সাবেক পর্ণ তারকা মেগান (জেসি সামারস) বললেন তার নিজের জীবনের কথা আর কিভাবে এই অন্ধকার জগত থেকে সরে এলেন সেই কথা। সে অবৈধ ড্রাগ, যৌনব্যাধি আর এই জগতের ভয়াবহতা সম্পর্কেও অকপটে বলে গেল। জেসি ২০০৫-২০১০ পর্যন্ত পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন। তার নিজের মুখেই শুনুন তার কাহিনী-
আমার শৈশব অনেক ঝঞ্ঝাটের ছিল। আমার মা ছিলেন মদ্যপ আর বাবা’র তো দেখাই পেতাম না। মাত্র ৪ বছর বয়সেই আমাকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় আর নয় বছর বয়স পর্যন্ত এটা চলতে থাকলো। পরে সে এলাকা থেকে চলে যায়। এরপর ১১ বছর বয়স থেকে আমি চার্চে যেতাম প্রতি রবিবার।
এরপর দুঃখজনক ভাবে এই চার্চ এর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাই। ১২ বছর বয়সে আমার সতীত্ব হারাই আমার তৎকালীন বয়ফ্রেন্ডের কাছে যার বয়স ছিল ১৫ বছর। আমি গর্ভবতী হয়ে গেলাম এরপর আমি প্রথমবারের মত গর্ভপাত করাই। আজও নিজেকে আমি এই ঘটনার জন্য দায়ী মনে করি।
আমার টিনেজটাও ভালো ছিল না। আমি ভাল ছাত্রী ছিলাম কিন্ত খুব কম যেতাম স্কুলে। এরপর আমি আরেকটা বয়ফ্রেন্ড পেলাম যে আমার চাইতে ১১ বছরের বড় ছিল। আমি ওর সাথে বাইরে গেলাম। পরে ঘরে ফাইল এলাম যখন আমার মা বললো সে এখন তার রেনো’র সাথে সংসার করতে চায় আর সে আমাকে তার সাথে নিতে চায় না।
আমি একের পর এক শয্যাসঙ্গী পরিবর্তন করতে থাকলাম শুধু একটু ভালোবাসা পাবার আশায়। কাউকে পেলাম না। তখন বুঝি নাই, কাউকে না পেলেও আমার জন্য ইশ্বর স্বয়ং ছিলেন। আমি একা ছিলাম না।
১৭ বছর বয়সে আমি ‘কোকেন’ আর ‘মেথ’ এ আসক্ত হয়ে গেলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম হয় বার এ গিয়ে ‘স্ট্রিপিং’ (উলঙ্গ নৃত্য) কররো আর না হয় পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যাবো। নিজেকে আমার এত বঞ্চিত আর অবহেলিত মনে হতে লাগলো যে তখন আমার কাছে এইগুলা খারাপ মনে হয় নাই। প্রত্যেক সকালে ঘুম থেকে উঠতাল মরার কথা চিন্তা করে।
এরপরে পেপারে একদিন অ্যাড দেখলাম পর্ণ মুভির ব্যাপারে। আমি গেলাম আর সেখানে কাজ করলাম। নিজেকে ভীষণ নোংরা লাগলো। রস শুষে নেয়া একটা ছিবড়ের মতলাগতে লাগলো। কিন্তু সবাই আমাকে বোঝালো আমি অনেক সুন্দরী। আমি যদি ক্যালিফোর্নিয়া যাই তাহলে আরো অনেক কাজের সুযোগ পাবো; আমাকে একটা দালাল ধরিয়ে দিলো। আমার মনে হল, আমি যতই মন খারাপ করি না কেন এদের আচরণে মনে হয় এদের কাছে আমার অনেক গুরুত্ব।
আমি প্রায় ৬০ টা মুভি করেছি আর বারে বারে শরীরে নিয়েছি, হার্পিস, গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া। আমার দালাল, যাকে আমার বন্ধু মনে হত, আমাকে একরকম লাথি দিয়ে বের করে দিল আমার হার্পিস হয়েছে দেখে।
আমি gonzo পর্ন (খুব কাছ থেকে ক্যামেরায় শ্যুট করা) এ কাজ করতাম যেটা আমার কাছে খুবি খারাপ লাগতো। এটা ভয়াবহ আর আর খুব আপত্তিকর মনে হত। আমি DVD তৈরির জন্য অভিনয় করতাম আর এতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে হত। এমনকি ১০৪ ডিগ্রি জ্বন নিয়েও আমাকে কাজ করতে বাধ্য করতো। আমি চিৎকার করে কেঁদে একটু বিশ্রাম চাইতাম কিন্তু এজেন্ট বলতো, কাজ শেষ না করে আমাকে কিছুতেই উঠতে দিবে না।
একবার একজনের সাথে একটা পর্নের কাজ করলাম, যার নাম এখন আর আমার মনে নেই। আমি চেয়েছিলাম তাদের হয়ে কাজ করতে, তাই করলাম। আমার সাথে সে কুকুরের মত পিছন দিক থেকে যৌনক্রিয়া করার সময় আমার মাথার উপরে পা দিয়ে ঠেসে ধরে রেখেছিলো। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। চিৎকার করে সরে যেতে চাইলাম। ওরা শ্যুটিং বন্ধ করে আমাকে অল্প কয় ডলার ধরায়ে বিদায় করে দিলো কারণ ওদের শ্যুটিং শেষ কেন করি নাই শুধু এজন্য।
এই লাইনের সবাই মেকী, মিথ্যা। নাম উল্লেখ করতে চাই না আর চাইও না যেন কোন মেয়ে আর তার সাথে কাজ করুক; ঐ লোকটা আমার একটা ওয়েবসাইট করে দেবে বলেছিলো যেখান থেকে অনেক টাকা আসবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা পয়সাও পেলাম না তার কাছ থেকে। আমি একটা শ্যুটিং স্পটে আরো কয়েকটা পর্ন এ অভিনয় করা মেয়ের সাথে থাকতাম। আমার নিজের থাকার কোন জায়গাও ছিল না। এরপর একজন মানুষ আমাকে নিয়ে গেল তার সাথে থাকার জন্য। এখন সে মৃত।
আমি চাই মেয়েরা জানুক এই অন্ধকার জগতে কোন গ্ল্যামার নেই। এটা জঘন্য, নোংরা, রোগের ছড়াছড়ি, কে তোমার সাথে কি করলো কিছুই যায় আসে না, এজেন্টরা তোমাকে ব্যাবহার করবে ইচ্ছামত, বন্ধুরা তোমার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে। শুধু টাকার পিছনে ছোটা কিন্তু কেউ তোমাকে পাত্তাও দিবে না যতই ব্যথা তোমার লাগুক না কেন। অত্যন্ত বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক, আত্মহত্যার প্ররোচক এই রাস্তা। জীবনে সমস্ত হতাশার রাস্তা খুলে দেয় এই পথ। ততক্ষন তুমি টাকা কামাতে যতক্ষন নিজের শরীর বিলিয়ে দিতে পারবে। যদি তোমার হার্পিস হয়ে যায়, তোমার চিকিৎসা করানো দূরের কথা, কেউ তোমাকে চিনবেও না। আর ভুলে যেও না, যে ভিডিও করবে, যুগের পর যুগ তাথেকে যাবে। তুমি সরিয়ে দিতে পারবে না। তুমি সরে গেলেও ওগুলা মুছে দিতে পারবে না। ইন্টারনেটে থেকে যাবে। লোকে তোমাকে ঐভাবে জানতেই থাকবে। কোন সুস্থ জীবন তুমি পাবে না। লোক তোমাকে সেইভাবেই দেখতে থাকবে।
এরপর আমি একজন বন্ধু পেলাম কিন্তু সে আমাকে ড্রাগে আসক্ত করে ফেলল। একদিন সে আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। নতুঙ্কিছু মানুষ দেখতে পেলাম কিন্তু আমি তাদের চিনি না। ওরা আমাকে হেলুসিনেশনের ড্রাগ দেয়া শুরু করলো ডিসকাউন্টে। আমি চলে গেলাম এক ঘোরের জগতে। সে আমাকে আমার ঘরে নিয়ে এল। আমি ছিলাম তখনো ঘোরের মধ্যে। সে বোর হয়ে গেল আমাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে। আমি নেশায় মত্ত হয়ে গেলাম। যখনই নেশার টান পড়তো আমাকে বাধ্য হয়ে তার কাছে যেতে হত। নিজেকে একটা নোংরা কাপড়ের মত মনে হল যেন মানুষ আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
নেশা করতে করতে আমার সারা শরীরের অনুভুতি অসাড় হয়ে গেল। হঠাৎ আমার মনে হল আমি এভাবে মরতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই। আমি পুলিশকে ফোন দিতে ভয় পেলাম। আমি আমার বয়ফ্রেন্ড কে ফোন দিলাম। সে শুনে পাগল হয়ে গেল যে আমি ঐ ড্রাগ নেয়া শুরু করেছি শুনে। মক্ষিরাণী যে আমাকে ঐ ড্রাগ দিল, তাকেও ফোন দিলাম। ও কাছেই থাকতো। সে এলো, কিন্তু এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।
আমাকে ওই মেয়ে তার বাসায় নিয়ে গেল। আমি এমনই অবশ অবস্থায় ছিলাম যে আমার শরীরে কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। অনেক্ষণ আমার হাত মালিশ করার পরে আমি একটু সাড়া পেলাম। আমার মাথায় কি চলছিলো তখন সেটা বলাই বাহুল্য।
ড্রাগের নেশায় মনে হল আমি নিজেই ভগবান হয়ে গেছি অথবা ভগবানের কাছে চলে গিয়েছি। আমাকে সে জিজ্ঞাসা করলো সব শেষে আমি কি খেয়েছি? উত্তর দিলাম, আমার মনে পড়েছে, গত কয়েকদিনে আমার পেটা কোন দানাপানি পড়ে নাই।
এরপর কারা যেন এলো। আমাকে ভগবানের মত লোকটা বলতে লাগলো শুধু আমাকেই দেখ। অন্য কিছু দেখতে হবে না। এরপর এক লোক এসে আমার শরীর দলাই মলাই শুরু করলো। চোখ ভরা পানি নিয়ে সব দেখতে লাগলাম।
এরপরে আমি এক লোকের সাথে হলউডে চলে এলাম। আমার মনে হল এখানে থেকে আমি ড্রাগের প্রভাব থেকে বাঁচতে পারবো। যখন শরীরে একটু শক্তি পেলাম তখন আমি তার সাথে বাইরে বের হতাম। আমরা পুল খেলতে যেতাম। বাইবেল পড়তাম।
এখন আমার একজন একজন বাগদত্তা আছে আর আমার সুন্দর একটা ছেলেও আছে। আমি গ্রাজুয়েট হয়েছি। আমি বাইবেল পড়ছি। আমি ইশ্বরকে ধন্যবাদ দেই যে উনি আমাকে এক ডাক্তারের কাছে নিলেন যে আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলো। আমি মনে করি প্রার্থনা অনেক শক্তিশালী একটা জিনিস, যা মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করে দিতে পারে।
(সূত্রঃ ইন্টারনেট, সংক্ষেপিত)