[গুলিবিদ্ধ এক পাকিস্তানী সেনা রক্তাক্ত বুকে হাত রেখে কষ্টে গোঙাতে গোঙাতে মঞ্চে প্রবেশ করে মঞ্চের ঠিক মাঝখানে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে মারা যায়। ২ জন মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল উঁচিয়ে উল্লাস করে “আমরা স্বাধীন হবোই” “বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই” বলতে বলতে মঞ্চে প্রবেশ করেন। তাদেরকে অনুসরণ করে বেশ কিছু শিশুও আনন্দ প্রকাশ করতে করতে প্রবেশ করে।]
১ম মুক্তিযোদ্ধা [মৃত পাক সেনার পেটের উপর পা রেখে রাইফেল উঁচিয়ে বলেন]: আমরা স্বাধীন হবোই!
২য় মুক্তিযোদ্ধা: আমরা স্বাধীন হবোই!
মঞ্চে উপস্থিত শিশুরা [একসাথে ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বলে]: আমরা স্বাধীন হবোই!
[দূরে কোথাও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। মঞ্চে উপস্থিত ২ জন মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল তাক করে দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করেন। শিশুরা এখনো মঞ্চে। কেউ বসা আর কেউ দাঁড়ানো অবস্থায়।]
অনল: [আরিফকে বলে] কিরে, তোর কি মনে হয়? এই যুদ্ধে কে জিতবে? বাঙালিরা নাকি পাকিস্তানীরা?
আরিফ: আমি একশো ভাগেরও বেশী নিশ্চিত, বাঙালিরাই জিতবে!
সুইটি: একদম ঠিক কথা! আমরাই জিতবো!
[বাকি শিশুরাও একসাথে বলে, “আমরাই জিতবো!” “আমরাই জিতবো!” কাছেই পাকিস্তানী সৈন্যদের উর্দু ভাষায় কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। শিশুরা ভয়ে দৌড়ে মঞ্চ ত্যাগ করে। মঞ্চে একজন মহিলা আর তার ছোট কন্যা আলেয়া প্রবেশ করে।]
আলেয়া: [মায়ের হাত নেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে] মা, ও মা!
জান্নাত: কি?
আলেয়া: বাবা কোথায় গেছে?
জান্নাত: তোর বাবা যুদ্ধে গেছে।
আলেয়া: বাবা কখন আসবে, মা, বলো না, কখন আসবে?
জান্নাত: [কান্নারত আলেয়াকে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন] আসবে মা, আসবে, আল্লাহ্র কাছে দোয়া করি তোর বাবা যেন সহি সালামতে ঘরে ফিরে আসে!
আলেয়া: [রাস্তার দিকে তাকিয়ে আরও জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলে] বাবা, ও বাবা, তুমি আসো! বাবা!
[রাইফেল হাতে দৌড়াতে দৌড়াতে একজন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চে প্রবেশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সে চোখ বন্ধ করে হাঁপাচ্ছে। জান্নাত তাকে চিনতে পেরেছে। লোকটি তার স্বামী রহমত এর বন্ধু বিজয়।]
জান্নাত: [বিজয়ের হাত নেড়ে বলে] বিজয়, এই বিজয়!
বিজয়: [চোখ খুলে উঠে বসে দেখে] ভাবী!
জান্নাত: আমার স্বামী রহমত কোথায়, বিজয়? সে কোথায়?
বিজয়: [তার চোখে পানি চলে আসে, কষ্টে ইতস্তত করে] ইয়ে, মানে।
জান্নাত: [কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে] বলো বিজয়, বলো, সে কোথায়? সত্যি করে বলো!
বিজয় [কাঁদতে কাঁদতে বলে]: বিজয় আর নেই, ভাবী, বিজয় আর নেই! সে যুদ্ধে শহীদ হয়েছে!
জান্নাত [এ কথা শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েক সেকেন্ড পর আলেয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে]: হে আল্লাহ্! তুমি এই অন্যায়ের বিচার করো, আল্লাহ্! তুমি এই অন্যায়ের বিচার করো! অত্যাচারী পাকিস্তানীদের তুমি ধ্বংস করো মাবুদ! আমাদেরকে স্বাধীন করে দাও, আল্লাহ্, স্বাধীন করে দাও!
[জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে আলেয়াকে নিয়ে হেঁটে মঞ্চ ত্যাগ করে। বিজয়ও রাইফেল কাঁধে নিয়ে তাদেরকে অনুসরণ করে এগিয়ে যায়।]
[সমাপ্ত]