বিশ্বব্যাপী আত্মঘাতি সংক্রমণ মহামারী কোভিড-১৯ রোগে ভুগছে ৫ লাখের বেশি মানুষ।
শেষ খবর পাওয়া অবধি বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ জন তারমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৫ জন!
এই রোগের মহামারী সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই,
তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে আমরা সবাই মোটামুটি অবগত;
আর এই তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে সহজ-সরল মানুষদের ভুল চিকিৎসার গুজব রটাচ্ছে আর আমাদের দেশের হুজুগ প্রবন বাঙালী ভাই-বোন, বাপ-মায়েরা তা লুফে নিয়ে মধ্যরাতে জেগে কেউ কেউ হারিকেন,টর্চ, কুপি জ্বালিয়ে কষ্টিপাথরের মত খুঁজে গিলেছেন থানকুনি পাতা!!
কাহিনী কি…..?
কাহিনী হলো, সারা দুনিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মিলে যখন রাত দিন কোভিড ১৯ রোগের মেডিসিন বানাতে ল্যাবরেটারীতে গবেষনায় ব্যস্ত;
ঠিক তখনই বাঙালীর কোন এক শয়তান পীরের মুরিদ ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের আলৌকিক শক্তির মহাবলে তৈরী করেছে করোনা ভাইরাসের মেডিসিন “থানকুনি পাতা”
ছাগলে যা বিশ্বাস করেনা বাঙালী তা করে।
আর সেটা শুধু মাত্র ধর্মের দোহাই দিয়েই সম্ভব,
কেননা বাঙালী কোন কিছু সাধারণ লজিক দিয়ে বিশ্লেষণ করার আগে খুৃঁজে সেখানে আল্লাহ-রাসুল (সাঃ)-পীরের সুত্র আছে কিনা!
যদি থাকে ঘটনা মিথ্যা হলেও সেটা মানতে বেশীরভাগ মানুষের দ্বিমত থাকেনা,
আজ সকালে অনেকেই আবার রং চা নিয়ে মেতেছেন।
যেমন গুজবে হামাগুড়ি দিয়ে মেতেছিলেন পদ্মাসেতু নির্মাণের ছেলেধরা গুজবে-
অযাচিত মিথ্যা গুজবে অনেক নীরহ মানুষ ছেলেধরা সন্দেহে খেয়েছেন গণধোলাই,
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসে প্রান হারান তসলিমা বেগম রেণু।
গুজব মহামারির চেয়েও ক্ষতিকর,
মহামারী চিকিৎসায় সারানোর উপায় একদিন না হয় একদিন বের হবেই হবে।
কিন্তু মানুষের সরল মনে মিথ্যা কোন ধারণা সত্যি বলে গেঁথে গেলে তা মুছে দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
স্বার্থ হাসিলের জন্য সমাজে ভুল ও মিথ্যা কিংবা আংশিক মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে স্বার্থপর মানুষ,
এরকম ঘটনা নতুন নয় নবী রাসুলগনের যুগেও এমন কুশিক্ষিত লোকজনের অভাব ছিলোনা;
তফাৎ আগে প্রচারণা কম ছিলো-
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুবিধায় তা এখন রাতারাতি ভয়ংকর রুপ ধারণ করছে।
তাই করোনা ভাইরাস সারানোর কিংবা মুক্ত থাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাক্তারি পরামর্শ সাজেশন ব্যাতিত
আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য আলৌকিক কোন ঘটনার খবর এলে তা আমাদের যাচাই করে নিতে হবে; ঘটনা সত্যি কিনা।
গুজবের স্রোতে পাল উড়ানো যাবেনা,
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা
কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
‘হে মুমিনগণ!
তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো।
অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’
(সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)
আমাদের যে বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই সে বিষয়ে অন্যকে কোন পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,
অনেক অনভিজ্ঞ সমাজে আছেন যারা শুধুমাত্র নিজেদের সুনাম অর্জন করতে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ;
ফলে উপকারের চেয়ে বর্তমান সময়ে মানুষের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
অন্যের ক্ষতি হয় এমন যুক্তি থেকে বিরত থাকুন।
আপনার চুপ থাকার কারনে অনেকে বেঁচে যাবে।
যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না।
নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।’
(তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)
অতএব, অযথা জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করে দিন।
আবার অনেকের মধ্যে নিজের বিশ্বাস আল্লাহ তাদের করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত করবেনা,
তাই তারা মাস্ক ব্যাবহার করছেনা কেউ কেউ সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যাপারটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে;
করোনা নাকি ইহুদি খ্রিষ্টানদের রোগ মুসলমান সম্প্রদায়ের নয়!
কী মারাত্মক এদের বিশ্বাস!!
আবার এরাই হাদিস আওরায় ‘পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’
এদের মত ধুর্ত অসচেতন লোকদের সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত।
তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে।
আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৭)
মনে রাখতে হবে সচেতনতা দুর্বলতা নয়
রাসুল (সাঃ) ভিত্তিহীন কথা প্রচার করতে আমাদেরকে কঠিনভাবে নিষেধ করে বলেছেন:
একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যা শুনবে, তা-ই বলে বেড়াবে।
-(মুসলিম)
আশার কথা হলো,
আল্লাহ গজব নাযিল করে মানুষের হেদায়েতের জন্য,
করোনা আতংকে ভিত হবেন না,
সতর্ক থাকুন,সচেতন থাকুন, আল্লাহর আইন মেনে চলুন।
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।
তাইতো আল্লাহ বলেছেন,
“আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই”
(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৫৯)।
সুতরাং, গুজবে কান না দেয়া, গুজবে বিশ্বাস না করা। আর যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন, প্রচার ও প্রকাশ করা প্রত্যেকের দায়িত্ব।