পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে করোনা ভাইরাসের গোলাকার লালচে ছবিটির দিকে তাকিয়ে স্কুলপড়ুয়া ঈশানের সেটাকে স্পঞ্জের বল ভেবে ভ্রম হয়! সে ঝড়ের মতন ছুটে গিয়ে তার বাবা জায়েদকে প্রশ্ন করে,
- বাবা! বাবা!
- কিরে, এতো উত্তেজিত হয়ে আছিস কেন? মাথা ঠাণ্ডা করে বল কি হয়েছে?
- বাবা, এই যে দেখো, এই ছবিটা!
- দেখি, হুম, দেখেছি, তো কি হয়েছে?
- বাবা, আমার কাছে হুবহু একই রকম একটি লাল স্পঞ্জের বল আছে, এই যে দেখো!
ঈশান তার হাতে থাকা লাল বলটি তার বাবার দিকে এগিয়ে দেয়।
জায়েদ চোখে চশমা পড়ে বলটি হাতে নিয়ে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেটিকে দেখেন। তিনি মুচকি হেসে তার ছেলেকে বলেন,
- আরে! তুইতো ঠিকই বলেছিস। পত্রিকার এই ছবির সাথেতো তোর এই বলটির হুবহু মিল! কোত্থেকে কিনেছিস এটা?
- কয়েকদিন আগে আমাদের স্কুলের মাঠে মেলা হয়েছিল, সেখান থেকে কিনেছি। কিন্তু বাবা, আমার একটা প্রশ্ন আছে।
- কি প্রশ্ন?
- এই যে পত্রিকায় এই লাল বলের ছবি, তাছাড়া কিছুক্ষণ পরপর টিভিতে, খবরে ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে এটার ছবি দেখানো হচ্ছে, এটার কারণ কি? কি আছে এই বলে?
- ও, এখন বুঝতে পেরেছি। তুই আসলে পত্রিকায় এই যে বলের মতন দেখতে ছবিটি দেখছিস, এটা কিন্তু কোনও বল নয়!
- বল নয়! তাহলে কি?
- এটা একটা মারাত্মক ছোঁয়াচে ভাইরাস! নাম ‘করোনা’!
- ‘করোনা’? এই ভাইরাসের নাম আগেতো কখনো শুনিনি!
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা [ডব্লিউএইচও] এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় COVID 19। CO = Corona, VI = Virus, D = Disease আর 19 মানে 2019 অর্থাৎ 2019 সালে ভাইরাসটির জন্ম হয়েছে। এটিকে NCOV বা Novel Corona Virus নামেও ডাকা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে এমন করোনা ভাইরাসের ৬টি প্রজাতি পাওয়া গেছে, তবে বর্তমান COVID 19-সহ করোনা ভাইরাসের মোট সংখ্যাটি হচ্ছে ৭। এমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পতো এই ভাইরাসের নাম দিয়েছেন ‘চাইনিজ ভাইরাস’!
- বেশ ইন্টারেস্টিংতো! ‘চাইনিজ ভাইরাস’? কেন বাবা?
- কারণ কি হতে পারে একটু বুদ্ধি খাটাতো দেখি?
- হুম, এক মিনিট, দাঁড়াও, বলছি, ‘চাইনিজ ভাইরাস’, ‘চাইনিজ’ মানে চীনের সাথে সম্পর্কিত; হ্যাঁ, বুঝেছি, এই ভাইরাসটির জন্ম হয়েছে চীনে, তাই না?
- ওয়েল ডান মাই বয়! হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছিস! ২০০২ সালে SARS [Severe Acute Respiratory Syndrome] নামক যে ভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল এবং ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল সেই ভাইরাসটিও প্রথম সংক্রমিত হয় চীনে এবং সেটিও করোনাভাইরাসের একধরণের প্রজাতি ছিল।
- কি বলছো? চীন কি তাহলে ভাইরাসের কারখানা নাকি?
- হা, হা, হা!
- আচ্ছা বাবা, একদিন ক্লাসে আমাদের বিজ্ঞানের স্যার বলেছিলেন- ছোঁয়াচে ভাইরাস মানে ভাইরাসটি একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে যেতে পারে, তাই না?
- ঠিক তাই।
- এটি কি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করে?
- হ্যাঁ, শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই ছড়ায়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়। তবে ইটালির গবেষকগণ সাম্প্রতিক গবেষণায় পেয়েছেন যে ভাইরাসটি মানুষের চোখেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।
- কিন্তু বাবা, ভাইরাসটি কারো শরীরে প্রবেশ করলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
- এটা বেশ ভালো প্রশ্ন করেছিস তুই! শোন- সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় গড়ে পাঁচ দিন পর। জ্বর, কাশি, ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত
এ রোগের প্রধান লক্ষণ। ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, তারপর শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় সাত দিন পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় এই যে এটি ফুসফুসেও আক্রমণ করে, যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার ইনকিউবেশন পিরিয়ড [Incubation Period] স্থায়ী থাকে ১৪ দিন পর্যন্ত। আবার আরও কিছু গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে ২৪ দিন পর্যন্ত এর স্থায়িত্ব থাকতে পারে।
- ‘ইনকিউবেইশান পিরিয়ড’ মানে?
- ‘ইনকিউবেইশান পিরিয়ড’ মানে হচ্ছে এই যে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে লক্ষণ প্রকাশ করতে ঠিক কতোদিন সময় নেয় সেটা। এই যে মোবাইল ফোনে দেখ, bbc.com-এর মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা পরিচালিত ৫৬ হাজার আক্রান্ত রোগীর উপর চালানো এক জরিপের পরিসংখ্যান নিম্নরূপ:
· “এই রোগে ৬% কঠিনভাবে অসুস্থ হয় - তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়।
· ১৪% এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা যায়। তাদের মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়।
· ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায় - জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারো কারো নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে”।
- ও, বুঝেছি বাবা। তাছাড়া রোগীর শরীরে আর কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়?
- এখনতো যতো দিন গড়াচ্ছে, ততোই এ রোগের নতুন নতুন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।
- যেমন?
- যেমন, ডায়রিয়া, মাথায় ও মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরের রক্ত জমাট বেধে যাওয়া, নাকে কোনও ঘ্রাণ না পাওয়া, আঙুলে, নাকে, পায়ের তলায় ঠোসার মতন হওয়া [Covid Toes], কোনও কোনও ক্ষেত্রে শরীরের রং বদলে যাওয়া ইত্যাদি।
- শরীরের রং বদলে যাওয়া মানে?
- মানে রোগীর শরীরের রং সাদা ছিল কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হবার পর কালো হয়ে গেছে! চীনে এমন দুজন ডাক্তারের শরীরের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। পত্রিকাতেও এসেছে বিষয়টা। পত্রিকা পড়লে বা খবর শুনলে আগেই জানতে পারতি।
- শরীরের রং পরিবর্তন হওয়া, রক্ত জমাট বাধা- এসবতো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে, তাই না? আমার এক বন্ধু একদিন বলেছিল যে মাইকেল জ্যাকসন আগে কালো ছিল, কিন্তু পরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ঔষধ সেবনের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তার গায়ের রং সাদা হয়ে যায়।
- হুম, তোর কথায় বেশ যুক্তি আছে ঈশান। এটাও শোনা যায় যে ১৯৮৪ সালের দিকে মাইকেল জ্যাকসনের ভিটিলাইগোউ [Vitiligo] নামক রোগ হলো; এ রোগে মানুষের চামড়া ধীরে ধীরে সাদা হতে থাকে। যে ডাক্তার জ্যাকসনের পোস্ট মর্টেম [Post Mortem] করছিলেন, তিনিও লক্ষ্য করলেন যে তার শরীরে ভিটিলাইগোউ রোগের লক্ষণ ছিল। কেউ কেউ আবার এটাও বলেন যে মাইকেল জ্যাকসন নাকি বেশ দামী ইনজেকশন অথবা ক্রিমের মাধ্যমে ইচ্ছে করেই শরীরের রং পরিবর্তন করেছিলেন। সে যাইহোক, একটু সময় লাগলেও করোনাসংক্রান্ত মূল কার্যকারণগুলো ধীরে ধীরে সূর্যের আলোর মতো উন্মোচিত হবেই!
- এ রোগে কি সবাই আক্রান্ত হতে পারে?
- হ্যাঁ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলেই। তবে শিশুরা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে আছে। করোনা আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ কোনো ধরণের অসুস্থতা রয়েছে তারা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। চীন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই রোগে নারীদের তুলনায় পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা একটু বেশি। করোনা ভাইরাস এতোই ভয়ানক যে এটি কারো শরীরে প্রবেশ করার পর অসংখ্য নতুন ভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম। পরবর্তীতে এটি মানুষের রক্তে মিশে গিয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়লে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে।
- বাবা, এই ভাইরাস কোত্থেকে এসেছে?
- শোন, বলছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে সাম্প্রতিক ভাইরাসটি কোনও প্রাণী থেকে এসেছে। কেউ বলে এটি বাদুড় থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে, এমেরিকার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে এই ভাইরাসটি প্রাকৃতিক নয়, এটি চীনের উহান নামক শহরে অবস্থিত একটি ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। চীন ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের কেউ কেউ আবার এ দাবীও করছেন যে এটি নাকি এমেরিকায় সৃষ্ট এবং চীনের ক্রমাগত ঈর্ষনীয় সাফল্যকে থামিয়ে দেয়ার জন্যই এমেরিকা ভাইরাসটিকে উহানে ছেড়ে এসেছে!
- আসলে সত্যিটা কি, বাবা?
- সত্য কখনো চাপা থাকে নারে ঈশান। সেটি একদিন না একদিন বের হবেই। যাইহোক, যেটা বলছিলাম- চীনের উহানের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সাথে এই করোনা ভাইরাসের সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল।
- কেন?
- বেলুগা তিমির মতন বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে ঐ বাজারটিতে সাপ, মুরগি, বাদুড়, খরগোশ ইত্যাদি অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেতো যেগুলো করোনা ভাইরাসের উৎস হবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। গবেষকরা এও বলছেন যে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে চীনের হর্সশু নামের এক ধরণের বাদুড় এবং বনরুইয়ের সাথে।
- বাদুড়, কচ্ছপ, গিরগিটি, বিড়াল, শিয়াল, কুকুর, সাপ, বিচ্ছুসহ এরকম বিদঘুটে প্রাণীদের শরীর থেকে যখন এরকম ভয়ানক ভাইরাস বারবার ছড়াচ্ছে, তাহলে এসব প্রাণীদের আমদানি-রপ্তানি, ভক্ষণ ইত্যাদি নিষেধ করলে হয় না?
- এই নিষেধাজ্ঞার চেয়ে অসাধারণ কোনও সমাধান আর কোনওটাই হতে পারে না, বুঝলি। চীনে ও অন্যান্য দেশে যখন SARS মহামারী আকারে ছড়িয়েছিল, চীন সরকার তখন আন্তর্জাতিক চাপে প্রাণীদের বেচাকেনার বাজার বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু ৬ মাস পর সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে সেগুলো খুলে দেয়া হলো। এবারও তারা গত জানুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলো ঠিকই তবে তা ‘সাময়িকভাবে’। তার মানে কয়েক মাস পর ঠিকই সব বাজার খুলে দেয়া হবে; আবারো লোকজন এসব প্রাণী কিনে ভক্ষণ করবে, আবারো ভবিষ্যতে নতুন কোনও মহামারীতে সারা বিশ্ব আক্রান্ত হবে, এভাবে এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে!
- সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে কি লাভ? চিরতরে নিষেধ করা উচিত?
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। এমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ মনেপ্রাণে চাইছে যে এসব ভয়ানক রোগের উৎসগুলো অতি দ্রুত চিরতরে বন্ধ করা দরকার কিন্তু কেন যে চীনের সরকার এসবের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না সেটাই কেউ বুঝতে পারছে না। হয়তো তাদের দম্ভ বা অহংকার একটি কারণ হতে পারে। অন্য দেশের কথা শুনে আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছোট হয়ে যাবো- হয়তো এরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে চীনের সরকারের মনে। তাছাড়া শুধু যে চীনেই এরকম বন্য প্রাণী খাওয়া হয় তা নয়।
- আর কোন কোন দেশে এসব খাওয়া হয়?
- ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে।
- এ রোগের কি কোনও ঔষধ নেই?
- এখন পর্যন্ত কোনও মোক্ষম ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। এমেরিকায় সম্প্রতি একটি ঔষধ রোগীদের দেহে প্রবেশ করিয়ে তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরাও এই রোগের ঔষধ তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। গত ২৩ এপ্রিল ২০২০-এ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক একটি নতুন ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করে এর ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন। যদি এই পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হয়, তবে সারা বিশ্বের জন্যই এটা এক বিশাল সুখবর হবে। আর তা না হলে নিরীহ হরিণের শরীরে আছড়ে পড়া বাঘের থাবার মতোই করোনার ভয়াল থাবা আছড়ে পড়বে লাখো নিরীহ মানুষের উপর!
- তাহলে যে প্রতিদিন শোনা যাচ্ছে- আজ এতোজন সুস্থ হয়েছে- ঔষধ না থাকলে তারা কিভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে?
- প্রাথমিকভাবে ডাক্তাররা আপাতত রোগীদেরকে প্যারাসিটামল [Paracetamol] জাতীয় ঔষধ খেতে দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন যে ভাইরাসটি তাপ বা উষ্ণতা সহ্য করতে পারে না। তাই রোগীকে গরম পানির ভাপ নেয়ানো হচ্ছে, হালকা গরম পানি পান করানো হচ্ছে, রোগীর খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি পেতে কুসুম গরম পানিতে গলা গড়গড়া করানো হচ্ছে। তবে ভাইরাসগুলোর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে রোগীর ফুসফুসে আক্রমণ করলেই রোগীর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কারণ তখন রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। ঠিক সেইসময় রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস পূর্বের মতন সচল রাখার জন্য ভেন্টিলেইটর [Ventilator] নামক যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হলেও এতে যে রোগী সুস্থ হবেই এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি রোগীকে রেমডিসিভির [Remdesivir] এবং কখনো কখনো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন [Hydroxychloroquine] নামক ম্যালেরিয়া রোগের এই ঔষধটি দেয়া হয়। উপরন্তু রোগীর প্রচুর বিশ্রামের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
- হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন যদি ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধ হয়, তাহলে সেটি করোনার বিরুদ্ধে কতোটা কার্যকর হয় বা হবে?
