বয়সের সাথে সাথে কি স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় তাই না? আমি এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশী ভয় পাই। মুখস্তবিদ্যা আর স্মৃতিশক্তি দুটা’কে আপাতত এক করে ফেলছি না। আমার মুখস্ত বিদ্যা মাঝারি গোছের বলা চলে। কিন্তু এ যাবতকাল স্মৃতিশক্তি নিয়ে যদি কথা বলি তাহলে মনে হয় সেটাকে প্রথম সারির দিকে ফেলা যেতে পারে। এটা গর্বের কোন বিষয় নয় তবে স্মরণশক্তির জন্য অনেকের প্রসংশা কুড়িয়েছি। সেটা যাই হোক। বয়স আর সময় কোনটাই তো বসে নাই। বয়স চল্লিশ হয়ে গেছে। এটা লুকাছাপার করার আর কিছু নাই। বলে কয়ে কি আর আর বয়স লুকানো যাবে? সেটা নিয়ে আক্ষেপ নাই। তবে স্মরণশক্তি যদি কমে যায়? এটা মানতে আমার বেশ কষ্ট হবে। তবে মেনে নিতেই হবে।
মাঝে মাঝে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীদের কথা ভাবি। কি মারাত্মক কষ্টের জীবনই তারা নিজেদের অজান্তেই না জানি কতটা মানবেতর জীবন যাপন করেন! এ কষ্টের কোন তুলনা নেই। ডিমেনশিয়া তে যে কেউ আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। ঘরের মানুষের দয়া ছাড়া বেঁচে থাকা তখন অসম্ভব। অপরিসীম ভালবাসার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে না আসলে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগী বাচবে কিভাবে? আমার এগুলো নিয়ে ভয় হয়। অনেক ভয় হয়! স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেলে... আমার সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা কি আমি বুঝতে পারবো? না কি শুধুই এক জড়বস্তু হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করে যেতে হবে নিজের অজান্তে? এ জীবন সত্যিই অবর্ণনীয় কষ্টের।
আজ এত কিছু মনে পড়ার কারণ আছে। গতকাল মেয়ের কাছে বকা খেয়েছি। মেয়ে তার মায়ের মেসেঞ্জার থেকে আমাকে ছবি এবং ভয়েস মেসেজ দিয়ে জানিয়েছিল তার স্কুল থেকে দেয়া কিছু রিডিং ম্যাটেরিয়াল এর প্রিন্ট আউট লাগবে। আমি যথারীতি ভুলে গেছি! মেয়ের হম্বিতম্বির সামনে আমার নতমুখে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না! মেয়ে তিরস্কার করেছে... “আব্বুউ তোমাকে কতবার বললাম প্রিন্ট আনতে...” আমি আর কি বলবো? অগত্যা মেয়েকে বললাম, বাবা তুমি তোমার যা যা লাগে তা একটা কাগজে লিখে আমার অফিসের ব্যাগে রেখে দাও। কাল অফিসে গিয়ে ব্যাগ খুললেই তোমার কথা মনে পড়বে। মেয়ে সেটাই করলো। সবকিছু লিস্ট করে আমার ফাইলের মধ্যে রেখে দিয়েছে।
আজ অফিসে এসেই প্রথমে মেয়ের সেই লিস্ট ধরে ধরে কাজ করা শুরু করেছি। নিয়ে ফেলেছি ওর প্রিন্ট। এখন ফার্মেসি থেকে ওর আরও কয়েকটা জিনিস কেনা বাকী। স্কুল থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বানানোর প্রজেক্ট দিয়েছে। মেয়ের আবার হাতে কলমে বানানো জিনিজের আগ্রহ অনেক বেশী। মেয়ে মহা উৎসাহে ফার্স্ট এইড বক্স বানায়ে যাচ্ছে। নিয়েও কাগজ দিয়ে নার্স দের ক্রাউন একটা বানিয়ে ব্যান্ডের সাথে আটকে মাথায় পরছে। ওর মায়ের একটা সাদা ওড়নাকে শাড়ির মত করে দেখলাম গায়ে পেঁচিয়ে ওর ভাইয়ের চিকিৎসা করছে। আর অনিন্দ্য ও কম যায় না। সোফায় শুয়ে শুয়ে বোনকে তার ব্যথার ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছে। আর বোন ভাইয়ের কথা শুনে শুনে সমস্ত ব্যথার জায়গায় কাল্পনিক অষুধ ঘষে যাচ্ছে। ওরা ভাল থাকুক। অভিনয় করলেও জীবনমুখী অভিনয় করছে। ওরা আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকুক।