড সতর্কতার সাথে যে খাতায় লেখালেখি থেকে অর্জিত অর্থের হিসেব রাখতেন, সেটি আজও বিদ্যমান; এখন আমরা জানি যেসব গল্পের জন্য তিনি এই সর্বোচ্চ ফি পেয়েছিলেন তার মধ্যে রয়েছে দ্যা ব্রাইডাল পার্টি এবং “ব্যাবিলন রিভিজিটেড”


১০। ভার্জিনিয়া উলফের নিজের কক্ষটি ছিল একেবারে অগোছালো


উলফ বলেছিলেন যে প্রত্যেক লেখকের একটি জায়গা প্রয়োজন যেখানে স্বাধীনভাবে চিন্তা করা যায়। তবে যারা উলফকে ঘনিষ্ঠভাবে জানতেন তারা বাস্তবতাটি দেখতে পেলেন। তার স্বামী লিওনার্ড কক্ষটি সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলেন, পুরানো কলমের নিব, সুতোর টুকরো, ব্যবহৃত দিয়াশলাই, মরচে পড়া কাগজের ক্লিপ, মোচড়ানো খাম, ভাঙা সিগারেট হোল্ডার, ইত্যাদি”। অন্যদিকে ভিটা স্যাকভিল-ওয়েস্ট উলফের লেখা কক্ষে অবিশ্বাস্য বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বস্তুএর কথা উল্লেখ করেছিলেন।