প্রিয়! [অণু গল্প: Bangla Flash Fiction]

কতোদিন দেখি না তোমায়! সেই কবে জড়িয়েছিলাম দৈহিক সম্পর্কে তোমার সাথে! সেই তীব্র উষ্ণতা, সেই মাদকের মতণ চুম্বনের স্বাদ! আমি ভুলতে পারিনি আজো! হয়তো এই জীবনে আর পারবো না ভুলতে কভু!


আজ তুমি অন্য কারো, অন্যের স্ত্রী। এতে আমি তোমাকে দায়ী করি না কোনোভাবেই। পরিস্থিতিই ছিল না আমাদের পক্ষে। হয়তো অন্যভাবে বললে বলা যায় যে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম দুজন। আমার বাহুডোরে আবদ্ধ করতাম তোমায় প্রায় প্রতিদিন, এখন অন্য একজনের আলিঙ্গনে থাকো নিশ্চয়ই।


আমি কিন্তু আজো বিয়ে করিনি। তোমায় চিরতরে হারাবার পরে বিয়ে করার ভাবনাকে আমার মনে স্থান দেবার কথা দূরে থাক, অন্য কোনও মেয়ের দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করে না আর। কি করবো বলো? অন্য মেয়ের দিকে চোখ পড়লেই যে তোমার কথা মনে পড়ে যায়! বাবা মা বিয়ের ব্যাপারে আমাকে উপদেশ, আদেশ, অনুরোধ ইত্যাদি করতে করতে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে এখন কিছুই বলেন না আর!


মাঝেমাঝে মনে হয় তোমাকে যদি একটিবার দেখতে পারতাম! পরক্ষণেই মনের সেই সাধটাকে মৃত পোষা প্রাণীর মতন কবর দেই এই ভেবে যে তোমাকে দেখার পরে আমার মনের সুপ্ত অগ্নিগিরি দাবানলে হবে পরিণত!


আজ এই পার্কে বসে হ্রদের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছি, একা। আমার বাম পাশে তুমি বসতে, আমার কাঁধে তোমার মাথাটা রেখে। তোমার হাতটা আমার হাতেই ধরা থাকতো যতক্ষণ পর্যন্ত বসে থাকতাম দুজনে। মাঝেমাঝে নৌকায় চড়তাম দুজনে, তুমি আবেগে আপ্লুত হয়ে শিশুর মতন হেসে পড়তে লুটিয়ে!


ফেরার পথে রহমান চাচার দোকানের সেই গরম গরম সুস্বাদু চটপটি ও ফুচকা না খেতে পেলে তোমার খুনসুটি ও রেগে যাওয়া আমাকে আজো মনের অজান্তেই মুচকি হাসতে বাধ্য করে!


- আরে জিয়ান! তুমি! কেমন আছো?


- এইতো আছি! তোমার কি খবর বলো?


- আমি অনেক ভালো আছি।


- ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো, আবারো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো, তাও আবার সেই চেনাজানা পার্কে! একা নাকি?


- আরে না, না। আমার স্বামী ও শাশুড়িও আছেন সাথে। দাঁড়াও, তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইফা...


- দাঁড়াও, দাঁড়াও! পরিচয় না করলেই কি ভালো হয় না?


- কেন?


- তাদের কাছে আমার কি পরিচয় দেবে তুমি? কি বলবে- আমি তোমার সাবেক বন্ধু, নাকি বলবে সাবেক প্রেমিক ছিলাম?


- এসব বলবো কেন? বলবো যে তুমি আর আমি একসাথে একই ভার্সিটিতে পড়তাম!


- থাক, থাক, তার আর দরকার নেই। আমি আসি, তুমি অনেক সুখে ও শান্তিতে থেকো।


ফেরার পথে এই সামান্য কয়েকটা শব্দ বলতে গিয়ে আমি যে কতোটা কষ্ট করে আমার চোখের জলকে আটকে রেখেছি সেটা বোঝার ক্ষমতা কি তার আছে? কে জানে? একেকটি কদম ফেলার সময় বারবার মনে হয়েছে আমার ফিরে তাকিয়ে দেখি, দেখি সে এখনো দাঁড়িয়ে আছে কিনা, আমার চলে যাওয়া সে প্রত্যক্ষ করছে কিনা, দেখি তারও চোখের কোণে জল জমেছে কিনা! হাজারো ইচ্ছেরা প্রজাপতি হয়ে উড়তে চেয়েছিল বহু আগে, আমি উড়তে দেইনি; এখনো দেবো না, তাকাবো না আমি। তাকিয়ে কি লাভ? আমি জানি সে আমার চলে যাওয়া দেখছে না, আমি জানি সে তার স্বামীর হাত ধরে হাঁটছে এখন। আমার প্রতি তার সেই পুরনো প্রেম কি আর কখনো হবে জাগ্রত, তুর্কির মাউন্ট হাসানের সেই সুপ্ত অগ্নিগিরির মতো?


আমি কেন যেন ক্লান্ত পথিকের মতোন থমকে দাঁড়াই, পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি নীলিমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক যেন গ্রীক দেবি আফ্রোদিতির মতন। আমার নয়নজুড়ে বৃষ্টি নামে, আমি আবার এগিয়ে যাই!      

View kingofwords's Full Portfolio