হিংসা এমন এক আগুন যেটা চোখে দেখা যায় না। হিংসার আগুনে নিষ্পাপরাতো পোড়েই, যে হিংসা করে, সেও পুড়ে ছাই হয়ে যায়!
কয়েক মাস হয়েছে জিয়া অফিসে যোগদান করেছে। ইতোমধ্যেই সে সবার মাঝে জনপ্রিয় একজনে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে যেন প্রতিধ্বনির মতন “জিয়া” নামটিই কেবল উচ্চারিত হচ্ছে! তার এমন সাফল্যে কতিপয় সহকর্মীদের গাত্রদাহ হচ্ছে বললে একটুও অত্যুক্তি হবে না।
জিয়া নিজেও জানে; সে সবই বোঝে। তবুও সে ইচ্ছে করেই কিছুই না বোঝার ভান করে থাকে। এটি অবশ্য তার একটি উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট। জিয়া বেশ ভালো করেই জানে যে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবসময় তাকে কোনও না কোনোভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করা, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে হতাশার কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ঠেলে দেয়া, তার দৃঢ় মনোবল হাতুড়ির মতন গুঁড়িয়ে দেয়া, তাকে অহেতুক ক্রোধান্বিত করার প্রয়াস ইত্যাদি।
জিয়া কম চতুর নয়। সহকর্মীদের কে কে দাবার মতন কি চাল করেছে বা করবে, এ সবই তার নখদর্পণে! তবে একজন মানুষের প্রশংসায় সে মনেপ্রাণে পঞ্চমুখ। তিনি হচ্ছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জনাব মোহাম্মদ রিদান। রিদান সাহেব জিয়ার সৃষ্টিশীল, ন্যায়পরায়ণ ও সৎকর্মে যারপরনাই মুগ্ধ। কিন্তু কতিপয় সহকর্মীরা ঠিক তার বিপরীত, উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর মতন।
যাইহোক, ঈর্ষার একটি নমুনা বা দৃষ্টান্ত দেয়াটা অতীব জরুরী। যেমন, একজন সহকর্মী নিজেই এসে জিয়াকে বললো,
- জিয়া ভাই, আমাদের পণ্যের ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেমন, পণ্যটির গুনাগুণ তুলে ধরার জন্য একটি নান্দনিক ও উচ্চমার্গিয় একটি ভিডিও নির্মাণ করা হবে।
- বাহ! এতো বেশ ভালো খবর! শুনে সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি।
- আমি চাই যে আপনি ঐ ভিডিওতে একটি বক্তব্য রাখুন।
- ঠিক আছে, আমার এতে কোনও আপত্তি নেই। আপনি আমাকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে নিজেকে ধন্য ও সম্মানিত বোধ করছি। তা ঠিক কখন আমাকে ক্যামেরার সম্মুখে দাঁড়াতে হবে?
- এখনই!
- এখনই? আচ্ছা ঠিক আছে।
- চলুন।
- হ্যাঁ, চলুন যাওয়া যাক।
উল্লেখ্য, ভিডিও নির্মাণ হচ্ছে ঠিকই, তবে সেখানে জিয়া ছাড়াও আরও অনেক বক্তাই পণ্যের গুনাগুণ সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন। জিয়া বক্তব্য শেষে মনেমনে মুচকি হেসেছে কারণ সে বেশ ভালো করেই জানে যে তার এই বক্তব্য ঐ ভিডিওতে কোনোভাবেই স্থান পাবে না! সম্পাদনার সময় ঐসব নর্দমার কীটের মতন জীবেরা যারা নিজেদেরকে মানুষ বলে দাবী করে, তারাই সুকৌশলে জিয়ার বক্তব্যটি কাঁচি দিয়ে সুতো কাটার মতোই একপলকে কেটে দেবে।
মজার বিষয় এই যে জিয়ার ভবিষৎবাণী সফল হয়েছে! কয়েকদিন পর সেই ভিডিও তৈরি হয়ে সেটার প্রচারও শুরু হয়ে যায় কিন্তু জিয়ার দেয়া সেই বক্তব্যটির টিকিটিও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় না!
তবে এই গল্পের শুরুতেই পানির মতন স্বচ্ছভাবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে তাদের এসব শয়তানের মতন কর্মকাণ্ডে জিয়ার কিসসুই আসে যায় না। কারণ সে জানে, ভালো কাজ করে যে জন, পায় সে ফল তার বিলক্ষণ!