- আসলে গবেষকদের মতে করোনা ভাইরাসটির মধ্যে HIV Aids এবং Malaria এই দুটি রোগের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তাই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করে কিছুটা হলেও সুফল পাবার আশায় ডাক্তাররা রোগীদেরকে ঔষধটি খেতে দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন এসব ঔষধ কিছুটা কাজে দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার এমনটা মানতে নারাজ। যেহেতু এখনো করোনা রোগের কোনও নির্দিষ্ট ঔষধ নেই, তাই ডাক্তাররা আপাতত পরিস্থিতি সামলাতে রোগের ধরণ ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে কয়েকটি নির্দিষ্ট ঔষধ দিয়ে রোগীদেরকে সুস্থ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
- তাহলে এই ভয়ংকর রোগ থেকে নিজেদেরকে বাঁচানোর উপায় কি?
- বাসায় থাকা, লোকজনের চলাচল সীমিত করা, বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য দেশের মতোই গত মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে যেমনটি করেছে, বেশি করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাত দিয়ে চোখ, নাক, মুখ ধরা থেকে বিরত থাকা, ঘরে ও বাইরে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা, মুখে মাস্ক পরা, কারো সাথে যদি সামনাসামনি কথা বলতেই হয় তবে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের সেবা দেয়া ইত্যাদি। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় এই যে ভাইরাসটি কোন একটা প্রাণী থেকে বা যেভাবেই মানুষের শরীরে ঢুকুক না কেন, একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে ছড়াতে এটি নিজের জিনগত গঠনে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে সবসময় – যার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মিউটেইশান’ [Mutation]। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা এই ভাইরাস সময়ের সাথে সাথে হয়তো আরও সাংঘাতিক হয়ে উঠতে পারে!
- এমেরিকার রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আমার বন্ধুরা ফেইসবুকে অনেক মজা করছে! তিনি করোনা থেকে মুক্তি পাবার ঔষধ হিসেবে নাকি শরীরে বা ফুসফুসে ইনজেকশনের মাধ্যমে ঘরে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক প্রবেশ করানো যায় কিনা সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের সামনে উল্লেখ করেছেন।
- হা, হা, হা! তুই ঠিকই বলেছিস ঈশান। আমি টিভিতে কথাগুলো শুনেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প কথাগুলো বলেছেন, তবে এটা নিয়ে বিশ্বজুড়ে এমন সমালোচনা হয়েছে যে তার ঠিক একদিন পরে তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন যে তিনি নাকি কথাটা ঠাট্টার ছলে বলেছেন! আসলে নিজের দেশে লাখো মানুষ আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেতো, তাই অন্য কোনও সমাধান না পেয়ে দিশেহারা হয়ে তিনি হয়তো মুখ ফসকে এমন কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরে বা অফিসে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক কোনোভাবেই মানুষের দেহে প্রবশ করানো উচিত নয়; এতে মৃত্যু ঘটতে পারে!
- ইদানীং ‘কোয়ারেন্টিন’ [Quarantine], ‘আইসোলেইশান’ [Isolation] ও ‘লকডাউন’ [Lockdown] এই শব্দগুলো প্রায়ই শুনি! এসবের মানে কি বাবা?
- ‘কোয়ারেন্টিন’ মানে হচ্ছে সঙ্গনিরোধ বা সঙ্গরোধ। উইকিপিডিয়ার মতে, কোয়ারেন্টিন বলতে বোঝায় “সম্ভাব্য (কিন্তু নিশ্চিত নয় এমন) ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে সাবধানতাবশত আলাদা করে রাখা”। অন্যদিকে ‘আইসোলেইশান’ হচ্ছে “নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত এবং সংক্রমিত ব্যক্তিকে সুস্থ জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রাখা...”। এর অন্য নাম হচ্ছে ‘অন্তরণ’, ‘বিচ্ছিন্নকরণ’ বা ‘পৃথককরণ’। আর ‘লকডাউন’-এর বাংলা অর্থ হচ্ছে অবরুদ্ধকরণ। মূলত এটি “এক ধরনের জরুরি অবস্থাকালীন ব্যবস্থাবিধিকে বোঝায় যাতে কোনও আসন্ন বিপদের হুমকির প্রেক্ষিতে সাময়িকভাবে কোনও নির্দিষ্ট এলাকা বা ভবনের ভেতরে বাইরের মানুষের প্রবেশ এবং ঐ এলাকা বা ভবন থেকে মানুষের বের হওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।”
এমন সময় জায়েদের মেয়ে ইরা এসে উপস্থিত হয়। তার হাতে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ। সম্ভবত সে দূর থেকেই কিছু কথা শুনতে পেয়েছে। কাছে এসে বাবার হাতে কাপটি দিয়েই সে বলে,
- বাবা, দেশে দেশে লকডাউন হওয়াতে একটা বিশেষ সুবিধা হয়েছে এ কথা বলতেই হবে।
- কি রকম?
