MRI করলাম জীবনে এই প্রথম। অবশ্য যে অর্থোপেডিক ডাক্তার আমাকে এম.আর.আই করাতে বলেছিলেন, তুমি সন্দিহান ছিলেন যে আমি মেশিনে আদৌ ঢুকবো কি না। সন্দেহটা আমারও ছিল। অব অবশ্য এই ভেবেও আনন্দিত ছিলাম যে, মেশিনে ঢুকতে না পারলে আমার অনেকগুলা খরচ বেঁচে যায়। কারণ এম.আর.আই এর খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা বা তারও একটু বেশী। গতকাল বিল পেমেন্ট করার সময় আমার মনের ভেতরে খচখচ করছিল। এতগুলো টাকা বেরিয়ে যাবে আমার! আহারে! এম.আর.আই টা করাতে হবে আমার কোমরে! তার মানে আমার পুরা শরীরটাই ঢুকিয়ে ফেলতে হবে মেশিনে! আগে তো কোন অভিজ্ঞতা ছিল না তবে গতকাল ভাল মতই অভিজ্ঞতা হয়ে গেল। গেছিলাম হাঁটুর সমস্যা নিয়ে। ডাক্তার বললেন, পায়ের এই সমস্যার উৎস কোমর হতে পারে। এজন্যই এই এম.আর.আই করা। এবার বলি সেই অভিজ্ঞতার কিছু কথা!
আমাকে ট্রলির উপরে শুতে হলো। এরপর আমার কানে হেডফোন দিয়ে দিল একটা যেন সাউন্ড কম শুনি। মেশিন অপারেটর বললো, আপনি নানা ধরণের শব্দ শুনতে পারবেন। নার্ভাস হবেন না। এর আগে আমার শরীর থেকে চেন, ব্রেসলেট আংটি সব ধাতব জিনিস খুলে নেয়া হল! এরপর শোয়ার পরে আমার হাতদুটো চেপে গায়ের উপরে একটা কাপড় দিয়ে দিলো! এরপর যখন সেই চিপা গহ্বরে আমাকে ঢুকানো হলো, তখন আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! এক সুতা জায়গা নাই যার মধ্যে আমি সামান্যতম নড়াচড়া করতে পারি! আমার কাছে জাস্ট মনে হলো আমাকে কাফনে পেছায়ে কবরে দিয়ে দিলো। সত্যিকথা বলতে কি, গতকাল যেই দশ পনেরো মিনিট আমি এম.আর.আই মেশিনের ভেতরে ছিলাম, আমার সারাক্ষণ করবের কথা মনে হয়েছে। একটুও নড়ার জায়গা নেই এবং মাথার উপরে অন্ধকার! যখন সত্যিকারের কবরে দেয়া হবে, বারবার সেই কথা মনে হচ্ছিলো। আমার অনুভূতি দিয়ে যদি ঠিক ওইরকম একটা পরিবেশে আমাকে দিনের পর দিন বছরের পর বছর রাখা হয়, তখন কি অবস্থা হতে পারে? মাত্র দশ মিনিটে আমার অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। তাহলে সেই অনির্দিষ্ট সময়ে কবরে কি অবস্থা হতে পারে! চিন্তা করেই আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল।
এর মধ্যে পাশের রুম থেকে আমার উপরে নির্দেশ এলো, ঢোক গিলবেন না, ঘুমাবেন না! অর্থাৎ চোখ বন্ধ করা যাবে না! জেগে থাকতে হবে! কি হবে সেই কবরে? ওখানে যদি আমাকে এমন নির্ঘুম জাগিয়ে রাখা হয় এবং বলা হয় একটুও নড়া যাবে না, কাউকে দেখা যাবে না, কি অবস্থা হবে তখন? কিসের এত অহঙ্কার করি আমরা? সামান্য দশ মিনিটের সেই এম.আর.আই মেশিনের সামনে আমার সব ডিগ্রি অর্জন অর্থহীন মনে হচ্ছিল। কবরে গিয়ে কি মনে হবে?