মধ্যরাতে কেউ নেই, একাই রয়েছি জেগে,
অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা আমায় করেছে ভর,
ক্লান্তিহীন দু’চোখের পাতা রয়েছে খোলা-
চাইছে না ওরা কিছুতেই অবসর।
চারিদিকে সুনসান নিরবতা, রাত হয়েছে গভীর-
আকাশে নেই তারার একফালি আলো,
কোথাও থেকে ভেসে আসে না একটুও শব্দ,
আকাশ নীল রঙ হারিয়ে হয়ে গিয়েছে নিকষ কালো।
বাতাসের নেই প্রবাহ, নীরব নিথর রয়েছে প্রকৃতি,
রাতের অন্ধকার সবকিছুকে করেছে আবদ্ধ!
ব্যথার তিক্ততায় গুমরে ওঠে যে আবেগ,
ক্ষণিকের তরে এলেও শীঘ্র হয়ে যায় দগ্ধ।
গাছের ডালে যে পাখি সেও মৌনতায় বিভোর,
কোন কিছুতেই যে তার সাড়া নাহি মেলে,
বারবার মনে পড়ে সামনে চলার পথে-
আমার পিছনে আমি কত কি এসেছি ফেলে।
ভীষণ অন্ধকারে পথ হাতড়ে যেতে হবে সামনে,
দুরুদুরু কাঁপে বুক, মনে জাগে অজানা সংশয়।
যদি হাতে থাকতো সামান্য আলোর দিশা,
নিমিষেই আঁধারকে করে ফেলা যেত জয়।
একটু একটু করে আমি সামনে এগিয়ে যাচ্ছি,
তবুও ক্ষণে ক্ষণে পেছনে ফিরে তাকাই,
কেউ কি আছে আমার পিছনে?
আমি যে একা রয়েছি, আমার পিছে কেউ নেই!
আচমকা মনে হল টের পেলাম কারও অস্তিত্ব,
মনে হল কেউ একজন আসছে আমার পেছনে।
ঠিক আমার পেছনেই শব্দ পেলাম যেন পায়ের,
ধরা দিয়ে চায় না, এগিয়ে চলেছে নিঃশব্দ গোপনে।
আমি এগিয়ে চলি, মনে জেগে ওঠে ভয়,
কে রয়েছে আমার পিছে, তাকে চিনতে না পারি!
পিছে ফিরেও তো দেখি না কারও অস্তিত্ব-
হাটতে গিয়ে আমার পায়ের পাতা হয়ে যায় ভারী।
আবার মনে হল আমার ঘাড়ের কাছে এ কার নিঃশ্বাস,
চমকে উঠি আমি আপন মনে, এবার আমি ভীত হই।
এ কোন পরিস্থিতির স্বীকার হলাম, দেখি না যে কাউকে,
শুনসান নীরবতার মধ্যে আমি একলা দাঁড়িয়ে রই।
আবার কিছুদূর এগিয়ে যাই, চলতে চায়না পা-
হঠাৎ শুনলাম আমার নাম কে যেন ডাকল স্পষ্ট,
দেখি না তো কাউকে, কিভাবে খুঁজব তাকে?
ডাকে সাড়া না দিলে আবার যদি সে হয় রুষ্ট?
আকাশ কুসুম চিন্তায় যখন ছেয়ে গেল মন,
আমি তখন বুঝতে পারলাম পিছুডাকের কারণ।
আমি জানি এতদিন পরে কে এল আমার কাছে,
বাঁধা হতে পারেনি কোনকিছুই এমনকি মরণ!
স্নেহের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে যে আপনজন,
মৃত্যুকে সে উপেক্ষা করতে পারে সেখানে!
অভয় দিয়ে সে যেন বলতে চাইছে আমাকে,
‘ভয় কি রে? আমিও তো একদিন ছিলাম এখানে।
ছায়ার মত তোমার পাশে এই দেখ আছি আমি,
নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ! কিন্তু তারপরেও ছেড়ে তো যাইনি!
আমার কথা ভুলে গেলেও আমি তো ভুলিনি!
কতদিন ধরে দেখতে চেয়েও দেখা তোমার পাইনি’।
আমার শুনতে পেলাম দীর্ঘশ্বাসে ফেলার শব্দ-
শরীর মনে এনে দেয় এক অদ্ভুত অস্থিরতা।
অনেক খুঁজেও যখন দেখতে পেলাম না তাকে,
অজান্তেই মনে জাগ্রত হয় একধরণের স্থবিরতা।
সমস্ত দ্বিধা দূর হয়ে মন হয়ে ওঠে ব্যাকুল,
অদৃশ্যের মাঝে অবস্থান করেও যে দেয় প্রেরনা-
এতদিন পরেও যার কথা ভুলতে পারিনি আমি,
আমার অগোচরে! আমার কথা নয় একটুও ছলনা।
আঁধারের মাঝে পথ চলতে গেলে আর লাগেনা ভয়,
কিসের চিন্তা! মরণের পরেও ভুলতে পারেনি যে-
মধ্যরাতের নির্জনতায় আমি যখন পাই সান্ত্বনা,
ভুলতে পারি না তাকে। একথা কেন বোঝেনা সে?