- এই যে প্রকৃতি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে! শুনেছি যে মারাত্মক রকমের পরিবেশ দূষণের ফলে ওজোন স্তরে যে বিশাল ক্ষয় হয়েছে, এই দূষণ না হবার সুযোগে প্রকৃতি নিজে নিজেই সেটি সারিয়ে নিয়েছে! আমারতো মনে হয় বছরে এরকম কয়েকমাসের জন্য লকডাউন দিলে মন্দ হয় না, অন্তত মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি ইত্যাদি একটু স্বাধীনভাবে বিশুদ্ধ পরিবেশে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে!
- এটা অবশ্য তুই মন্দ বলিসনি।
- কি ব্যাপার বাবা? ঈশান এতো মনোযোগ দিয়ে কি শুনছে তোমার কাছে?
- করোনা সম্পর্কে তার মনে অনেক প্রশ্ন।
- ও, বুঝেছি, সে সাংবাদিকের মতন প্রশ্ন করছে আর তুমি উত্তর দিচ্ছ তাই না?
- হা, হা, হা, ঠিক তাই!
ইরা প্রশ্ন করে,
- আচ্ছা বাবা, আমারও একটা প্রশ্ন আছে।
- তুইও দেখছি সাংবাদিক হয়ে গেছিস! কি প্রশ্ন?
- চীনের উহান শহরে আসলে কিভাবে করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল? সেটা ছড়ানোর পেছনে চীনের কি কোনও ভুমিকা আসলেই ছিল নাকি সেটি দুর্ঘটনাবশত ছড়িয়েছে?
- তাহলেতো তোকে বিস্তারিত বলতে হয়। শোন, ৩১ ডিসেম্বার ২০১৯ এ চীনের উহান নামক শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসটির উপস্থিতি ধরা পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে রোগটিকে নিউমোনিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। তার দলের নাম কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না [সিপিসি]। লি ওয়েনলিয়েং নামে একজন ডাক্তার একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সারা বিশ্বকে এই ভয়ংকর ছোঁয়াচে ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করতে চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কমিউনিস্ট সরকার সেই ডাক্তারকে আটক করে।
- পরে সেই ডাক্তারের কি হয়?
- তিনি করোনায় মারা যান।
- আহারে! এতো ভালো একজন ডাক্তার সত্যি কথা বলার কারণে জেলে যান তারপর নিজের প্রাণটাও হারান! তারপর কি হয়েছে, বাবা?
- চীনে অপ্রত্যাশিতভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটিতে রাতারাতি বেশ কিছু হাসপাতাল নির্মিত হয়। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও চীনের ভাইরাসটি সম্পর্কে তেমন বিশদভাবে কিছু জানে না এবং বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারীর মতন পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি বলেই ধারণা পোষণ করে। উইকিপিডিয়ার মতে, ১৪ জানুয়ারি ২০২০-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, “...preliminary investigations conducted by the Chinese authorities have found no clear evidence of human-to-human transmission...”, অর্থাৎ চীনের কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে তদন্তের পর করোনা ভাইরাসটির মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোনও স্বচ্ছ প্রমাণ পায়নি।
ঈশান বেশ কৌতূহলী হয়ে জানতে চায়,
- আসলেই কি চীনের সরকার সত্য কথা বলেছে, নাকি লুকিয়েছে?
- বস্তুত চীনের সরকার নিশ্চিতভাবেই জানতো যে করোনা ভাইরাসটি ছোঁয়াচে কিন্তু বরাবরের মতোই তাদের দেশের অভ্যন্তরে ঘটে চলা সকল বিষয়াদিকে গোপন করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে তারা করোনার ছোঁয়াচে প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানায়নি। ৬ জানুয়ারি ২০২০-এ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে চেয়েও চীনের অনুমতি না পেয়ে ব্যর্থ হন। তারপর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে, ১৬ জানুয়ারি জাপানে, এবং ২০ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে একে একে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় এবং ২০ জানুয়ারি ২০২০-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চীন সম্মিলিতভাবে পুরো বিশ্বকে অবহিত করে যে করোনা ভাইরাসটি ভীষণভাবে ছোঁয়াচে। ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে ‘গ্লোবাল হেলথ ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করে। ততোদিনে অবশ্য যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। রেলপথ, নৌপথ, সড়ক ও আকাশপথে মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে অবাধে যাতায়াতের ফলে করোনা ভাইরাসটি খুব সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রচুর পরিমাণে মানবদেহে আক্রমণ করার সুযোগ পায়। বিভিন্ন দেশের নিরীহ জনগণ করোনার মতন এমন ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে। যখন দেখতে দেখতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ করোনার ভয়াল থাবায় বিধ্বস্ত, তখন ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস চীনে করোনা সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করার নিমিত্তে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুমতি প্রাপ্ত হন।
ইরা চীনের ছলচাতুরী ধরতে পেরেছে এমনভাবে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
- আমার মনে হয় চীন ইচ্ছে করেই পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে যেন করোনা ভাইরাসটি পুরো বিশ্বে এবং বিশেষ করে এমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
জায়েদ প্রশ্ন করেন,
- ইরা, তোর কেন এমনটা মনে হচ্ছে?
- এটা দিবালোকের মতোই পরিষ্কার, বাবা! চীনের উদ্দেশ্য যদি সৎ হতো, তাহলে তারা শুরু থেকেই সারা বিশ্বকে করোনার মারাত্মক ছোঁয়াচে প্রকৃতি সম্পর্কে জানাতো, এমেরিকার বিশেষজ্ঞ দলকে আগেই চীনে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে চীনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার সময় চীন সরকার বিমানে আন্তর্জাতিকভাবে যাতায়াতে তার দেশের মানুষের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। এটা একটা শিশুও বুঝবে যে চীনের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। আসলে চীন চেয়েছে যে করোনার কারণে কেন শুধু তাদের অর্থনীতিই একা ক্ষতিগ্রস্ত হবে; অন্যান্য দেশও ক্ষতির সম্মুখীন হোক! এই স্বার্থপর এবং শয়তানী ভাবনা থেকেই তারা তাদের কাজ সম্পাদন করেছে। হয়তো তারা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে নিজেরা নেতৃত্ব দিতেই এই ফন্দি এঁটেছে!
ঈশান প্রশ্ন করে,
- আচ্ছা বাবা, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে কতোটি দেশে করোনা ছড়িয়েছে এবং কতোজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন?
- ১৮৫টি দেশে ছড়িয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ।
- ৩০ লাখ? সর্বনাশ! এমেরিকায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ও মারা গেছেন কতোজন?
- এমেরিকায় এখন [২৮ এপ্রিল ২০২০] পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০,১২,১৪৭ জন এবং মারা গেছেন ৫৬,৯৩৩ জন। এমেরিকাসহ পুরো বিশ্বে প্রতিদিন কিছু কিছু মানুষ সুস্থ হয়ে উঠলেও সেই তুলনায় নতুন করে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছেই!
ঈশান প্রশ্ন করে,
- যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হবার পরে সুস্থ হয়ে যান, তার কি দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে?
- হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি আবারো করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন যদি তিনি সাবধানতা অবলম্বন করে না চলেন।
- এমন কেউ কি আছেন যিনি দুইবার আক্রান্ত হয়েছেন?
- aljazeera.com এর মতে, জাপানে ৪০ বছর বয়স্ক একজন মহিলা গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ইরা ঈশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
- কিরে, বাংলাদেশে কতোজন আক্রান্ত ও মারা গেছে সেটা জানতে চাইলি না যে?
- সেটা জানি!
- কতোজন, বলতো?
- বাংলাদেশে এখন [২৮ এপ্রিল ২০২০] পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬,৪৬২ জন এবং মারা গেছেন ১৫৫ জন।
ইরা হেসে ঈশানের পিঠ চাপড়ে বলে,
- ভেরি গুড ডিয়ার ব্রো!
- থ্যাংক্স এ মিলিয়েন!
- মাই প্লেজার!
ঈশান আবারো তার বাবার দিকে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
- আচ্ছা বাবা, আপুর কথা যদি সত্যি হয়, মানে পরে যদি এটা প্রমাণ হয় যে চীন করোনা ভাইরাসটি ছড়ানোর উৎস থেকে শুরু করে অনেক কিছুই জানতো এবং তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সবকিছু লুকিয়েছে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কি চীনের বিপক্ষে মামলা করবে?
বাবা কিছু বলার আগেই ইরা বলে,
- মামলাতো ইতোমধ্যে করেই দিয়েছে!
ঈশান জানতে চায়,
- কে করেছে?
ইরা বলে,
- এমেরিকা, তাই না বাবা?
ঈশান বাবার কাছে প্রশ্ন করে,
- সত্যি বাবা?
- ইরা ঠিকই বলেছে। এমেরিকার একটি রাজ্য যার নাম ‘মিসৌরি’, সে রাজ্য চীনের বিপক্ষে প্রথম মামলা করেছে।
ঈশান কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে,
- অন্যান্য দেশও কি মামলা করবে বাবা?
- ইটালিও মামলা করেছে। পরিস্থিতি যেমন দেখছি তাতে মনে হচ্ছে অন্যান্য দেশও খুব দ্রুতই মামলা করবে।
ইরার মনে প্রশ্ন জাগে,
- চীনের বিরুদ্ধে মামলা করে কি কোনও লাভ হবে?
- চীনতো বরাবরই সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এখনো করছে। তারা এমনকি করোনাসম্পর্কিত কোনও প্রকার তদন্তেরও বিপক্ষে। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সাধারণ জনতার মনে সন্দেহের তীব্রতা বন্যার পানির মতোই বাড়ছে। যাইহোক, যেটা বলছিলাম, মামলায় জয়ী হলে সরাসরি হয়তো চীনের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া না গেলেও পরোক্ষভাবে তাদেরকে শায়েস্তা করা সম্ভব।
ইরা বলে,
- সেটা কিভাবে?
- ধর, এমেরিকা মামলায় জিতে গেছে, তাহলে কোর্টের আদেশের মাধ্যমে এমেরিকায় চীন যতো টাকা বিনিয়োগ করেছে, সেখানে তাদের যতো প্রতিস্থান আছে অথবা এমেরিকার ব্যাংকগুলোতে চীনের যতো টাকা জমানো আছে, সেসব বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব। তাছাড়া চীনের সাথে সকল প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন বাতিল করে, চীন থেকে কোনও পণ্য সামগ্রী আমদানি বা চীনে রপ্তানি না করার মাধ্যমেও চীনের এই হঠকারিতার জন্য উচিত জবাব দেয়া যাবে।
- হুম, ঠিকই বলেছো বাবা। চীন করোনা ভাইরাস ছড়ানোর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যা করেছে বা করছে- তাদের অহংকার, উদ্ধত আচরণ, অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতি হুমকি প্রদর্শন ইত্যাদি কোনওমতেই মেনে নেয়া যায় না। এর একটা শাস্তি হওয়াই উচিত।
ঈশান বলে,
- আমার মনে হয় এমেরিকা এবার সহজে চীনকে ছাড়বে না।
ইরা বলে,
- শুধু এমেরিকা কেন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ইটালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ আরও অসংখ্য দেশ চীনের প্রতি চরম বিরক্তি ও নিরন্তর ঘৃণা প্রদর্শন করছে এবং এমনটাই হওয়া উচিত। ট্রাম্প নাকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বাৎসরিকভাবে এতোদিন যে ৫০০ মিলিয়েন ডলার অনুদান দিয়ে এসেছে, সেটা আর দেবে না।
- কথাটি সত্য। ট্রাম্প এর মতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকেই বিষয়টিকে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রীতিমত অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তাছাড়া তিনি মনে করেন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অনেকটাই চীন-ঘেষা! তাই এখন থেকে এমেরিকার পক্ষ থেকে আর কোনও অনুদান দেয়া হবে না।
ইরা বলে,
- পত্রিকায় পড়েছি যে চীনের ধূর্ততা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অদক্ষতা লক্ষণীয় বটে, তবে ট্রাম্পও নাকি অনেকাংশে দায়ী কারণ তিনি শুরুতে করোনা ভাইরাসটিকে অতোটা গুরুত্ব দেননি যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া তার সাক্ষাৎকারেই প্রকাশ পেয়েছে। দেরীতে টনক নড়ার ফলে এতো বিপুল পরিমাণে এমেরিকান লোকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
ঈশান প্রশ্ন করে,
- আচ্ছা বাবা, এই ভয়ানক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সারা বিশ্ব কবে মুক্তি পাবে?
- আমার মনে হয় না যে খুব শীঘ্রই করোনা থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে। যতোদিন পর্যন্ত না টিকা আবিস্কার হচ্ছে, ততোদিন পর্যন্ত এই ভাইরাস মানুষকে চরমভাবে ভোগাবে। তবে ২৭ এপ্রিল ২০২০-এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবর অনুসারে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন [এসইউটিডি] এর ডেইটা ড্রিভেন ইনোভেইশান ল্যাবের গবেষকেরা মনে করছেন যে “প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশ থেকে আগামী ১৯ মে'র মধ্যে ৯৭ শতাংশ এবং ৩০ মে'র মধ্যে ৯৯ শতাংশ বিলীন হয়ে যাবে...সেইসঙ্গে গবেষকদের পূর্বাভাস, আগামী ১৫ জুলাই'র মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এই ভাইরাস পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে...২৯ মে'র মধ্যে বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাস ৯৭ শতাংশ দূর হবে এবং পুরোপুরি ভাবে বিলীন হবে এই বছরের ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে।” অন্যদিকে ২৮ এপ্রিল ২০২০-এ uttorpurbo24.com-এ প্রকাশিত তথ্য মতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস জেনেভায় অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে “করোনা ভাইরাস মহামারির শেষ এখনও অনেক দূরে”!
মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। জায়েদ নামাজ পড়ার জন্য নিজ কক্ষের দিকে হেঁটে যান। ঈশান ও ইরা নিজেদের মধ্যে কি একটা নিয়ে যেন কথা বলছে। হয়তো তারা এটাই বলছে যে, ‘আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি যেন করোনায় আক্রান্ত মানুষগুলো খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এবং পৃথিবীর বুক থেকে করোনা নামক অভিশাপটি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক’!
রেফারেন্সেসঃ
1.
https://www.bbc.com/bengali/news-51257048
2.
https://www.youtube.com/watch?v=aerq4byr7ps
3.
https://www.youtube.com/watch?v=B_-rbv0tp2k
4.
https://www.youtube.com/watch?v=sa1WIlg7bhg
5.
https://www.youtube.com/watch?v=dRggIb5Je_w
6.
https://www.youtube.com/watch?v=n0wQyo_jt6Q
7.
https://www.youtube.com/watch?v=eT47ulzfOMo
8.
https://www.youtube.com/watch?v=_Hh0LygtASg
9.
https://www.youtube.com/watch?v=vPXlh84PXeY
10.
https://www.youtube.com/watch?v=JjRMQk8yvDI
11.
https://www.youtube.com/watch?v=9t8AUTYda04
12.
https://www.youtube.com/watch?v=V60ABj75-FQ
13.
https://www.youtube.com/watch?v=LZ44Rng4Ekc
14.
https://www.youtube.com/watch?v=OFJFED2laCk
15.
https://www.youtube.com/watch?v=RdQ7GtPcHzo
16.
https://www.youtube.com/watch?v=lR_W4s6LoYg
17.
https://www.youtube.com/watch?v=ngd52RiNWlQ
18.
https://www.youtube.com/watch?v=3bXWGxhd7ic
19.
https://www.youtube.com/watch?v=QVJZtt3EC3M
20.
https://www.youtube.com/watch?v=04I86QYgBpU
21.
https://www.youtube.com/watch?v=zicGxU5MfwE
22.
https://www.youtube.com/watch?v=u9NbaXHdfGc
23.
https://www.youtube.com/watch?v=K4Ac5yj9dwA
24.
https://www.youtube.com/watch?v=1bb91_E7AHw
25.
https://www.youtube.com/watch?v=YLJWhlIB5RQ
26.
https://www.youtube.com/watch?v=tTCywQBB3JE
27.
https://www.youtube.com/watch?v=hR52ONoIFXY
28.
https://www.youtube.com/watch?v=Xx8wDTzn1Do
29.
https://www.youtube.com/watch?v=zoLDqRkUV58
30.
https://www.youtube.com/watch?v=5DGwOJXSxqg
31.
https://www.youtube.com/watch?v=nMv1F6BXcEE
32.
https://www.youtube.com/watch?v=dk937OZnTXM
33.
https://www.youtube.com/watch?v=_dMWzokehSw
34.
https://www.youtube.com/watch?v=WaBXQ1irNA0
35.
https://www.youtube.com/watch?v=OVBAq_p5K9o
36.
https://www.youtube.com/watch?v=qDYFZmgFlmA
37.
https://www.youtube.com/watch?v=Iq-WK7TNGBQ
38.
https://www.youtube.com/watch?v=lVMNW4pVqpc
39.
https://www.youtube.com/watch?v=LCVrWGwS1JY
40.
https://www.youtube.com/watch?v=Y7nZ4mw4mXw
41.
https://www.worldometers.info/coronavirus/country/us/
42.
http://https//www.youtube.com/watch?v=PvyGqGHmtuk
43.
https://www.youtube.com/watch?v=ZdFk65psFjk&t=47s
44.
https://www.youtube.com/watch?v=1gzH0Olwd9s&t=26s
45.
46.
https://www.aljazeera.com/indepth/features/doctor-note-catch-coronavirus-200402144702217.html
47.
48.
49.
50.
https://en.wikipedia.org/wiki/2019%E2%80%9320_coronavirus_pandemic_by_country_and_territory
51.
52.